ভারতের মুক্তিসাধক গোপাল ভৌমিক

০বঙ্গল পাবলিশার্স ১৪, বঙ্কিম চাটুজ্জে স্ট্রীট কলিকাতা

বেঙ্গল পাবলিশার্সের পক্ষে প্রকাশক--শ্রীশচীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় ১৪, বঙ্কিম চাটুজ্জে স্্রাট, কলিকাতা

প্রথম সংস্করণ £ বৈশাখ ১৩৫২ মূল্য-_-১%০

প্রচ্ছদপট এবং ভিতরের ছবি এঁকেছেন £ শ্রীশৈল চক্রবর্তী

প্রিপ্টার্সঃ সত্যপ্রলন্ন দত্ত, বি, এস্‌, সি পূর্বাশ! লিঃ, পি ১৩, গণেশচন্দ্র এভিনিউ

শ্রীযুক্ত হেমেন্দ্রনাথ দত্ত শ্রন্ধাম্পদেঘু

বে

রচনা-সূচী

বিষয় রাষ্টরগরু স্থুরেন্ত্রনাথ

, লোকমান্ত তিলক

পণ্ডিত মতিলাল নেহেরু পণ্ডিত মদনমোহন মালব্য লালা লাজপত রায়

মহাত্মা গান্ধী

দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ দেশপ্রিয় যতীন্ত্রমোহন মৌলানা আবুলকালাম আজাদ পণ্ডিত জওহরলাল নেহেরু সীমান্ত গান্ধী

রাষ্ট্রপতি সুভাষচন্দ্র

পৃষ্ঠা

১১ ২১ ৩০ ৩৮ ৮৭ ৬৩ ৭8 ৯৯

নী৮

১১৯৮

রাই্ইগুরু সুরেন্দ্রনাথ

পণ্ডিত মতিলাল নেহেরু লোকমান্য তিলক

মহাত্মা গান্ধী লাল! লাজপত বাক

রাষ্ট্রগুরু সুরেন্দ্রনাথ

রাষ্ট্রপ্ুরু স্থরেন্দ্রনাথ বন্দোপাধ্যায়কে আধুনিক ভারতের অন্ততম প্রধন ্মষ্টা বলা চলে। ভারতের জনগণকে তিনিই প্রথম তার তাগ স্বীকার এবং অপূর্ব বাগ্মিতার গুণে রাজনীতি-সচেতন করে তোলেন। আজকের কংগ্রেসে মহাত্মা গান্ধীর সর্বব্যাপী প্রভাবের কথা সর্বজনবিদিত। কংগ্রেসের প্রথম ঘুগে কিন্তু বাঙ্গালীর প্রভাব ছিল বেণী বাঙ্গালীদের মধ্যে আবার সুরেক্রনাথের প্রভাব ছিল সর্বাপেক্ষা বেণী। ১৯১৭ খ্ুষ্টান্ে নরমপন্থী দল চরমপন্থীদের হাতে কংগ্রেস ছেড়ে দিষে চলে যাবার পুর্ব পর্যন্ত ভারতীয় কংগ্রেসে স্বুরেন্ত্রনাথের প্রভাব ছিল সকলের চেয়ে বেশী। শেষ বয়সে সুরেন্দ্রনাথকে বাংলা গভর্ণমেণ্টের অধীনে মন্ত্রিত্ব গ্রহণ করতে দেখে বাঙ্গালীরা অবশ্ত মর্মাহত হয়েছিল। তবু প্রথম জীবনে জাতীয় নবজাগরণে সুরেন্ত্রনাথের নিঃসংশয় দানকে কোন ক্রমেই উপেক্ষা করা চলে না। আমাদের মনে রাখতে হবে যে উনখিংশ শতকের ভারত আজকের দিনের গণজাগরণ- মুখর ভারত নয়। ১৮৫৭ খুষ্টাবের ইতিহাস-খ্যাত সিপাহী বিদ্রোহের পরে ভারতের রাজনৈতিক চেতনা লুগ্তপ্রায় হয়ে 'গেছিল। সেই স্তিমিত চেতনাকে তীব্র কশাঘাত করে স্থবেন্দ্রনাথই প্রথম জাগ্রত করে তুলেছিলেন। জাগ্রত গণচেতন।র ভিত্তিতে আজ কংগ্রেসের পক্ষে সারা ভারতব্যাপী বিপুল প্রভাব গড়ে তোল! মোটেই কঠিন হয়নি কংগ্রেসের ব্মান সাফল্যের কৃতিত্ব অনেকখানিই বাঙ্গলী জাতির-_. বিশেষ করে সুরেজ্জনাথের প্রাপ্য কংগ্রেসের প্রথম যুগে দাদাভাই নৌরজী, স্যার ফিরোজ শাহ্‌ মেটা, বদরুদ্দিন তায়েবঙ্জী প্রভৃতি

ভারতের মুক্তিসাধক

অন্তান্ত প্রদেশের শক্তিশালী অনেক নেতা! ছিলেন বটে। কিন্ত স্থরেন্্রনাথের মত ব্যাপক প্রভাব কারও ছিল কিনা সন্দেহ। তাছাড়া কংগ্রেস সংগঠনে বাংলার ত্যাগ স্বীকার অন্তান্ত প্রদেশের ছুলনায় অনেক বেশী ছিল। ১৮৮৫ থুষ্টাব্দে কংগ্রেসের জন্ম থেকে ১৯১৬ খৃষ্টাব্দ পর্যন্ত কংগ্রেসের মোট ৩২টি অধিবেশনের মধ্যে ১২টি অধি- বেশনের সভাপতি হয়েছিলেন বাঙ্গালী। ১৮৮৬ খুষ্টাব্ষ থেকে ১৯১৭ খৃষ্টাব্দে নরমপন্থীদের কংগ্রেস ত্যাগের পুর্ব পর্যস্ত স্থরেক্রনাথ একমাত্র ১৯১৩ খুষ্টাব্ের করাচী অধিবেশন ছাড়া, কংগ্রেসের প্রতি অধিবেশনেই উপস্থিত ছিলেন ভারতীয় কংগ্রেসের জন্তে তার ত্যাগ নিষ্ঠার অন্ত ছিলনা তাই স্থরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের জীবনের মধ্যেই কংগ্রেসের প্রথম যুগের ইতিহাস লিপিবদ্ধ আছে। কংগ্রেসের পর- বর্তী যুগের ইতিহাস লিপিবদ্ধ আছে মহাত্মা গান্ধীর বিরাট ব্যক্তিত্ চরিত্রের মধ্যে

১৮৪৮ থুষ্টাব্দে কলিকাতার এক নিষ্ঠাবান কুলীন ব্রাহ্মণ পরিবারে সরেন্ত্রনাথের জন্ম হয়েছিল। তার পিতা ছিলেন ডাক্তার তিনি বি-এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে তাঁর পিতা তাকে আই, সি, এস» পরীক্ষা দেবার উদ্দেস্তে বিলাত পাঠান। স্থরেন্্নাথ, এ্রতিহাসিক রমেশচন্দ্র দত্ত এবং প্রসিদ্ধ সিভিলিয়ান বিহারীলাল গুপ্ত একই সঙ্গে ইংল্যাও রওনা হন। বিলাতে তারা তিনজনেই একযোগে আই-সি-এস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন এবং ৯৮৭১ থুষ্টাব্দে স্ুরেন্দ্রনাথ দেশে ফিরে আসেন বিলাতে থাকার সময়ই স্ুরেন্ত্রনাথের পিতৃবিয়োগ হয়েছিল। দেশে ফেরার পরেই তিনি আসামের শ্রীহট্রে সহকারী ম্যাজিষ্ট্রেট রূপে কার্ষে নিযুক্ত হন। তিনি তার উপরিওয়ালা জেল! ম্যাজিষ্্রেটের সুনজরে ছিলেন না। একটি মামলার বিচার নিয়ে তিনি ফ্যাসাদে পড়েন) এই

রাষ্্রগুর সুরেন্্রনাথ

জন্যেই পরে তিনি সিভিল সাভিস থেকে পদচ্যুত হন। তার এই 'পদচ্যুতি স্থরেন্ত্রনাথের ব্যক্তিগত জীবনের দিক থেকে কিছুট৷ ক্ষতিকর ' হলেও, ভারতের পক্ষে এট! শাপে বর হয়েছিল। স্থরেন্দ্রনাথ সরকারী চাকুরীতে বহাল থাকলে আমর! তার মত একজন উচুদরের বাগ্মী এবং দেশনেতা হারাতাম। এই চাকুরীর ব্যাপার নিয়েই স্থুরেন্ত্রনাথকে দ্বিতীয়বার ইংল্যাণ্ড যেতে হয়েছিল 1/দচ্যুত হয়ে তিনি ব্যারিষ্টারী পড়তে থাকেন। কিন্তু ১৯৮৭৫ খুষ্টাব্দে মিড্ল্‌ টেম্পলের কতৃপক্ষও তার মত পদচ্যুত ভারতীয় রাজকর্মচারীকে ব্যারিষ্টারী সনদ দিতে অস্বীকৃত হন। এই প্রথম স্ুরেন্রনাথ পরাধীন ভারতীয়দের ছূর্দশা ভালভাবে উপলব্ধি করতে পারেন। এই ঘটনা যে তার পরবর্তী কর্মজীবনকে যথেষ্ট রকম প্রভাবিত করেছিল সে কথা না বললেও চলে। তিনি হতাশ হয়ে কলিকাতায় ফিরে এলেন। তখন তার কি ছুর্শা। প্রথমত তার চাকুরী নেই-দ্বিতীয়ত সিভিল সাভিস থেকে পদচ্যুত বলে কলিকাতার অভিজাত সমাজে তার স্থান নেই। স্থরেন্দ্রনাথের এই ছুর্শায় “করুণার সাগর+ বি্যাসাগর মহাশয় তার সাহায্যে অগ্রসর হন এবং তাঁকে ২০০২ টাকা বেতনে নিজের মেট্রো- পলিটান কলেজে (বঙ্মানে বিদ্যাসাগর কলেজ) অধ্যাপক নিযুক্ত করেন স্বদেশগ্রীতি জ্বালাময়ী বন্তৃতার গুণে শীঘ্রই কলিকাতার ছাত্র সমাজ স্থরেন্দ্রনাথের ভক্ত হয়ে উঠল। স্বদেশের ইতিহাস এবং ইটালীর নির্ভীক নেতা ম্যাটসিনির জীবন সম্বন্ধে সুরেন্ত্রনাথের বক্তৃতা তৎকালীন ছাত্রসমাজে বিপুল উত্তেজনা প্রেরণার সঞ্চার করেছিল ইতিপূর্বে বিলাত থেকে ফিরে এসে আনন্মমোহন বস্থ পস্টুডেন্টস্‌ এসোসিয়েশন” নামে একটি ছাত্রপঙ্ঘ গড়ে তুলেছিলেন সুরেন্্রনাথ এই প্রতিষ্ঠানে যোগ দেওয়ায় "স্টুডেণ্টস্‌ এসোসিয়েশনের” প্রভাব

ভারতের মুক্তিসাধক

প্রতিপত্তি অসম্ভব বেড়ে যায়। এই ছাত্রসঙ্ঘ থেকেই পরে ১৮৭৬ ুষ্টান্বের জুলাই মাসে স্বরেন্রনাথ “ইপ্ডিয়ান এসোসিয়েশন” নামক রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের গোড়াপত্তন করেন। তার রাজনৈতিক চিন্তা শন্তি কত অগ্রগামী ছিল তা তার “ইপ্ডিয়ান এসোসিয়েশনের” কার্যক্রম থেকেই বোঝা যায়। অন্যান্য উদ্বেগের মধ্যে এই সজ্বের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল চারটিঃ (১) ভারতে দৃঢ়-সংবদ্ধ জনমতের সংগঠন, (২) সাধারণ রাজনৈতিক স্বার্থের ভিত্তিতে ভারতের বিভিন্ন জাতিকে সজ্ঘবদ্ধ করা, (৩) হিন্দু এবং মুসলমানদের মধ্যে সম্প্রীতি সংস্থাপন এবং (৪) সাধারণ আন্দেলনে জনগণের সংযোগ মাধন। স্রেন্্রনাথের “ইয়ান এসোসিয়েশন” তরুণ ভারতের আশা ভরসা স্থল হয়ে দাড়ায় ভারতীয় জনমত গঠনের উদ্দেগ্ে স্থরেন্ত্রনাথ প্রথম ১৮৭৭ খুষ্টান্দে এবং পরে ১৮৭৮ খুষ্টান্দে ভারত ভ্রমনে বহির্গত হন। ভারতের সর্বত্র তার তেজস্বী বক্তৃতার জনগণ আকৃষ্ট হয়। স্রেন্ত্রনাথ শুধু বাংলাদেশের যুব-আন্দোলনেরই আ্টা নন £ সমগ্র ভারতবর্ষকে তিনিই সর্বপ্রথম , রাজনীতি-সচেতন করে তুলেছিলেন

ইতিমধ্যে সুরেন্দ্রনাথ “বেঙ্গলী” নামক একখানি ইংরেজী দৈনিকের সম্পাদক সত্বাধিকারী হয়েছিলেন সামান্ত একখানি সাপ্তাহিক পত্রিকাকে তিনি নিজের কর্মশর্তি লেখনীর জোরে শক্তিশালী দৈনিক পত্রিকার রূপান্তরিত করেছিলেন ১৮৮৩ খৃষ্টাব্দে কলিক।তায় ইলবাঁট বিল শিয়ে তুমুল উত্তেঈনা আন্দোলেনর সঞ্চার হয়েছিল। সেই সময় স্রেন্ত্রনাথ 'বেঙ্গলী'তে আদালত অবমাননাকর প্রবন্ধ গ্রকাশের দরুণ দুইমাস কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন কারাদণ্ডের ফলে তার জনপ্রিয়তা আরও বেড়ে যার। কারামুক্তির পর ১৮৮৩ থুষ্টাকের ২৮শে, ২৯শে ৩০শে ডিসেম্বর প্রধ!নত স্থরেন্ত্রনাথ আনন্দমোহন বঙ্গর প্রচেষ্টায়

বাষ্্রগুর স্ুুরেন্দ্রনাথ

কলিকাতার আলবার্ট হলে প্রথম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ১৮৮৪ খৃষ্টাব্দে স্থরেন্্রনাথ পুনরায় জনমত সংগঠনের উদ্দেস্টে ভারত ভ্রমণে বের হন বলে, এই সম্মেলনের পুনরধিবেশন বন্ধ থাকে। এই সময় মিঃ হিউম নামক একজন ভারতহিতৈষী ইংরেজ রাষ্ট্রীয় অধিকার সম্বন্ধে ভারতবাসীদের সজাগ করে তোলেন প্রধানত তারই উচ্চেগে ১৮৮৫ খুষ্টাব্বে বোম্বাই সহরে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের প্রথম অধিবেশন হয়। এই অধিবেশনের সভাপতিত্ব করেছিলেন স্থপ্রসিদ্ধ বাঙ্গালী ব্যারিষ্টার উমেশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসে ধারা যোগ দিয়েছিলেন তারা ছিলেন প্রধানত প্রবীন স্ুরেন্্রনাথের মত আন্দোলনকারী তরুণ নেতাকে তীরা শ্ুচক্ষে দেখতেন না। তাই ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের প্রথম অধিবেশন থেকে সুরেন্দ্রনাথ বাদ পড়েছিলেন অবশ্য তিনি দমবার পাত্র ছিলেন না। তাই আমরা'' দেখি যে ১৮৮৫ খুষ্টাব্দে বোম্বাইতে যখন ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের অধিবেশন হচ্ছে, প্রায় ঠিক সেই সময়ে কলিকাতায় স্থরেন্্নাথের উদ্যোগে ভারতীয় জাতীয় সম্মেলন হচ্ছে এর পর ধৎ্সর কলিকাতায় বখন কংগ্রেসের দ্বিতীয় অধিবেশন হয় তখন সুরেক্্রনাথের মত জনপ্রিয় শক্তিশালী নেতাকে দুরে সরিয়ে রাখা সন্তব হয় না। তিনি কলিকাতা গ্রেসে প্রধান অংশ গ্রহণ করেন এবং তার প্রচেষ্ট।র কংগ্রেস অধিবেশন উপলক্ষ্যে একটি স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীও গঠিত হয়। এর পর স্থরেন্দ্রনাথ ভারতীয় জাতীয় সম্মেলন তুলে দিয়ে কংগ্রেসে যোগ দেন এবং কংগ্রেসের অন্যতম সদন্ত হয়ে দাড়ান ভারতীয় জনমানসে স্রেন্দ্রনাথ ষে রাজনীতি-সচেতনতাঁর সঞ্চার করেছিলেন, তারই ফল যে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস কথা অস্বীকার করার উপার নেই। জন্মের পর থেকেই কংগ্রেসের উদ্দেশ্য ছিল আবেদন নিবেদনের

ভারতের মু'ক্তনাধক ৬.

দ্বার ব্রিটিশ গভর্ণমেণ্টের কাছ থেকে রাজনৈতিক সুবিধা আদায় করা গভর্ণমেণ্টের সঙ্গে বিরোধ স্থষ্টি করে সুবিধ আদায় কর! কংগ্রেসের উদ্দেশ্ত ছিল না। স্থায়ত্তশাসন লাভের আদর্শও কংগ্রেসের ছিল ন1। প্রধানত বাঙ্গালীরাই প্রথম যুগে কংগ্রেসকে অগ্রগতির পথে টেনে নিয়ে যায়। বাঙ্গালীদের সঙ্গে এসে যোগ দিয়েছিলেন মহারাষ্ট্রের চরমপন্থী বিপ্লবী নেতা লেকমান্ত তিলক তবু বহুদিন পর্যন্ত কংগ্রেসে চরমপন্থীদল আধিপত্য লাভ করার সুযোগ পায়নি নরমপন্থী নেতারাই ধীর মন্থর গতিতে কংগ্রেসকে টেনে নিয়ে চলেছিলেন। স্রেন্তরনাথ নিজে ছুবার মাত্র কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন__৯৮৯৫ খুষ্টান্ধে পুণায় এবং ১৯০২ খুষ্টাব্দবে আহমেদাবাদে কিন্তু ১৯১৬ খুষ্টাব্দ পর্যন্ত কংগ্রেসের নীতি নির্বাচনে তার প্রচুর হাত ছিল। ১৮৯০ খৃষ্টাব্দে স্বরেন্্রনাথ কংগ্রেস প্রতিনিধিমগডলীর প্রধান সদস্তরূপে তৃতীয়বার ইংল্যাণ্ড যান

লর্ড কার্জন বড়লাট হয়ে আসার পর এমন কয়েকটি কাজ করেন যার জন্তে স্থুরেন্দ্রনাঁথ প্রমুখ নরমপন্থী কংগ্রেস নেতারাও মরকারী নীতির উপর বিরূপ হয়ে ওঠেন। প্রথমত কার্জন সাহেব কলিকাতা কর্পোরে- শনের নির্বাচিত সদস্যদের ক্ষমতা হাস করেন, দ্বিতীয়ত জনমত-বিরোধী বিশ্ববি্য।লয় বিল €বর্তন করেন এবং সর্বশেষে বঙ্গভঙ্গের আদেশ দেন। বিশেষ করে এই শেষোক্ত আদেশে সারা বাঁংলময় গ্রবল উত্তেজনার সঞ্চার হয়। বাঙালীর! ব্রিটিশ গভর্ণমেন্টের উপর সকল বিশ্বাস হারিয়ে ফেলে বঙ্গ-ভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলনে প্রবৃত্ত হয়। স্থুরেন্্রনাথও আন্দোলনে অন্ততম প্রধান নায় ছিলেন। প্রধানত তীরই আদর অন্তপ্রেরণাঁয় দলে দলে ছাঁত্রসমাজ বয়কট আন্দোলনে যোগ দিয়েছিল। বিপ্লবী বালা মহারাষ্ট্রের কাছ থেকে কংগ্রেমের নীতিপরিবর্তনের

রাষ্গুর সুরেন্দ্রনাথ

দবীও আ'সে--এবার আবেদন নিবেদনের পালা শেষ করে সরাসরি লড়াইয়ে প্রবৃত্ত হতে হবে। দাদাভাই নৌরজীর সভাপতিত্বে ১৯০৬ খৃষ্টাব্দে কলিকাতায় কংগ্রেসের যে অধিবেশন হয়েছিল, তার প্রস্তাবে অভিনবত্ব বিশেষ কিছু না থাকলেও সভাপতির অভিভাঁষণে “ম্বরাঁজ” কথাটি পাওয়া বাঁয়। অবশ্য “ম্বরাজের” মানে ছিল তখন ব্রিটিশ সাআাজ্যের মধ্যে থেকে স্বায়ত্ুশীসন লাঁভ। ১৯০৭ সালে স্বরাজের এই ব্যাখ্যা নিয়ে সুরাট কংগ্রেসের নরমপন্থী চরমপন্থীদের মধ্যে দারুণ সঙ্বর্য হয়ে গেল। চরমপন্থীরা দলে কম থাকায় লোকমান্য তিলকের নেতৃত্বে কংগ্রেস ত্যাগ করে এলেন। স্থুরেন্ত্রনাথ প্রভৃতি নরমপন্থীর! তখন কংগ্রেসের অবিসম্বাদী কর্ণধার হলেন। ১৯০৫ খৃষ্টাব্দে বাংলায় স্বদেশী আন্দৌলন-_ভাঁরতের স্বাধীনত; আন্দোলনে এক গৌরবময় যুগ। চত্রদিকে বিদেশী দ্রব; বজন করে ন্বদেশী ড্রব্য ব্যবহারের এক তুমুল সাড়া পড়ে গ্রেছিল। গান্ধীজী পরে এই জিনিসটিকে সর্বভারতীয় ভিত্তিতে সাঁফল্যমণ্ডিত করে তুলেছিলেন স্ুরেন্ত্রনাথ আন্দোলনেও অংশ গ্রহণ করেছিলেন বঙ্গভঙ্গের প্রতিবাদে তিনি কাউন্সিলের সদস্যপদ ইন্তফা দিয়েছিলেন এবং অবৈতনিক ম্যাঁজিষ্টে টের পদও ত্যাঁগ করেছিলেন মহাত্মা গান্ধী অসহযোগ আন্দোলনের সময় এগুলোকে অন্তম প্রধান অস্ত্ররূপে ব্যবহার করেছিলেন এর পরে স্থরেন্দ্রনাথের কংগ্রেস-জীবন সংক্ষি্ঠ নরমপন্থাদের হাতে কংগ্রেস টিকে চিল বটে--কিস্ত জনগণের মনে আর পূর্বের মত মাড়া জাগাতে পারছিল ন। কংগ্রেসের নিক্ষিয় নীতি আর জনগণের মনে লাগছিল না-_তাঁরা চাচ্ছিল সক্রিয় বিরোধ। জাগ্রত জনশক্তির সামনে নরমপন্থীরা ক্রমশই তাদের প্রভাব হারিয়ে ফেলছিলেন এই সময় বাংল! দেশে ত্যাগব্রতী দেশবন্ধু চিন্তরঞ্জনৈর আবির্ভাব স্থরেন্্রনাথের আপোষকামী নরম স্বর আব

ভরতের মুক্তিসাঁধক

ছাঁত্রসমাজের মনে সাড় জাগাতে পারছিল না। তরুণের দল নতুন নেতার জন্তে উন্মুখ হয়ে উঠেছিল ভারতের জনশক্তিকে জাগ্রত করার যে গুরুভার স্রেন্্রনাথ নিয়েছিলেন, তার সে কাজ সমাপ্ত হয়েছিল যুগের অগ্রগতির সঙ্গে তিনি আর সমান তালে পা ফেলে চলতে পারছিলেন না। ১৯১৬ খুষ্টান্দে অস্থিকাঁচরণ মজুমদার মহাশয়ের সভাপতিত্বে লক্ষৌতে কংগ্রেসের অধিবেশন হল। ভুপেন্দ্রনাথ বস্তুর চেষ্টায় প্রায় ১০ বৎসর অনুপস্থিত থাকার পর চরমপন্থা কংগ্রেস সেবীর এই অধিবেশনে যোগ দ্রিলেন। কিন্তু নরমপন্থী চরমপন্থীতে আর মিলন হল না। পারস্পরিক ব্যবধান আরও বেড়ে গেল। যুগের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে এখন চরমপন্থীরাই হয়ে দাড়িয়েছিলেন দেশের জনমতের প্রতীক। ১৯১৭ খুষ্টাব্ে কলিকাতায় কংগ্রেসের যে অধিবেশন হল, তাঁতে চরমপন্থীরাই বিছয়ী হয়ে বেড়িয়ে এলেন। কংগ্রেম তাদের অধিকারে চলে গেল। নরমপন্থীরা বাধ্য হয়ে কংগ্রেস থেকে বিদায় নিলেন। এতদিন পরে স্রেন্্রনাথাকেও কংগ্রেস ত্যাগ করতে হল। দীর্ঘদিনের সাধনা দিয়ে বে কংগ্রেপকে তিনি গড়ে তুলেছিলেন, তাঁর থেকে অবশেষে তাকে বিদায় নিতে হল। প্রথম দিকে স্ুরেন্্রনাথের কংগ্রেস-প্রীতি কিরূপ প্রবল ছিল--তার একটা মাত্র উদাহরণ দিচ্ছি। ১৯১১ সালে ডিসেম্বর মাসে কলিকাতায় কংগ্রেমের অধিবেশন তয়। অধিবেশনের নিদিষ্ট তারিখের মাত্র দুইদিন পূর্বে স্থরেন্দ্রনাথের পদ্ী বিয়োগ হয়। এই শোক-ভারাক্রাস্ত মন নিয়েও তিনি কংগ্রেসের অধিবেশনে যোগ দেন এবং সর্বপ্রকার কার্ষে সহায়তা করেন। এবে কত বড় নিষ্ঠার পরিচয়-_তা সহজেই অনুমেয় |

কংগ্রেসের সম্পর্ক ত্যাগের পরও স্থরেক্দ্রনাথ বৎসর বেচেছিলেন শেষ বয়সে জনমতের বিরুদ্ধে গভর্ণমেণ্টকে সমর্থন করায় বাংলার আদে

রাষ্ট্রগুর সুরেজ্রনাথ

তাঁর-কোন জনপ্রিয়তা ছিল না। বরং যে স্ুরেন্ত্রনাথ একদিন জন- প্রি়্তার শীষদেশে ছিলেন, শে জীবনে তিনি জনমতের বিরুদ্ধে বাঁওয়ায় জনতার হাতে তাঁকে অনেক সময় লাঞুন। পর্যন্ত সহ করতে হয়েছিল বিগত মহাযুদ্ধের সময় হিন্দু মুসলমান নিবিশেষে ভারতীয় জনগণ ব্রিটিশ গভর্ণমেপ্টের যুদ্ধ-প্রচেষ্টায় সাহাধ্য করেছিল তাদের মনে আশা ছিল যে যুদ্ধে জয়ী হলে ব্রিটেন ভারতকে অনেকট। পরিমাণ স্বারত্তশাসন দেবে শেব পর্যন্ত ব্রিটেন যুদ্ধে জয়ীও হল-_কিন্তু ভারতের কপাঁলে জুটল ১৯১৯ এর মণ্টেগু-চেমস্ফোর্ড শাসন-সংস্কার £ ভারতের এই নতুন শাসন- স্কার নির্ধারণের জন্তে বিলাতে যে জয়েণ্ট পার্লামেপ্টারী কমিটি বসেছিল, স্থরেন্দ্রনাথ তার অধিবেশনে যোগদানের জন্তে ইংল্যাণ্ডে গেছিলেন। স্ুরেন্দ্রনাথ প্রমুখ নরমপন্থী নেতারা এই শাঁসন-সংস্কারে সন্তষ্ট হলেও, অগ্রগামী ভারতীয় জনমত তাতে আন্ত হতে পারে নি। বিলাত থেকে ফিরে এসে অুরেন্দ্রনাথ দেশের পরিবতঠিত রাজনৈতিক আবহাওয়া দেখে বিস্মিত হয়ে গেলেন। কংগ্রেদের অব্ভারতীক়্ নেতারূপে এই সময়েই মহাত্মা গান্ধার আধবিভাব। মহাঁত্। গান্ধীর নেতৃত্বে কংগ্রেস তখন ব্রিটিশ গভর্ণমেণ্টের বিরুদ্ধে অসহযোগ আন্দোলন প্রবর্তনের কথা ভাবছে মুসলমানদের সরকার-বিরোধী খিলাফৎ আন্দোলনের আরন্তও এই মময়। বাংলা দেশের জনমত এবং যুবক সমাজের চিত্তজয় করে বমে 'সাছেন দেশন্ধু চিত্তরঞ্জন তখন গভর্ণ- মেণ্টের সঙ্গে সুরেন্্রনাথের সহযোগিতার আহ্বানে কান দেবার মত ধৈর্য কারও ছিল না। চতুর্দিকে একটা তুমুল বিক্ষোভ উত্তেজনার আবহাওয়া। ১৯২১ খুষ্টাবন্দের ১লা জানুয়ারী সুরেক্্রনাথ স্যার উপাধিতে বিভষিত হম | এই সময় তিনি বাংলা গভর্ণমেণ্টের দ্বাযভ্শাসন স্বাস্থ্য বিভাগের

ভারতের মুক্তিসাঁধক ১০

মন্ত্রিত্বও গ্রহণ করেন। তার মন্ত্রিত্বের একট উল্লেখযোগ্য কাঁজ এই যে তিনি ১৯২৩ খুষ্টাব্দের মার্চ মাসে নতুন একটি মিউনিসিপ্যাল ত্যাকট পাশ করান। লর্ড কার্জন ১৮৯৯ খুষ্টান্দে কলিকাতা কর্পোরেশনের অধিকার হরণ করেছিলেন_-সে কথ! পূর্বেই বলেছি। সুরেন্্রনাথের বর্তমান আইনের ফলে সে আইন নাকচ হয়ে যায়__-কলিকাঁতা কর্পোরে- শন আবার নিব্শচিত জদস্তদের শাসনাধীনে আমে। স্থির হয় যে কলিকাত1 কর্পোরেশনের ভাগের ভাগ সদস্যই নাগরিকদের ভোঁটে নিব্চিত হবেন। নিব্শচিত সদস্তরাই মেয়র এবং প্রধান কর্মকর্তী| নিব্ণচিত করবেন। গভর্ণমেণ্টের শুধু অনুমোদনের অধিকার থাকবে। এই নতুন আইন পাশের ফলে যে প্রথম নির্বাচন হল, তাতে স্থরেন্্রনাথের প্রতিদবন্দী দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জনের স্বরাজ্যদল কর্পোরেশনের কর্তৃত্ব লাভ করলেন দেশবন্ধু হলেন কলিকাতার প্রথম কংগ্রেসী মেয়র ১৯২৩ খষ্টাকে যে কাউন্মিল নিরণাচন হল, সে নিবণচনে স্থুরেন্দ্রনাথ পরাজিত হলেন। এতে সহজেই বোঝ! যাঁয় যে তার গভর্ণমেন্টের সঙ্গে সহ- যোৌগিতাঁর নীতি তকে জনপ্রিয়তার উচ্চশিখর থেকে নীচে ঢেনে নামিয়েছিল। এর পরও চুবৎসর তিনি বেঁচেছিলেন। দুবৎসরে তার জীবনে আর কোন উল্লেখযোগ্য ঘটনা নেই ইতিপূবে' ইংরেজীতে তিনি বে স্মৃতিকথা রচনা করতে সুরু করেছিলেন, সেইখানি এই সময় শেষ করেন। এই স্মতিকথাই পরে “4 000. 30 075 [১1915706% নাদে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়। এবইথানি শুধু জুরেক্্রনীথের আত্ম- জীবনী নয় এর মধ্যে তার যুগের সমাজ জাতীয় জীবনের ইতিহাস পিপিবন্ধ 'আছে। এই বহখানি সমাপ্ত করার পর ১৯২৫ থুষ্টাব্দের ৬ই আগষ্ট সুরেন্দ্রনাথ দেহত্যাগ করেন।

লোকমান্য তিলক

উনবিংশ শতাব্দীর শেষ দশকে বিংশ শতাব্দীর প্রথম দশকে ভারতের রাজনৈতিক ক্ষেত্রে স্বদেশপ্রেম জাতীয়তা-বোধের প্রবল আলোড়ন জেগেছিল। আঙ্গ ভারতের রাজনীতি এতদূর এগিয়ে গেছে যে সে যুগের আন্দোলনের কথা আমাদের মনেও পড়ে না। সমগ্র জগৎ সেদিন বিশ্ময়ে স্তম্তিত হয়ে দেখেছিল যে বহুকাল ইংরাজের অধীনতাপাশে শৃঙ্ঘলিত থেকেও ভারতের আত্মা স্বাধীনতার বাণী ভুলে যায়নি। ভারত শাসন ব্যাপারে ব্রিটিশদের সঙ্গে ভারতীয়দের সমান অধিকার দাবী করে যে আন্দোলন সুরু হয়েছিল, সেই আন্দোলন শেষ পর্যন্ত স্বাধীনতা-আন্দোলনে পর্যবমিত হয়েছিল। সেই আন্দোলনকে সার্থকতার পথে টেনে নিয়ে সেদিন ধারা ভ।রতবাসীদের মনে স্বাধীনতার স্পৃহা এবং আত্মমর্াদা-বোধ জাগিয়েছিলেন, তাদের মধ্যে মহারাষ্ট্রের অবিসম্বাদী নেত| বাল গঙ্গাধর তিলকই ছিলেন সবশেষ্ঠ ১৮৫৭ খৃষ্টানদের সিপাহী বিপ্রোহের ফলে একদল ভাঁরতীয়ের মনে ভীষণ ব্রিটিশ বিদ্বেষ স্থষ্টি হয়েছিল পাশ্চাত্য শিক্ষা দীক্ষার মূল্য স্বীকার করলেও তারা তখন গৌড়া হিন্দুধর্মের চর্চায় বেশী করে মনোনিবেশ করেছিশ। হিন্দ সব কিছুর উপরই তাদের ছিল ভীষণ বিতৃষ্ণা। রাজনৈতিক জীবনের প্রথম দিকে তিলকও ছিলেন পূরোদস্তর রক্ষণশীল, গৌড়! হিন্দুধর্মের পরিপোষক শ্ষে জীবনে অবশ্য তার মনোভাব অনেকটা পরিবতিত হয়েছিল

১৮৫৬ থৃষ্টাব্ে কন্কণ উপকূলের রত্রগিরিতে বাল গঙ্গাধর তিলকের জন্ম হয়েছিল। তিনি চিৎপাবন সম্প্রদায়ের ব্রাহ্মণ বংশোডভূত

ভারতের মুক্তিসাধক ১২

তার প্রথম জীবনের কার্যকলাপের মধ্যে ব্রাহ্মণ রক্তের প্রভাব ছিল অপরিসীম 1 মারাঠ। রাজ্যের প্রকুত শাসন-কর্তা পেশোয়ার৷ ছিলেন এই চিৎপাঁবন সম্প্রদায়ের ব্রাঙ্গণ। ভারতে ব্রিটিশ সাআাজ্যের প্রসারে মারাঠারা যেমন বাধা দিয়েছিল, তেমন বাধা আর কেউ কোনদিন দেয়নি দাক্ষিণাত্যে মোগল সম্রাটদের রাজ্য-বিস্তারেও মার।ঠারা এমনই করে বাধা দিয়েছিল ছোট বয়সে তিলক গোড়া ব্রাঙ্গণদের মত শিক্ষা দীক্ষা পেয়েছিলেন 3 মারাঠ। চিৎপাবন রূপে তার পিছনে শৌর্ধ বার্ধ এবং রাজনীতির একট! বিরাট এঁতিহা ছিল। যুবক বয়সে তিনি পুণা বন এবং নিউ ইংপিশ স্কুলের অঙ্কের শিক্ষক নিযুক্ত হন এর কিছু পর্ধে তিনি পুণাতে ইংরেজী এবং মারাঠী ভাষায়_-ছুখানি সংবাদপত্রের প্রতিষ্ঠাতা, সম্পাদক এবং মালিক হয়ে দাড়ান ইংরেজী সংবাদপত্রখানির নাম “মারাঠা” এবং মারাঠী সংবাদপত্রখানির নাম “কেশরী”। দেশীয় ভাষায় “কেশরীই” বোধ হর ভারতবর্ষে সর্বপ্রথম উল্লেখযোগ্য সংবাদপত্র পরে “কেশরাী” দাক্ষিণ।ত্যের শ্রেষ্ঠ প্রচারিত সংবাদপত্রে পরিণত হয়েছিল প্রথম থেকেই তিলকের আদর্শ ছিল যে ইংরেজীকে একেবারে বাদ দেওয়া সম্ভব না হলেও স্কুল কলেজের শিক্ষাব্যবস্থার ইংরেজীকে দেশায় ভাষার নীচে স্থান দিতে হবে। এই উদ্দেম্তে তিনি গভর্ণমেণ্টের কোন প্রকার সাহাধ্য না নিয়ে স্বাধীন কতকগুলো জাতীয় বিগ্ভালর স্থাপন করেছিলেন ১৮৮৫ খৃষ্টাব্দে তিলকের যখন ২৯ বৎসর বয়স, তখন বোম্বাইতে ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের প্রথম অধিবেশন হচ্ছিল ব্রিটিশদের কাছে আবেদন নিবেদনের উদ্দেশ্ত নিয়ে যে জাতীর কংগ্রেসের উদ্ভব হয়েছিল, তাই আজ ব্রিটিশ গভর্ণমেণ্টের সঙ্গে সংগ্রাম-রত কংগ্রেস হয়ে দাড়িয়েছে গ্রেসের এই দুষ্টিভঙ্গীর পরিবর্তনে তিলকের দীন কম নর বোম্বাই

১৩ লোকমান্ত তিলক

প্রদেশে তিলক এসময় যথেষ্ট নাম করলেও তিনি কংগ্রেসের প্রথম অধিবেশনে উপস্থিত ছিলেন না। বক্তৃতা এবং লেখার মধ্য দিয়ে তার চরিত্রের যে তেজস্থিত1) নিরভীকতা এবং ব্রিটিশ বিদ্বেষ প্রকাশ পেয়েছিল তা লোকের দৃষ্টি আকর্ষণ না করে পারে নি। পুণার সার্বজনীন সভা৷ এবং শিক্ষা সমিতির তিনি এবং রাণাডে ছিলেন প্রধান পরিচ।লক তিনি ১৮৮৯ খুষ্টান্বে কংগ্রেসের পঞ্চম অধিবেশনে প্রতিনিধি হিসাবে যোগ দেন। এইষে তার সঙ্গে কংগ্রেসের যোগস্ত্র স্থাপিত হলঃ সে যোগস্থত্র তার মৃত্যু পরধন্ত অটট ছিল। মাঝখানে একবার ংগ্রেম যখন নরমপন্থী উদারনৈতিকদের হাতে চলে যার, তখন তিনি বছর দশেকের জন্তে কংগ্রেস থেকে দূরে সরে গেছিলেন। কংগ্রেস অধিবেশনে তিনি যে বক্তৃতা দিতেন তাঁর মধ্যে জলন্ত স্বদেশগ্রীতি এবং নির্ভীকতার সুস্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যেত। স্বদেশের মুক্তির জন্টে তিনি যেকোন স্বার্থত্যাগ করতে গ্রস্ত ছিলেন অনেকট| তার বক্তৃতার জন্তেই কংগ্রেস ধীরে ধীরে ব্রিটিশ গভর্ণমেপ্ট বিরোধী প্রতিষ্টনে পরিণত হয়েছিল তিলকের সুপ্রসিদ্ধ উক্তি “ম্বধীনতা আমার জন্মস্বত্ব এবং আমি তা পাবই” ভারতবাসীদের পরাধীন মনে জ্বলন্ত আশার বাণী এনে দিয়েছিল। উনবিংশ শতাব্দীর শেষ দশকে তিলকের প্রভাব অনেক বেড়ে যায় “কেশরীর” গ্রাহক সংখ্য। এই সময় ২০ হাজার ছিল। তার নিভীক লেখনী মহারাষ্ট্রের জনগণকে স্বাধীনতা সম্বন্ধে সজাগ করে তুলেছিল। তার ভক্তের সংখ্যাণ্ড বেড়ে গেছিল অনেক- গুণ। তিলক এবং মহাস্মা গান্ধীর মধ্যে একটি বিষয়ে সাদৃশ্য দেখা যায়ঃ লোকের মনে বিশ্বাস এবং ভক্তি জাগানোর ক্ষমত। উভয়ের মধ্যেই অপরিসীম বিশ্বয়।গ্রুত মহারাষ্ট্রের জনগণ তিলকের নাম দিয়েছিল, “লো কমান্ত” |

ভারতের ঘুক্তিসাধক ১৪.

তার রাজনৈতিক জীবনের প্রথম কয়েক বৎসর তিলক মহারাষ্ট্র জনগণের মনে আত্মসম্মনবোধ এবং অতীত গৌরববোধ জাগানোর' কাজে নিয়োগ করেন। তিনি গ্রামে গ্রামে এবং সহরে সহরে গিয়ে সিদ্ধিাতা গণপতির উৎসবের পুনঃপ্রবর্তনণ করেন। তারই উদ্যোগে পুণায় ১৮৯৩ খুষ্টাব্দে সর্বপ্রথম সাধারণ গণপতি উৎসবের অনুষ্ঠান হয়। তিনি বিভিন্ন স্থানে অনেক গণপতি সমিতিরও প্রতিষ্ঠা করেন। ছাড়া তিনি “কেশরীর” মারফৎ মারাঠা যুবসম্প্রদায়কে দেশের জান্ত স্বার্থত্যাগ আত্মত্যাগ করতে উদ্ধদ্ধ করেন। মারাঠা জাতিকে আরও বেশী সঙ্ঘবদ্ধ করার উদ্দেশ্যে তিনি মহারাষ্ট্রের জাতীয় বীর শিবাজীর স্মৃতিপুজার অনুষ্ঠান করেন। ১৮৯৫ খুষ্টাব্দে শিবাজীর রাজধানী রায়গড়ে তার প্রথম স্বৃতিপূজা হয় এবং তিলক নিজে সে অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন সেই উপলক্ষে তিনি যে উদ্দীপনামর অভিভাষণ দিয়েছিলেন, ভারতের জাতীয়তার ইতিহাসে তা স্মরণীয় হয়ে আছে।

১৮৯৬ এবং ১৮৯৭ খুষ্টার্ধে বিরাট ঢুভিক্ষ হয়। তার প্রভাব শুধু মহারাষ্ট্রে নয়__সমগ্র ভারতবর্ষে ছড়িয়ে পড়ে দুভিক্ষত্রাণ কার্ষে তিলক মনে প্রাণে আত্মনিয়োগ করেন কিন্তু সরকারী এবং বেসরকারী চেষ্টার ফলেও লোকের ভুঃখ হুূর্দশা দূর করা সম্ভব হয় না। ব্রিটিশ গভর্ণমেণ্ট ঢুভিক্ষ নিবারণ করতে পারছিল না বলে জনগণের মনে একট! দারুণ বিক্ষোভ দেখা দিয়েছিল। এর উপর আবার ১৮৯৭ খৃষ্টাব্দে বোম্বাইতে প্লেগ দেখ! দেওয়ায় সে বিক্ষোভ বহুগুণে বেড়ে গেছিল প্লেগ নিবারণেও তিলক তার অপরিসীম কর্মক্ষমতা এবং আত্মত্যাগের পরিচয় দিয়েছিলেন। পুণায় ভীষণভাবে প্রেগ স্থরু 'হুওয়ায় ষে যেখানে পারছিল পালিয়ে যাচ্ছিল। তিলক কিন্তু পুণা

১৫ লোকমান্ত তিলক

ছেড়ে যেতে সম্মত হন নি। তিনি সহরে থেকে নিজের শ্রমশক্তি. এবং অর্থনিয়োগ করে রোগ নিবারণের জন্তে প্রাণপণ চেষ্টা করেছিলেন আর ' এদিকে তিনি “কেশরীর মারফৎ গভর্ণমেন্টের কার্যকলাপের তীব্র নিন্দা করে সজোরে লেখনী চালিয়ে যাচ্ছিলেন গভর্ণমেন্টের নিক্ষিয়তা, কর্মশক্তিহীনতা এবং অযোগ্যতা তিলকের সুতীব্র সমা- লোচনার হাতত থেকে রেহাই পায় নি। এমনই ভাবে তিলক গভর্ণমেণ্টের অপ্রিয় হয়ে উঠছিলেন

১৮৯৭ খৃষ্টানদের জুন মাসে পুণাতে দামোদর চাপেকর নামক একজন যুবক র্যাণ্ড এবং আয়াষ্ঈ নামে ছুজন ব্রিটিশ রাজকর্মচারীকে হত্যা করেন এই হত্যার সঙ্গে তিলকের কোন প্রকার সংযোগ না থাকলেও তার “কেশরীর” উদ্দীপনাময় সম্পাদকীয় নিবন্ধের জন্তে তাকে মামলায় জড়ানো হয়। রাজদ্রোহমূলক সম্পাদকীয় নিবন্ধ লেখার অভিযোগে জন ইউরোপীতব এবং তিনজন ভারতীয় জুরির সম্মুখে তার বিচার হয়। অধিকাংশের ভোটে তিলক দোষী সাব্যস্ত হন এবং বিচারে তার ১৮ মাস কারাদণ্ডের আদেশ হয়। কারাদণ্ডের ফলে তার জনপ্রিয়তা এত বেশী বেড়ে যায় যে কারাগার থেকে বেরুনোর পরই তিনি কংগ্রেসের চরমপন্থী দলের নেতা হয়ে দাড়ান। এই নেতার আসন গ্রহণের জন্তে তিলকের চেয়ে যোগ্যততর ব্যক্তি আর কেউ ছিলনা; সে যুগে ভারতীয়দের মধ্যে আত্মমর্ধাদাবোধ এবং স্বাধীনতাস্পৃহা জাগানোর জন্যে তিনি ষে আত্মত্যাগ প্রাণপাত পরি- শ্রম করেছিলেন__আর কোন জননেতাই তা করেন নি। তিলক ভারতীয় কংগ্রেসের সঙ্গে ভারতীয় জনগণের প্রকৃত যোগস্ত্র স্থাপন করেছিলেন। এইটাই তিলকের ঘবচেয়ে বড় কৃতিত্ব

এই সময় কংগ্রেসের মধ্যে ছুটি দল ছিল; দাদাভাই নৌরজী,

ভারতের মুক্তিসাধক ১৬

গোখেল, স্ুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় প্রস্থতি ছিলেন নরমপন্থী দলে-_ আর তিলক, বিপিনচন্্র পল, অরবিন্দ ঘোষ প্রভৃতি ছিলেন চরমপন্থী দলে। এই উভয় দলেরই মূল লক্ষ্য ছিল স্বাধীনতা--ভারতীয়দের দ্বারা ভারত শাদন। কিন্তু মতভেদ ছিল পথ নিয়ে। নরমপন্থীরা শান্তিপূর্ণ পথে আবেদন নিবেদনের দ্বারা স্বাধীনতা লাভের পক্ষপাতী ছিলেন-__ আর চরমপন্থীরা বিশ্বাস করতেন যে আবেদন নিবেদন করে, প্রস্তাব পাশ করে কোন ফল হবে না-_ স্বাধীনতা লাভের জন্তে আত্মত্যাগ করতে হবে, আন্দোলন করতে হবে এই সমর ১৯০৫ খুষ্টাব্দে বঙ্গ- ভঙ্গের ব্যাপার নিয়ে বাংলাদেশেও প্রবল রাজনৈতিক আন্দোলন চল্ছিল। তিলক মহারাষ্ট্রের নেতা হলেও বাংলায় তার জনপ্রিয়তা ছিল অপরিসীম তিলক দেশবাসীদের নির্দেশ দিলেন যে স্বাধীনতা অর্জন করতে হলে বিলাতী জিনিস বঞ্জন করতে হবে পরে স্বাধীনতা- যুদ্ধে মহাত্মা গান্ধীও একাধিকঝর এই বিদেশী দ্রব্যবর্জন অন্ত্রটি প্রয়োগ করেছেন ১৯০৫ খুষ্ট!বে কাশার কংগ্রেস অধিবেশনে বিদেশী দ্রব্য- বর্জন নীতি আংশিকভাবে গৃহীত হর়েছিল। ১৯০৬ খুষ্টাব্দে কংগ্রেসের কলিকাতা অধিবেশনে সভাপ!ত দাদাভাই নৌরজী নরমপন্থী হলেও ঘোষণা করলেন £ “আমরা কোন অনুগ্রহ চাই না, আমরা শুধুস্তায় বিচার চাই ।.....-সমস্ত ব্যাপারটি একটি কথায় বলা চলে --স্বারত্বশ।সন” অথবা “ম্বরাজ' |” তিলক বহু পূর্বেই দাবী উপস্থাপিত করেছিলেন নরমপন্থীদের এই স্থরর বদলে অনেকের মনেই আশা হল যে পরবর্তী অধিবেশনে হয়ত বিদেশী দ্রব্যবর্জন শীতি পরিপূর্ণভাবে গৃহীত হবে এবং ভারতীয় কংগ্রেস স্বাধীনতার যুদ্ধে অবতীর্ণ হবে। কার্যত কিন্তু তা হল না। ১৯০৭ এর স্ুরাট অধিবেশনে দেখা গেল যে নরমপন্থীর। শান্তিপূর্ণ পথে স্বাধীনতা পাবার নীতি ত্যাগ করেন নি। কংগ্রেন

২৭ লোকমান্ত তিলক

অধিবেশনে দারুণ হষ্টগোলের স্ষষ্টি হল-_নরমপন্থী নেতারা পদে পদে বাধা, পেতে লাগলেন দ্বিতীয় দিনে দারুণ বিশৃঙ্খলার মধ্যে সভা ভেঙ্গে গেল। এর পর সুদীর্ঘ দশ বৎসর তিলক এবং তাঁর মতাবলম্ী সহকর্মীরা আর কংগ্রেসে যোগ দেন নি। গ্রেস থেকে বিচ্ছিন্ন হলেও তিলকের জনপ্রিয়তা আদৌ কমল না। বরং বেড়ে চলল। তার বিরুদ্ধে অনেক ফৌজদারী এবং দেওয়ানী মামলাও হয়েছিল--কিস্তু তাতেও তার জনপ্রিয়তা কমে নি। “তাই” মহারাজের মামলায় তার বিরুদ্ধে জাল জুয়াচুরি প্রভৃতির অভিযোগ আনা হয়েছিল। নিয় আদালতে তিনি দোষী সাব্যস্ত হলেও আগীলে বেকন্থর মুক্তি পান। “তাই” মহারাজের ব্যাপারে তার বিরুদ্ধে তিনটি দেওয়ানী মামলাও আনা হয়েছিল। লগুনের প্রিভি কাউন্দিলে আপীল করে তিনি তিনটি অভিযোগ থেকেও মুক্তি পান ইত্যবসরে তার রাজনৈতিক কাজ কিন্তু একটুও থামে নি। তিনি বোম্বাইয়ের কুলিদের মধ্যে আন্দোলনের বীজ ছড়াচ্ছিলেন। তিনি কুলি মজুরদের মধ্যে গিয়ে তাদের মদ্পানের অভ্যাস ত্যাগ করতে বলছিলেন এবং স্বাধীনতা-যুদ্ধে তাদের প্রবুদ্ধ করে তুলছিলেন। কুলি মজুরর৷ তিলককেই তাদের একমাত্র নেতা বলে মেনে নিয়েছিল। এদিকে তার “কেশরীর» জয়যাত্রা পুণোগ্ঘমে চল্ছিল “কেশরী*র আদশে ভারতের অন্তান্ত প্রদেশে দেশীয় ভাষায় আরও অনেক সংবাদ- পত্রের জন্ম হয়েছিল ১৯০৮ খুস্টাব্দে কেশরী”তে প্রবন্ধ লেখার জন্তেই তিলকের দ্বিতীয়বার কারাদণ্ড হয় ১৯০৮ খুস্টাব্দে একজন সন্ত্রাসবাদীর নিক্ষিপ্ত বোমায় মিসেস্‌ এবং মিস্‌ কেনেডির মৃত্যু হয়। এই উপলক্ষে তিলক সাত বৎসর আগের দামোদর চাপেকরের কাজের সঙ্গে তুলন! করে সম্বন্ধে কেশরীগতে একটি নিবন্ধ লেখেন এবারও রাজদ্রোহ-

তারতের মুক্তিসাধক ১৮

মূলক নিবন্ধ লেখার জন্তে তাকে অভিযুক্ত করা হয়। তিলক আত্মপক্ষ সমর্থন করে ২১২ ঘণ্টা ধরে একটি বক্তৃতা দেন। বিচারে তার ছর' বৎসরের জন্তে নির্বাসন দণ্ড হয় পরে এই দণ্ড বদলিয়ে মান্দালয়ে ছয় বৎসর কারাদণ্ডে পরিণত করা হয়। তিলকের জনপ্রিয়তা এত বেশী ছিল যে তার দণ্ডাদেশ ঘোষিত হবার পর বোদ্বাইতে দাঙ্গা হাঙ্গাম। সুরু হয় এবং ছয়দিন অবধি তার জের চলে। তিলকের দ্বিতীয়বার কারাদণ্ডের সঙ্গে সঙ্গে তার জীবনের শ্রেষ্ট ংশের অবসান হ*ল বলা! চলে। তার জীবনের শ্রেষ্ঠ ব্রত উদ্যাপিত হয়েছিল। তিনি প্রথমে মহারাষ্ট্রে, পরে বাংলাদেশে এবং কিছু পরিমাণে সর্বভারতে ব্রিটিশ গভর্ণমেণ্টের বিরুদ্ধে জনগণকে জাগ্রত করেছিলেন এই জন্তে তাকে “ভারতীয় আন্দোলনের জনক” বলা হয়। তিনি মহারাষ্ট্রের নেতা থেকে সর্বভারতীয় নেতায় পরিণত হয়েছিলেন। তার চরিত্রে আর প্রথম যুগের হিন্দুধর্মের গৌড়ামী ছিল না। কারাঘুক্তির পর তিনি যখন বেরিয়ে এলেন, তখন তার পরিণত বয়েস। এই পাঁরণত বয়সেও তিনি পুনরার যৌবনের কাজে আত্মনিয়োগ করলেন শ্রীমতী আনি বেসাস্তের সঙ্গে মিলে তিনি ১৯১৫ খুস্টাব্দে হোমরুল লীগের প্রতিষ্টা করলেন প্রায় ১০ বৎসর পর ১৯১৬ খুস্টাবে লক্ষৌ কংগ্রেসের অধিবেশনে তিনি পুনরায় যোগ দিলেন। তার প্রত্যাবতনে ভারতীয় কংগ্রেসের মর্যাদা অনেকখানি বেড়ে গেল। প্রথম মহাধুদ্ধের শেষে ভারতীয়দের পক্ষ থেকে দাবী জানানে। হল যে অন্তান্ত ব্রিটিশ উপনিবেশের মত ভারতেরও শান্তি সম্মেলনে যোগ দেবার সমান অধিকার থাকবে এই সম্ভাবনায় শান্তি সম্মেলনে তিনি, মহাত্মা গান্ধী এবং সৈয়দ হাসান ইমাম প্রতিনিধি নির্বাচিত এহয়েছিলেন। ১৯১৯ খুস্টাব্দে নূতন ভারত শাসনতন্ত্র সম্বন্ধে কংগ্রেসের

১৯ লোকমান্ত তিলক

অভিমত জানানোর জন্তে তিলক কংগ্রেস প্রতিনিধি মণ্ডলীর অন্যতম প্রধান সদস্তরূপে ইংল্যাণ্ড গেছিলেন তিলক পার্লামেন্টের জয়েন্ট সিলেক্ট কমিটির সামনে উপস্থিত হয়েছিলেন এবং ব্রিটিশ জনসাধারণের কাছে কংগ্রেসের মতবাদ যাতে-সহজে প্রচারিত হয় তছুদ্দেশ্তে কংগ্সেমের ব্রিটশ কমিটি পুনর্গঠন করেছিলেন ভারতীয় রাজনীতিতে ইতিমধ্যে অনেক পরিবর্তন হয়েছিল-_রাজনীতিক্ষেত্রে মহাত্মা গান্ধীর আকম্মিক আবির্ভাবে অন্য সকল নেতার জ্যোতি অনেকটা ম্নান হয়ে পড়েছিল। তিলকের জনপ্রিয়তা তবু অক্ষু্ ছিল রাজনীতি সম্বন্ধে তার প্রথম জীবনের দৃষ্টিভঙ্গীর অনেক পরিবর্তন হয়েছিল ১৯১৬ খুস্টাব্দে মুসলিম লীগের সঙ্গে লক্ষৌ চুক্তি সম্পাদন করতে সাহায্য করে তিনি প্রমাণ করলেন যে মুসলমানদের তিনি আর বিদেশী বলে ঘ্বণ' করেন না। ১৯১৯ এর অমৃতসর কংগ্রেসে গান্ধীজী এবং তিলক দুজনেই উপস্থিত ছিলেন; দেখা গেল ঘে কংগ্রেসের সব সদস্তই এখন একমাত্র গান্ধীজীর নেতৃত্বে আস্থাবান। ১৯২০ খুস্টাব্ে কংগ্রেসে গান্শীগীর অহিংস অসহযোগ আন্দোলনের কর্মস্থচী গৃহীত হ'ল; গান্বীজীর প্রবতিত সত্যাগ্রহ শীতি কার্ষে পরিণত করার দিন ধার্য হয়েছিল ১লা আগষ্ট সেই দিন গান্ধীজী বোম্বাইতে এসে পৌছুলেন_-আর সেই দিনই বোম্বাই সহরে তিলকের মৃত্যু হ'ল। তিলকের অন্ত্্টি ক্রিয়া উপলক্ষে থে বিরাট শোভাযাত্রা বেরিয়েছিল তার মধ্যে মহাত্মা গান্ধী এবং পণ্ডিত জওহরলাল নেহেরু ছিলেন

তিলকের জীবনের সব চেয়ে বড় কঁতিত্ব ছুটি তিনি প্রথমত ভারতবাসীদের মনে আত্মমরধাদীবোধ এবং স্বাধীন ত।-স্পৃহা জ!গিয়েছিলেন। পর জীবনে তিনি ব্রিটিশ গভর্ণমেণ্টের বিরুদ্ধে একট। সর্বভারতীয় জনমত গঠন করেছিলেন তিলকের আর একট বড় কৃতিত্ব এই ষে প্রথম

ভারতের মুক্তিসাঁধক ২০.

জীবনে তিনি রীতিমত ইস্লাম-বিদ্বেষী থাকলেও, শেষজীবনে তিনিই হিন্দু-মুসলমান মৈত্রী সংস্থাপনে সহায়ক হয়েছিলেন তার মৃত্যুর পরে মহাত্মা গান্ধীও আজীবন হিন্দু-মুনলমানের মিলন-প্রচেষ্টায় ব্যাপৃত আছেন মহাত্মা! গান্ধী এবং তিলকের চরিত্রের মধ্যে অনেক বিভিন্নতা থাকলেও একটি বিষয়ে উভয়েরই সাদৃশ্ঠ আছে তারা ছুজনেই বড় নেতা জনগণ তিলককেও যেমন নিঃসঙ্কোচে এবং স্বেচ্ছায় নেতা! বলে মেনে নিত--আজ গান্বীজীকেও তার! তেমনিভাবে মেনে নেয়। স্বাধীন ভারতের ইতিহাসে তিলকের কীতি স্বর্ণাক্ষরে লিপিবদ্ধ থাকবে

পণ্ডিত মতিলাল নেহেরু

বর্তমান ভারতের অন্ঠতম শ্রেষ্ঠ জনপ্রিয় নেতা পণ্ডিত জওহরলাল নেহেরুর পিত। স্বর্গত পণ্ডিত মতিলাল নেহেরুর নাম স্বরাজ্য দলের অন্ততম অষ্টা হিসাবে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের সঙ্গে স্মরণীয় হয়ে আছে ১৯২০ থেকে ১৯৩১ পর্যস্ত মতিলাল ছিলেন ভারতের অন্ততম শ্রেষ্ঠ নেতা ; এই এগারে। বৎসর কাল ভারতের রাজনীতির উপর তিনি ষে প্রভাব বিস্তার করেছিলেন, তার ফলে ভারতবর্ষ স্বাধীনতার পথে অনেকদূর এগিয়ে গেছে--একথা স্বীকার না করে উপায় নেই। অথচ বিম্ময়ের বিষয় এই যে পণ্ডিত মতিলাল তরুণ বয়সে রাজনীতিতে নামেন নি-নেমেছিলেন বৃদ্ধ বয়সে। স্বাধীনতার যুদ্ধে সৈনিকরূপে তিনি যখন মনে প্রাণে যোগ দেন, তথন তার বয়েস প্রায় ষাট ম্বদেশ-প্রেমের কি প্রবল আবেগ হৃদয়ে এলে, এই বয়েসে

২১ পণ্ডিত মতিলাল নেহের

দেশের জন্যে সব কিছু ত্যাগ করা যাঁয়_-তা সহজেই অনুমান করা চলে

১৮৬১ খুষ্টাব্ধের ৬ই মে পণ্ডিত মতিলাল নেহেরুর জন্ম হয়েছিল ঠিক এই দিনটিতে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথও জন্ম নিয়েছিলেন পণ্ডিত মতিলাল ছিলেন কাশ্মীরী ব্রাহ্মণ পরিবারের সন্তান তার পুর্বপুরুষরা কার্ধ গতিকে কাশ্মীর ত্যাগ করে এসে যুক্তপ্রদেশে বসবাস করেছিলেন। | কিন্ত তাদের বংশের চেহারায় এখনও কাশ্মীরী রক্তের ছাগ সুস্পষ্ট মতিলালের গারের বউ ছিল ধবধবে ফসা-_মুখে ছিল বীরত্ব্যগ্ক নির্ভীকতার চিহ্ন ছোটবেলায় পড়াশুনোয় মতিলালের খুব বেশী আগ্রহ ছিল বলে মনে হয় না। তবে তিনি যখন সাধারণ পড়াশুনে। শেষ করে আইন পড়তে সুরু করেন, তখন আইনে তার খুব বেশী আগ্রহ দেখা যার। হাইকোর্টের ওকালতি পরীক্ষায় তিনি প্রথম স্থান অধিকার করে স্বর্ণপদক পেয়েছিলেন। তার ব্যবসায়ী জীবনের প্রথম থেকেই তার মধ্যে নৈপুণ্যের পরিচয় পাওয়া গেছিল। তার জন্মের তিন মাস পূর্বেই তার পিতা দ্বেহত্যাগ করেছিলেন। বড় ভাই নন্দলাল তার পিতার স্থান দখল করেছিলেন বল! চলে। তিনি ছোট ভাইকে সযত্বে লেখাপড়া শিখিয়েছিলেন এবং তারপর তাকে নিজের আইন-ব্যবসায়ে বসিয়েছিলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় মতিলাল ব্যবসায় সুরু করার কিছুদিন পরেই নন্দলালের মৃত্যু হয়। ফলে তরুণ বয়সেই স্তার উপর সমস্ত পরিবারের ভার এসে পড়ল। তার পরিবারের সবাই থাকতেন এলাহাবাদের আনন্দ ভবনে__যে আনন্দ ভবন পরে কংগ্রেসের সম্পত্তি হয়ে দাড়িয়েছে পরিবারের ভরণ পোষণের জন্তে এবং নিজের উচ্চাশার ফলে মতিলালকে সকাল থেকে রাত পর্যস্ত পরিশ্রম করতে হত। তিনি নিজেও পরিশ্রম করতে

ভারতের মুক্তিসাঁধক ২২

ভালবাসতেন অতি শীঘ্রই তিনি আইন-ব্যবসায়ে সন্মান সৌভাগ্যের উচ্চ শিখরে আরোহণ করলেন পণ্তিত জওহরলাল নেহেরু তার প্রথম বয়সের সন্তান। বহুদিন পরে তার ছুটি কন্তা হয়। তাদের অন্যতম। হচ্ছেন স্থপ্রসিদ্ধা দেশনেত্রী শ্রীযুক্তা বিজয়লঙ্ষমী পণ্ডিত মতিলাল প্রথম থেকেই অত্যন্ত অতিথিপরায়ণ ছিলেন এই অতিথি- পরায়ণতার জন্তে তাকে প্রচুর অর্থ ব্যয় করতে হস্ত। তিনি একাধিকবার ইউরোপে গিয়েছিলেন ইউরোপ ভ্রমণের ফলে তিনি পাশ্চাত্যের আদর্শে খুব ব্যয়বহুল জীবন যাপন করতেন। তাই তীর অস্বাভাবিক ব্যয়ের সন্বন্ধে এবং পাশ্চাত্য ধরণের জীবন যাপন সম্বন্ধে উত্তর ভারতে অনেক অসম্ভব অবান্ডব গল্প জন-সমাজে প্রচারিত ছিল। পণ্ডিত জওহরলাল নেহেরু তাঁর আত্মজীবনীতে এই জাতীয় মিথ্যা গুজবের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছেন মতিলালের জীবনে পরে দেখা গেছে যে বাইরে তার চরিত্রে যতই সাহেবিয়ানা থাক, অন্তরে মানুষটি ছিলেন খাট-_স্বদেশপ্রেমিক যখন দেশের ডাক এসেছিল, তিনি এক মুহূর্তেই সব কিছু ত্যাগ করেছিলেন। তিনি ইংল্যাণ্ডের পাবলিক স্কুলে শিক্ষিত ইংরেজ যুবকদের খুব প্রশংসা করতেন তাই তিনি নিজের একমাত্র ছেলে জওহরলালকে স্থারোর পাবলিক স্কুলে শিক্ষা লাভের জন্টে অতি অল্প বয়সেই বিলাতে পাঠিয়েছিলেন 4 মতিলালের জীবনে প্রথম বড় পরিবর্তন আসে ১৯১৯ খৃষ্টাব্দে এই বৎসর পাঞ্জাবের অমৃতসরে ভারত গভর্ণমেন্ট নিরীহ দেশবাসীদের প্রতি যে অন্তায় অবিচার করেন তার প্রতিবাদে সমগ্র ভারত মুখর হয়ে ওঠে ভারতীয় জনগণের পক্ষ থেকে জাতীয় কংগ্রেম আলোচ্য ব্যাপারের অনুসন্ধানের জন্তে একটি কংগ্রেস অনুসন্ধান সমিতি গঠন করেন। সামরিক আইন জারী করে পাঞ্জাবে গভর্ণমেণ্ট যে নব

২৩ পণ্ডিত মতিলাল নেহেরু

লজ্জাজনক কাজ করেছিলেন, তাই ছিল অনুসন্ধানের বিষয় সামরিক ' আইন প্রত্যাহার করার পরে পাঞ্জাবে প্রবেশ সম্ভব হওয়া মাত্রই তার পুত্র জওহরলাল একা পাঞ্জাবে এসেছিলেন। এর পরেই এলেন মতিলাল নেহেরু তারপর গান্ধীজীর উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের পর তিনিও এলেন মতিলাল এবং গান্ধীজী উভয়েই স্থুনিপুণ আইনজ্ঞ; তার যথেষ্ট শ্রম স্বীকার করে সমস্ত তথ্য বিচার করতেন। অমৃতসর, লাহোর এবং বিশেষ করে গুজরাণওয়ালা জেলায় পুলিশের অত্যাচারের কাহিনী শুনে মতিলাল শিউরে উঠতেন। পাঞ্জাবের ঘটনাই তাকে পুরোদস্তর গভর্ণমেণ্ট-বিরোধী করে তুলল। ইতিপুবে তার জীবনধারণে ছিল কেতাছুরস্ত সাহেবিয়ানা ; ভারতেএবং ইংল্যাণ্ডে তীর অনেক ইংরেজ বন্ধু ছিল। ভারতের অভিজাত মহলেও তার বন্ধুর অভাব ছিল না। যদিও তিনি ইতিপূর্বে কিছুদিন কংগ্রেসের সদস্ত হয়েছিলেন, তবু তার মতবাদ ছিল নিয়মতান্ত্রিক উদারপন্থী কিন্ক অমুতসর তার জীবনের মুল পর্যন্ত নাড়া দিয়ে গেল যে বিশ্বাসের ভিন্তিতে তিনি এতদিন পর্যস্ত জীবন গড়ে তুলেছিলেন, তা যেন গেল ভেডে। সেই বৎরই অমৃতসরে জাতীয় কংগ্রেসের অধিবেশনে তিনি সভাপতি নির্বাচিত হলেন। তিনি স্পষ্ট বুঝতে পারলেন যে পুরাতন উদারনৈতিক বন্ধুদের সঙ্গে এবার বিচ্ছেদ আসন্ন এর পরে যখন মহাক্সা গান্ধী প্রবতিত অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দেবার আহ্বান এল, মতিলাল তখন সম্পূর্ণ প্রস্তুত

তিনি সব কিছু লাঞ্না নির্যাতনের কথা ভাল ভাবে ভেবে চিন্তেই অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দেবার সিদ্ধান্ত করলেন। তাঁর এই নতুন সিদ্ধান্তে মতিলাল সমগ্র পরিবারের সমর্থন পেলেন। এলাহাবাদের নেহেরু পরিবারের বৈশিষ্ট এখানেই ভারতের স্বাধীনতার জন্যে সমগ্র

ভারতের মুক্তিসাধক ২৪

পরিবারের স্থার্থত্যাগের তুলনা হয় না। পণ্ডিত মতিলাল নেহেরু এবং জওহরলালের সঙ্গে সঙ্গে জওহরলালের মাতা স্বরূপরাণী নেহেরু এবং স্ত্রী কমলা নেহেরুও অসহযোগ আন্দোলনে অংশ গ্রহণ করেছিলেন তবু আন্দোলনের প্রথম থেকেই কিন্তু মতিলাল জওহবুলালের মধ্যে মতভেদ দেখা গেল। জওহরলাল ছিলেন চরমপন্থী আর মতিলাল ছিলেন নরমপন্থী। গান্ধীজীর অসহযোগ কর্মন্টীর মধ্যে সরকারী চাকুরী ত্যাগ, আইনসভা বর্জন, স্কুল কলেজ ত্যাগ প্রভৃতি ছিল। অসহযোগের প্রথম ধাক্কা কেটে যাবার পরই মতিলাল বুঝলেন যে তিনি যদি কেন্দ্রীয় ব্যবস্থা পরিষদে ঢুকে ভিতর থেকে ব্রিটিশ গভর্ণমেণ্টকে আঘাত হানেন, তবে তাতে কাঁজ হবে বেণী তৎকালীন বাংলার শ্রেষ্ঠ নেতা এবং পণ্ডিত মতিলালের অস্তরংগ বন্ধু দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জনৈরও ছিল এই অভিমত তার! দুজনে মিলে তাদের এই নতুন সিদ্ধান্তকে কার্ষে পরিণত করতে সচেষ্ট হলেন কাজেই গান্ধীজীর সঙ্গে তাদের মৌলিক মতবিরোধ দেখা দিল। ফলে মতিলাল এবং চিত্তরগ্কনের নেতৃত্বে ্বরাজ্যদল নামে কংগ্রেসের সমান্তরাল একটি প্রতিষ্ঠান স্থাপিত হল পরে মহাত্মা গান্ধী কর্তৃক অসহযোগ আন্দোলন প্রত্যাহত হলে ১৯২৩ খৃষ্টাব্দে কংগ্রেস স্বরাজ্যদলের নীতি অনুমোদন করে কাউন্সিল প্রবেশ- নীতি অনুমোদনের পরে যে নির্বাচন হয়, তাতে স্বরাজ্যদলের প্রার্থীরা বিপুল ভোটাধিকো নির্বাচিত হন কেন্দ্রীয় ব্যবস্থা পরিষদে স্বরাজাদলের নেতা হন পণ্ডিত মতিলাল নেহেরু স্বরং। এইবার তিনি আইনের জ্ঞান অভিজ্ঞত! পুরোপুরি সরকারের বিরুদ্ধে নিয়োগ করার অপুর্ব স্থযোগ পেলেন। তিনি সম্মিলিত বিরোধী দলেরও নেত৷ নির্বাচিত হয়েছিলেন। তার মনে দৃঢ় ধারণ। ছিল যে ব্রিটিশ গভর্ণমেণ্টের নিজেদের অস্ত্র প্রয়োগ করেই তিনি ব্রিটিশ গভর্ণমেণ্টকে ঘায়েল করতে পারবেন কার্ষক্ষেত্রে

২৫ পণ্ডিত মতিলাল নেহেরু

তিনি করেছিলেনও তাই। তার অপরিসীম উদ্ধম এবং এঁকাস্তিক 'প্রচেষ্টায় কেন্দ্রীয় ব্যবস্থা পরিষদে ভারত গভর্ণমেণ্টকে বিরোধী দলের ' হাতে বহুবার ভোটে পরাজয় স্বীকার করতে হয়েছিল কিন্তু এইসব পরাজয়ে শেষ পর্যস্ত ফল হতনা কিছুই কোন বিল ব্যবস্থা পরিষদে পরাজিত হলেও, বড়লাট তার অতিরিক্ত ক্ষমতার বলে তাকে আইনে পরিণত করতেন তা ছাড়া ধীরে ধীরে ভিতর থেকেও স্বরাজ্যদলে ঘুণ ধর্ছিল। সরকার পক্ষ থেকে বিরোধী দলের সদন্তদের দলে টানার জন্তে নানারকম চেষ্টা চল্ছিল ; কাউকে কোন বিশেষ কমিটিতে নেওয়ার লোভ দেখানো হত, কাউকে দেখানো হত চাকরীর লোভ ফলে কারও কারও আদর্শ-চাতি ঘটুত। মহাত্ম। গান্ধীর সঙ্গে বিরোধ স্থৃ্ট করে মতিলাল যে স্বরাজ্য দলের স্থষ্টি করেছিলেন, তার এই পরিণতিতে তিনি অন্তরে ব্যথা পেতেন

বিম্ময়ের বিষয় এই যে গান্ধীজীর সঙ্গে মতিলালের মতান্তর হলেও মনান্তর হয়নি কখনও তার পরিবারের সঙ্গে গান্ধীজীর হৃদ্যতার সম্পর্ক পূর্ব অক্ষু্ই ছিল। নিজের দিক থেকে মতিলাল যেমন দৃঢ়-প্রতিজ্ঞ এবং নিভীক ছিলেন, গান্ধীজীও ছিলেন তেমনই কতদিন ঘণ্টার পর ঘণ্ট! মতিলাল গান্ধীজীকে তার মতবাদ বোঝানোর জন্টে আপ্রাণ প্রয়াস পেয়েছেন, কিন্ত পারেন নি। উভয়ের কেউ কাউকে স্বমতে আনতে পারেন নি--অথচ উভয়ের প্রতি উভয়ের শ্রদ্ধার অন্ত ছিলনা আত্মজীবনীতে পণ্ডিত জওহরলাল পিতার চরিত্রের একটি সুন্দর চিত্র একেছেন। একস্থানে তিনি লিখেছেন £ *তার মধ্যে ব্যক্তিত্বের দৃঢ়তা এবং কিছু পরিমাণে রাজকীয় ভাব ছিল। যে কোন সম্মেলনে তিনি যদি উপস্থিত থাকতেন, তবে তাকে কেন্দ্র করেই সব জন্ননা কল্পনা চলত ।” সত্যই মতিলালের চরিত্রে মানুষকে আকুষ্ট

ভাঁরতের মুক্তিসাধক ২৬

করার অপূর্ব ক্ষমতা ছিল। আরেকস্থানে জওহরলাল লিখেছেন £ “আমার মনে পড়ে আমি গান্ধীজীকে বাবার গৌফহীন একখানা প্রতিকৃতি দেখিয়েছিলাম। এর আগে পর্যন্ত তিনি বাবার মুখে সুন্দর: এক জোড়! গোঁফ দেখে এসেছেন তিনি এই ফোটো দেখে প্রায় চমকে উঠলেন এবং বহুক্ষণ ধরে ফোটোটির দ্দিকে চেয়ে রইলেন। কেননা গৌঁফের অনুপস্থিতিতে মুখ এবং চিবুকের কাঠিন্য বেরিয়ে পড়েছিল) এবং তিনি কিছুটা শুকনো হাসি হেসে বললেন ষে কিসের বিরুদ্ধে তাকে লড়তে হয়েছে, এখন তিনি তা বুঝতে পারছেন চোখ এবং মাঝে মাঝে হাসি-জনিত রেখার দরুণ মুখটা অবশ্ত নরম দেখাত কিন্ত সময় সময় চোখ ছুটো চকচক করে জবলত।” ভিতরে যতই দুটচরিত্র হন, মতিলালের মধ্যে হাস্তরসের অভাব ছিল না। কথার মারপ্যাচে তার জুড়ি ছিলনা গান্ধীজীকে তিনি যেমন শ্রদ্ধা করতেন তেমনই তাকে নিয়ে তার রসিকতারও অন্ত ছিল না। কিন্তু মতিলালের চেয়ে কেউ বোধ হয় গান্ধবীজীকে বেশী শ্রদ্ধা করত না। একবার তিনি মহাত্মা গান্ধী সম্বন্ধে লিখেছিলেন £ “অনড় বিশ্বাস এবং অজেয় শক্তির দৃঢ় ভিত্তির উপর সোজা দীড়িয়ে একান্ত একাকী বিনয়ী ব্যক্তিটি তার স্বদেশবাসীদের উদ্দেপ্তে মাতৃভূমির জন্তে আত্মত্যাগ এবং যয্ত্রণ সইবার বাণী পাঠিয়ে চলেছেন ।” মহাত্মা গান্ধীর প্রতি মতিলালের এই শ্রদ্ধা জওহরলালও পেয়েছেন। শুধু তাই নয়--সমগ্র নেহেরু পরিবারই গান্ধীজীর পরম ভক্ত।

স্বরাজ্য দলের সংগঠন ব্বস্থাপনা নিয়ে মতিলাল যখন ব্যস্ত ছিলেন, তখন তিনি ভবিষ্যৎ ভারতের জন্তে একটি শাসন-তন্ত্র রচনায়ও মনোনিবেশ করেছিলেন তাঁকে কাজে সাহায্য করবার কেউ ছিলন। বললেই হয়। তাঁর শাসন-তন্ত্র রচনার মূল ভিত্তি ছিল যে

২৭ পণ্ডিত মতিলাল নেহেরু

ভারত ব্রিটিশ কমনওয়েলথের মধ্যে থেকে ওপনিবেশিক স্বায়ত্শাসন পাঁবে। এই নিয়ে পিতা পুত্রের মধ্যে মত-বিরোধ স্থষ্টি হয়। _ জওহরলালের মত ছিল যে ভারতবর্ষ পূর্ণ স্বরাজ পাবে ব্রিটিশ কমন্‌- ওয়েলথের সঙ্গে তার কোন বাধ্যবাধকতার সম্পর্ক থাকবে না। অবশেষে পিতাপুত্রের মধ্যে অনেক মত-বিরোধের পরে স্থির হয় ষে ১৯২৯ সালের মধ্যে ব্রিটেন যদি ভারতকে ওপনিবেশিক স্বায়ত্শাসন দেয়, তবেই ভারত তা গ্রহণ করবে-তার পরে নয়। ১৯২৯ এর পরেও ব্রিটেন যখন ভারতের দাবী পুরণ করল না, তখন গান্ধীজীর

নেতৃত্বে পুনরায় অহিংস আইন অমান্য আন্দোলন সুর হল।

এর পরে মতিলালের রাজনৈতিক জীবন অতি সংক্ষিপ্ত! তার পরিবারের আরও অনেকের সঙ্গে তিনি গান্ধীজী প্রবততিত আইন অমান্য আন্দোলনে যোগ দিয়ে কারাবরণ করেন এর বন্ৃপুর্ব থেকেই তিনি দুরারোগ্য হাপানী রোগে ভুগছিলেন হাপানীতে তিনি প্রচুর শারীরিক কষ্ট পাচ্ছিলেন এবং তার হৃদ-রোগও দেখা দিয়েছিল এই সমর তার বয়েসও হয়েছিল ৭০ বৎসর | কিন্তু সবাই যখন দেশের জন্টে হাসিমুখে কারাবরণ কর্ছিল, তখন মতিলালের মত দৃঢ়-চরিত্র লোকের পক্ষে চুপচাপ করে বসে থাকা সম্ভব ছিল না। কাজেই তিনি আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ে কারাবর« করলেন

কারাগারে কিছুদিনের মধ্যেই তার স্বাস্থ্যের দ্রুত অবনতি হল। কারাগৃহে যথোপযুক্ত চিকিৎসার অভাবে তার হাপানী এবং হৃদরোগ বেড়ে গেল। তবু কেউ যদি তাঁকে বলত ষে ভগ্ন স্বাস্থ্যের দরুণ তার মুক্তি পাওয়া উচিত, তবে তিনি রেগে যেতেন। এমন কি তিনি বড়লাট লর্ড আরউইনের কাছে চিঠি লিখে জানিয়েছিলেন যে তিনি গভর্ণমেণ্টের কাছ থেকে কোন বিশেষ দয়া চান না। কিন্তু ডাক্তারের

ভারতের মুক্তিসাধক

নি

উপদেশে ঠিক আড়াই মাস কারাবাসের পর তিনি মুক্তি পেলেন। এর পরেই তার একমাত্র পুত্র জওহরলাল পঞ্চমবারের জন্যে কারারুদ্ধ হলেন বুদ্ধ মতিলাল নিজেকে সংযত করে উপস্থিত সকলের কাছে সগর্বে ঘোষণা করলেন যে তার অসুখ আর থাকবে না। কিছুদিন তার অদম্য মনের জোরের কাছে দৈহিক অন্ুস্থত] হার মানল ; কিন্তু অল্প কিছুদিন পরেই তার থুথুতে পুনরায় প্রচুর পরিমাণে রক্ত দেখা দিল। কাজেই সমুদ্র ভ্রমণের উদ্দেশ্তে একটি ডাক্তার বন্ধুর সঙ্গে তাকে কলকাতায় পাঠানো হল; কিন্ত এত দ্রুত তার স্বাস্থ্যের অবনতি হল যে কলকাতা থেকেই তাকে এলাহাবাদে ফিরে আসতে হল; তার শব্যাপার্থে উপস্থিত থাকার স্থযোগ দেওয়ার জন্তে তার প্রিয় পুত্র জওহরলালকে কারাবাসের সময় উত্তীর্ণ হবার আগেই মুক্তি দেওয়া হল। যারবেদা জেল থেকে মহাত্মা গান্ধী এবং অন্তান্ত অনেক কংগ্রেস নেতাও মুক্তি পেরেছিলেন এরা সবাই এলাহাবাদে এলেন এবং মৃত্যুর পুর্বে এক একজন করে সবাই তার সঙ্গে শেষ সাক্ষাৎ করলেন। মৃত্যুর পুর্বে মহাত্মা গান্ধীকে মতিলাল বলেছিলেন £ “আমি শীঘ্রই চলে যাচ্ছি কাজেই পৃথিবীতে থেকে স্বরাজ দেখ! আমার হবে না। কিন্তু আমিজানি আপনি স্বরাজ এনেছেন” ১৯৩১ খুষ্টান্বের ৬ই ফেব্রুয়ারী সব শেষ হয়ে গেল। সমগ্র ভারতে পড়ল একটা বিষাদের ছায়া ভারতের অগণিত নরনারীর কাছে মনে হল যে তারা একজন প্রিয়তম নিকট আত্মীয়কে হারালেন বিরাট শোভাধাত্রা করে নিয়ে গিয়ে গঙ্গার তীরে তার শবদাহ করা হণল। গান্ধীজী সমস্তক্ষণ সঙ্গে ছিলেন। চিতার পার্থখে দাড়িয়ে সমবেত জনতার উদ্দেপ্তে মহাত্মা গান্ধী হৃদয়-বিদারক কয়েকটি কথা বললেন তারপর সবাই নিঃশব্দে বাড়ী ফিরে গেল। পিতার মৃত্যুতে জওহরলাল যে শোক পেলেন তা অবর্ণনীয় সমগ্র ভারত থেকে জওহরলাল

২৯ পণ্ডিত মতিলাল নেহেরু

সাত্বনা-জ্ঞাপক অজজ্র চিঠি পেলেন। কেন্দ্রীয় ব্যবস্থা পরিষদে ধারা তার মতিলালের বিরোধী দলে ছিলেন, তারাও চিঠি লিখলেন বড়লাট লর্ড আরউইন এবং তার পদ্বী লেভী আরউইনও শোক-জ্ঞাপক বাণী পাঠালেন

পণ্ডিত জওহরলাল নেহেরু তাঁর আত্মজীবনীতে লিখেছেন £ “এই সদিচ্ছা সহানুভূতির অজন্রতা আমাদের শোকের তীব্রতা কিছুটা কমিয়েছিল ; কিস্তু সর্বোপরি গান্ধীজীর আশ্চর্জনক শান্তিদায়ক এবং আরামদায়ক উপস্থিতিই আমার মাকে এবং আমাদের সবাইকে জীবনের এই সম্কটের সম্মুখীন হ'তে সাহায্য করেছিল ।»

স্বাধীনতার সৈনিক মতিলালের চরিত্রের দিকে তাকালে দেখ! যায় যে তিনি স্বাধীনতার যুদ্ধে আত্মনিয়োগ করতে গিয়ে তার সহজাত শালীনতা এবং সৌজন্তবোধ হারিয়ে ফেলেন নি। জীবনের সর্ববিভাগেই তার চরিত্রের রাজকীয় মহত্ব লোকদের বিম্ময়-বিমুগ্ধ করত। অনেকটা নিজের চরিত্রগুণেই তিনি ব্যবস্থা পরিষদের বিতর্ককে এতটা উচ্চ স্তরে টেনে উঠিয়েছিলেন যে তার বিরোধীদলের সদস্তরাও তার ক্ষমতায় মুগ্ধ হয়ে যেতেন তাই তাঁর নাম দেওয়া হয়েছিল “ব্যবস্থাপরিষদের অভিজাত সদস্ত” (40079009০26 ০৫ চ5 2599920715 )। তার মৃত্যুতে ভারতের স্বাধীনতা যুদ্ধের যে বিপুল ক্ষতি হয়েছে" সেটা বহুলাংশে পরিপুরণ করেছেন তার সুযোগ্য পুত্র তরুণ ভারতের অপ্রতিদ্বন্দ্ী নেতা প্ডিত জওহরলাল নেহেরু

পণ্ডিত মদনমোহন মালব্য

পণ্ডিত মদনমোহন মালব্যই বোধ হয় বতর্মানে ভারতের প্রবীণতম রাষ্ট্রনীতিবিদ। তিনি গান্ধীজীর চেয়ে প্রায় বৎসরের বড়। তার বর্তমান বয়েস ৮৩ বৎসর | মহাত্সাজীর সৃঙ্গে মালব্যজীর যেমন অনেক বিষয়ে চরিত্রগত সাঘৃম্ত আছে, তেমনই তাদের চরিত্রগত বৈষম্যও খুব কম নয়। প্রথমে সাদৃশ্তের কথাই ধর। যাক। গান্ধীজী রাজনীতিবিদ্‌ হলেও তার চরিত্রে ধর্ম এবং অধ্যাত্স-বোধের স্ন্দর বিকাশ দেখা যার়। এই ধর্মবোধ মালব্যজীর চরিত্রেরও অন্ততম প্রধান বৈশিষ্ট কিন্তু উভয়ের ধর্ম-বোধের মধ্যেও বিপুল পার্থক্য ব্যণ্ডিগত জীবনে গংন্ধবীজী ধর্মবোধকে যত উচুতেই স্থান দিনঃ দেশ-প্রীতি এবং বুহত্তর জাতীয়তা- বোধের কাছে তার ধর্ম-বোধ ম্লান হয়ে যায়। মালব্যজীর চরিত্র কিন্তু এর সম্পূর্ণ বিপরীত ধর্ম-বোধ তার চরিত্রে এমন ওতঃপ্রোত ভাবে বিজড়িত যে দেশ-গ্রীতি এবং ধর্ম-বোধের মধ্যে সংঘর্ষ দেখা দিলে, শেষ পর্যন্ত ধর্ম-বোধই বিজয়ী হয় মহাত্মা গান্ধীর ধর্ম বিশ্বমানবতার ধর্ম_-আর মালব্যজীর ধর্ম গোঁড়া হিন্দু ধর্ম। যুগের আর কোন জাতীয় নেতার চরিত্রেই এরূপ গোঁড়া শাস্ত্রীয় ধর্বোধের বিকাশ দেখা যায় নি। হিন্দুধম্ের সমস্ত বাধা নিষেধকে তিনি যথা সম্ভব সধত্বে মেনে চলেন। হিন্দুধমের সমস্ত আচার নিয়ম সযত্বে মেনে চলতে গিয়ে তাকে জীবনে অনেক ছুঃখ কষ্টও পেতে হয়েছে তার এই গোঁড়া ্রাহ্মণন্থুলভ দৃষ্টিভঙ্গীর জন্তেই তিনি ভারতের অন্তান্ত জাতীয় নেতাদের চেয়ে ভিন্ন অথচ মালব্যজী যে বর্তমান ভারতের অন্ততম শ্রেষ্ট নেতা সে কথা অস্বীকার করার উপায় নেই। হিন্দুধর্মের সমস্ত খুঁটিনাটি

৩১ পণ্ডিত মদনমোহন মালব্য

ব্যাপারে তিনি পুরোদস্তর রক্ষণশীল হলেও, জাতীয় ব্যাপারে তীর দৃষ্টি- ভঙ্গী কিন্ত অনেক উন্নত--অনেক উদার এই ছুই বিরুদ্ধ শক্তি তার জীবনে প্রথম থেকে কাজ করে আস্ছে। ছুটির পরস্পর-বিরোধী আকর্ষণে পড়ে তিনি নাস্তানাবুদ কম হন নি। এই বিরোধে কিন্ত শেষ পর্যন্ত জয়ী হয়েছে তার হিন্দুধর্মগত গৌড়ামী যত তার বয়েস বেড়ে গেছে ততই তার চরিত্র থেকে জাতীররতা-বোধ যেন কমে এসেছে-- জাতীয়তা-বোধের স্থান দখল করেছে হিন্দুধ্ম-গ্রীতি |

* তার চরিত্রে শাস্ত্রীয় নিষ্ঠা-বোধ থাকলেও কুসংস্কারের স্থান নেই। কোন একটি কাজ যদি তিনি শান্্র-সঙ্গত বলে মনে করেন, তবে জনমতের বিরুদ্ধে গিয়েও সে কাজ করতে তিনি কুষ্ঠিত নন। অস্পৃশ্ঠতা হিন্দুধর্মের একট কলঙ্ক স্বরূপ। কিন্তু হিন্দুশাস্ত্রের কোথাও অস্পৃশ্ঠতার সমর্থন পাওয়া যায় না। তাই মহাত্মাজী যে অস্পৃশ্ঠতা নিবারণ আন্দোলনের সত্রপাত করেছেন, তার পিছনে মালব্যজীর পরিপূর্ণ সমর্থন আছে তিনি শাস্ত্র ঘেটে প্রমাণ করেছেন যে হিন্দুশান্ত্রে কোথাও অস্পৃশ্তা সমগিত হয় নি এবং প্রাচীন সংস্কৃত শাস্ত্র দিতে এর কোন উল্লেখই পাওয়া যায় না বরং প্রাচীন কালের হিন্দু শান্ত্রাদিতে দেখা যায় যে নীচ বর্ণের অনেক লোক, নিজেদের শান্ত্রজ্ঞান এবং চরিত্রগত গুণাবলীর জোরে উচ্চ বর্ণের হিন্দুদের শিক্ষাদীতার কাজ করেছেন। তাই মালব্যজী অস্পৃশ্ততার মত কুপ্রথাকে মনে প্রাণে ঘ্বণা করেন এবং এর বিরোধিতা! করেন তিনি নিজে তীব্র ভাষার এই কুপ্রথার নিন্দা করেছেন। এমন কি নিজে শুদ্ধি করে হিন্দুধর্মত্যাগী &অনেক লোককে হন্দুধর্মে ফিরিয়ে আনতেও তিনি কম্থর করেন নি। আবার হিন্দুসমাজের অপর একটি কুপ্রথা-_ শিশুবিবাহ নিবারণের জন্তে যখন ব্যবস্থা পরিষদে আইনপ্রণয়নের চেষ্টা হয়েছিল, তখন মালব্যজী তার তীব্র বিরোধিতা করেছিলেন তার

ভারতের মুক্তিসাঁধক ৩২

মতে শিশুবিবাহের ব্যাপারে হিন্দু শাস্ত্রের পরিপূর্ণ সমর্থন আছে। তাই তিনি কোন প্রকারের আইন প্রণয়ন করে শিশুবিবাহ নিবারণের বিরোধী তবে কেউ যদি স্বেচ্ছায় শিশুবিবাহ না দেয়, সেটা ভাল কথা তিনি নিজের পরিবারেও যুগধর্ম অনুসারে বিবাহের বয়েস বাড়িয়ে দিয়েছেন

এই হ'ল মোটামুটি মালব্যজার চরিত্রের কাঠামে! এই আধুনিক পরিবর্তনশীল যন্ত্রযুগেও যিনি মধ্যযুগীয় অনেক অপ্রচলিত প্রথাকে ত্বাকৃড়ে ধরে আছেন, সেই গোড়াব্রাঙ্গণ পণ্ডিত মালব্যজীর চরিত্রের প্রত মহত্ব কোথায়? মহত্ব আছে বইকি! তা নইলে তিনি ভারতের অসংখ্য হিন্দু জনসাধারণের এত প্রি কেন? তীর মহত্ব এইখানে যে তিনি এই যন্ত্রযুগেও বিগঞ্জযুগের ভারতীয় মুনি-ধধষিদের আদর্শ সযত্বে বাচিয়ে রেখেছেন। বঙমান যুগের নিষ্টর আদেশে তিনি অতীত যুগের যেটুকু বৈশিষ্ট এবং মহত্ব আছে তা ত্যাগ করতে চান না। তিনি অতি সহজ সরল জীবন যাপন করেন ; তার খাদ্য এবং বসনভূষণ মুণিখষিদের মত, সত্য, সভার এবং অহিংস সম্বন্ধে তার মতবাদ অত্যন্ত উদার। ব্যক্তিগত জীবনে ধারা পুতচরিত্র মালব্যজীকে জানেন, তারা মুগ্ধ না হয়ে পারেন না। প্রাচীন যুগে ভারতীয় ব্রাঙ্গণরা যে পবিত্র উদার জীবন যাপন করতেন, বর্তমান যুগে মালব্যজী সেই পবিত্র জীবনেরই জীবন্ত আদর্শ। এই রক্ষণশীল পুত চরিত্রের গুণেই মালব্যজী ভারতীয় হিন্দুদের একটা বিরাট রক্ষণশাল অংশের সঙ্গে যোগস্ত্র রক্ষা করে চলেছেন

অনেক সময় আবার দেশের ছুদিনে যখন জাতীয়তার বৃহত্তর আহ্বান এসেছে, তখন মালব্যজী সে আহ্বানে সাড়া না দিয়ে পারেন নি। সে আহ্বানে সাড়া দিতে গিয়ে তাকে অনেক রক্ষণশীল হিন্দুধর্মের বিধি- বহিভূতি কাজও করতে হয়েছে ।; বিলাতে গোলটেবিল বৈঠকে যোগ

৩৩ | | পণ্ডিত মদনমোহন মালব্য

দেবার সিদ্ধান্ত তিনি যখন করেন, তখন তাকে এমনই একটি সমস্তার সম্মখীন হতে হয়েছিল কিন্তু দেশ এবং জাতির বৃহত্তর আহ্বানে ডি কালাপানি পার হতেও দ্বিধা বোধ করেন নি।

১৯১৯ খুষ্টান্বের পরে ভারতের জাতীয় কংগ্রেস যখন অসহযোগ আন্দোলন স্থষ্টির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে, তখন মালব্যজীর রাজনৈতিক জীবনে নতুন সমস্ত; দেখা দেয়। তিনি চিরদিনই ভারতের কংগ্রেস ভারতীয় জাতীয়তাবাদের উৎসাহী সমর্থক ছিলেন ! তিনি সামরিক আইন উঠে যাবার পর প্রথম স্থযে।গেই--১৯১৯ খুষ্টাব্দের আগষ্ট মাসে পাঞ্জাবে গেছিলেন এবং পাঞ্জাবের অবস্থা স্বচক্ষে দেখে এবং স্বকর্ণে শুনে তিনি যে বিবরণ তৈরী করেছিলেন, সেই বিবরণ থেকেই ভারতবাসীর1 এবং জগদ্বাসীর সর্বপ্রথম পাঞ্জাবের অবস্থ। জানতে পেরেছিল। অমুতসরের ব্যাপারে গভর্ণমেন্ট ষে ভূল করেছিলেন, তিনি কেন্দ্রীয় ব্যবস্থ। পরিষদেও স্থৃতীত্র ভাষায় তার নিন্দা করেছিলেন অমুতসরের লোকেদের উপর গভর্ণমেণ্ট জোর করে যে লঙ্জা এবং অপমান চাপিয়ে দিয়েছিলেন, সে যে মৃত্যুর চেয়েও ভয়ানক এবং অপরাধের সামিল, মালব্যজী সেই কথাই প্রমাণ করতে চেয়েছিলেন কিন্ত/অমৃতসরের ব্যাপার নিয়ে মহাত্মাজীর নেতৃত্বে ভারতীয় কংগ্রেস যখন অসহযোগ আন্দোলনের প্রয়াস পেল, তখন কিন্তু মালব্যজী দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়লেন। তিনি কংগ্রেসের আদেশে ব্াবস্থা- পরিষদ পরিত্যাগ করতে রাজী হতে পারলেন না। আবার এদিকে তিনি কংগ্রেস ছাড়তেও নারাজ; প্রতিষ্ঠান হিসাবে কংগ্রেসের প্রতি তার আশৈশব স্থুগভীর অনুরক্তি এবং আন্গত্য ছিল | কংগ্রেসের প্রতি মালব্যজীর আন্ুগত্যকে সবাই শ্রদ্ধার চোখে দেখত। কংগ্রেসের পূর্ণ অধিবেশনে তিনি যখন বারবার উঠে বক্তৃতা দিতেন এবং সকলের সঙ্গে একমত হয়ে ভোট দিতে অস্বীকার করতেন, তার বক্তব্য সর্বদা শ্রুতিমধুর

ভারতের মুক্তিসাধক ৩৪

না হলেও সবাই তাঁর কথা শ্রদ্ধার সঙ্গে গুন্ত এবং যাদের সঙ্গে তার মতভেদ হত, তারাও কখনও তাকে শ্রদ্ধা না করে পারতেন না। কিন্তু তিনি নিজেও অন্তের মত বদলাতে পারতেন না--অন্ঠরাও তার মত বদলাতে পারত না। সবাই জানত যে তার বিবেক আদেশ করলে তিনিই সর্বপ্রথম কারাবরণ করবেন ; কিন্ত এই বিবেকের আদেশ পেতে তার অনেক সময় লেগেছিল কেউ এক মুহূর্তের জন্তে তার একনিষ্ঠতা কিংবা সাহস সম্বন্ধে সন্দেহ করতে পারত না। অবশেষে তিনি আইন অমান্ত করে সকলের সঙ্গে কারাবরণই করেছিলেন পাঞ্জাবের ব্যাপারে মহাত্মাজীর মত মালব্যজীরও দৃঢ় বিশ্বাস ছিল যে গভর্ণমেন্ট অন্যায় করেছেন এবং সে অন্তায়ের প্রতিকার হওয়া বাঞ্চনীয় | কিন্তু প্রতিকারের জন্তে তিনি প্রথমে অসহযোগ আন্দোলন পধস্ত যেতে রাজী ছিলেন না। অসহযোগ আন্দোলনের পরে পরেই মোপলা বিদ্রোহ হয়। এই মোপলা বিদ্রোহের ফলে মালাবারে অনেক হিন্দুকে জোর করে মুসলমান ধর্মে ধর্মান্তরিত করা হয়। এই জন্তেই হিন্দুধর্মে উগ্র মতাবলম্বী মালব্যজীর পক্ষে মহাত্মা গান্ধীর মত সর্বাস্তকরণে খিলাফৎ আন্দোলন সমর্থন করা সম্ভব হয় নি। ১৯২১-২২ খৃষ্টানদের দিকে মালব্যজীর মনে এমনই বিরুদ্ধ শক্তির অন্তদ্বিন্দ চল্ছিল। তাঁর নিজের সঠিক অবস্থ। তিনি নিজেও বুঝতে পারছিলেন না।

এর পরই পগ্ডিত মতিলাল নেহেরু এবং দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ চূড়ান্ত রকমের অসহযোগ আন্দোলনের পথ ত্যাগ করে ব্যবস্থা পরিষদের মধ্যে থেকে স্বাধীনতার যুদ্ধ চালাতে মনস্থ করলেন। এদের সিদ্ধান্তে মালব্যজীই সুখী হলেন সব চেয়ে বেশী। কিন্তু ব্যাপারেও তার পথে ছিল অনন্ত বাধা তার অবস্থা আর কংগ্রেসের মধ্যস্থিত স্বরাজ্য দলের নেতা পণ্ডিত মতিলাল নেহেরুর অবস্থা এক ছিল না। মতিলালের

৩৫ পণ্ডিত মদনমোহন মালব্য

লক্ষ্য ছিল আইন-সভার মধ্যে থেকে গভর্ণমেন্টের কাজে ব্যাঘাত সৃষ্টি করা--ভাঙন ধরানো কিন্ত মালব্যজী সর্বান্তকরণে মতও সমর্থন করতে পারতেন না-_তা ছাড়া তার পক্ষে জাতীয়তার জন্তে হিন্দুধর্মকে দুরে সরানোও সম্ভব ছিল না। যখনই জাতীয়তা এবং হিন্দুধর্মের মধ্যে বিরোধ বেধেছে, তখনই মালব্যজীর কাছে জয়ী হয়েছে হিন্দুধর্ম। তা ছাড়া মন এবং রাজনীতির দিক থেকেও তিনি উদারপন্থী-__তার পক্ষে চরমপন্থী হওয়া সম্ভব নয়। তিনি উনবিংশ শতাব্দীর উদারতন্ত্র ভাল- বাসেন__এ যুগের সাম্যবাদ তার মনঃপুত নয়। উনবিংশ শতাব্দীর ইংল্যাণ্ডের উদার মতাবলম্বী প্রধান মন্ত্রী গ্ল্যাডষ্টোনের প্রভাব মালব্যজীর উপরে খুব বেশী বলে মনে হয়। তিনি ব্যবস্থা পরিষদে যে সব বক্তৃতা দিতেন তাও অনেকটা গ্ল্য।ডষ্টোনের বক্তৃতার আদর্শে রচিত। মালব্যজীর বাগ্মিতা অসাধারণ না হলেও প্রশংসনীয় | ব্যবস্থ। পরিষদে তিনি যে সব বক্তৃতা দিতেন পরিষদের ভিতরে এবং বাহিরে তার গুরুত্ব বড় কম ছিল না। বিদেশে ভাড়াটিয়া ভারতীয় কুলি রপ্তানী এবং পাঞ্জাবের বিশৃঙ্খলা সম্বন্ধে তিনি ষে বক্তৃতা দিয়েছিলেন, তার মধ্যে তার নিভীকতা এবং স্বদেশ গ্রীতির পরিচয় যেমন পাওয়া গেছিল তেমনই বক্তৃতা সমগ্র দেশের মনে সাড়। এনেছিল

ভোটে যখন পণ্ডিত মতিলাল নেহেরু স্বরাজ্যদলের নেতারূপে নির্বাচিত হলেন, তখন সবাই আশা করেছিল যে পুরানো কংগ্রসকর্মী হিসাবে মালব্যজীও বোধ হয় এই দলে যোগ দেবেন। কার্যত কিন্তু তা হ'ল না মালব্যজী নিজে একটি দল গঠন করে তার নাম দিলেন জাতীয় দল। মালব্যজীর দলে শুধু হিন্দুদেরই স্থান ছিল » মালব্যজীর দলের শেষ্ঠ স্তস্ত ছিলেন তার পুরানে। বন্ধু পাঞ্জাব-কেশরী লালা লাজপত রায়।॥ যখন পরিষদে গভর্ণমেণ্টের বিরুদ্ধে ঝড় ধরণের কোন

ভারতের মুক্তিসাধক ৩৬

নিন্দাজ্ঞাপক প্রস্তাব উপস্থাপিত হস্ত, তখন উভয় দলই প্রায়ক্ষেত্রে একসঙ্গে ভোট দ্িত। কিন্তু অনেক ছোটখাটো ব্যাপারে-__বিশেষ করে হিন্দুধর্ম ঘটত ব্যাপারে--উভয় দলের মতভেদ দেখা যেত

এর পরেই ১৯৩* খৃষ্টাব্দে যখন পুনরায় অসহযোগ আন্দোলন সুরু হ*ল তখন মালব্যজীর মতবাদ গেল সম্পূর্ণ বদলে এই বছর মালব্যজী তার পুরানো দ্বিধাদ্ন্দ সব কাটিয়ে উঠলেন তিনি এবার পুরোপুরি অসহযোগ আন্দোলনে আত্মনিয়োগ করলেন এর জন্তে তাকে বার কয়েক কারাবরণ করতেও হয়েছিল ।/ লবণ আইন ভঙ্গের ফলে মহাত্মাজী গ্রেপ্তার হন। গভর্ণমেণ্ট এই সময় অনেক নতুন অডিনান্স জারী করেন। ফলে বোম্বাই সহরে তুমুল উত্তেজনার সঞ্চার হর এবং পুলিশ. অনেক ক্ষেত্রে জনতার উপর লাঠি চালায়। এই সব ব্যাপার নিয়ে গভর্ণমেণ্টের প্রতি জনগণের মনে বিরূপ ভাবের স্থষ্টি হয়। এই সময় মালব্যজী কংগ্রেস ওয়াকিং কমিটির অপরাপর সদস্তের সঙ্গে একবার পথে বসে সত্যাগ্রহ করেন। পুলিশ তাদের পথ আটকিয়ে তাদের সরিরে দেবার চেষ্টা করে। আর তারা অহিংস পদ্ধতিতে আইন অমান্য করে গভর্ণমেন্টের অন্যায় জুলুমবাজির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাচ্ছিলেন এর পর প্রবীণ বরসেও মালব্যজীকে বহুবার কারাবরণ করতে হয়েছে--তবে কোন সময় বেশীদিনের জন্যে তাকে কারাগারে থাকতে হয় নি।

মালব্যগীর একবারের কারাবাস সম্বন্ধে পণ্ডিত জওহরলাল নেহেরু নিয়ে ক্তরূপ বর্ণন1 দিয়েছেন 2 “পণ্ডিত মদনমোহন মালব্যকেও অন্য একটি জেল থেকে নৈনীতে স্থানান্তরিত করা হয়েছিল তাকে আমাদের ব্যারাকে না রেখে আলাদ। করে রাখা হয়েছিল কিন্তু প্রতিদিনই তাঁর সঙ্গে আমাদের দেখা হত এবং হয়ত বাইরের চেরে এখানেই আমি

,শু৭ পণ্ডিত মদনমোহন মালব্য

তাকে বেশী দেখেছিলাম জীবনীশক্তিতে ভরপুর, সববিষয়ে যুবকের মত.আগ্রহণীল-_তিনি আনন্দদায়ক সঙ্গী ছিলেন। এমন কি তিনি _রপজিতের সাহায্য নিয়ে জার্মান শিখতেও সুরু করেছিলেন এবং তার মধ্যে উল্লেযোগ্য স্থৃতিশক্তি দেখা যেত 'তিনি বখন নৈনীতে ছিলেন, তখন বেতমারার সংবাদ এসেছিল এবং ভীষণ উদ্বিগ্ন হয়ে তিনি অস্থায়ী প্রাদেশিক গভর্ণরের কাছে পত্র লিখেছিলেন। এর পরে পরেই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। তিনি জেলের আবহাওয়ার মধ্যে শীত সহ করে উঠতে পারেন নি। তীর অসুস্থতা ভীষণ হয়ে উঠল, তাকে সহরের হাসপাতালে স্থানান্তরিত করতে হল এবং পরে তাঁর কারাবাসের মেয়াদ ফুরোঁবার আগেই তাঁকে মুক্তি দিতে হয়েছিল। স্থথের বিষয় তিনি হাসপাতালেই সেরে উঠেছিলেন” এর পরেও আবার ১৯৩৩ খৃষ্টাব্ধে তিনি জওহরলালের মাতা পরাণ নেহেরুধ মঙ্গে ধরা পড়ে- ছিলেন। এই সব ক্ষেত্রে মালব্যজীর চেয়ে বেণী সাহস এবং দৃঢ়তা নিয়ে আর কেউ কারাবরণের জন্যে এগিয়ে যেতে পারতেন না।

রাজনীতি এবং ধর্মচর্চা ছাড়াও শিক্ষা প্রচার খিষয়েও মালব্যজীর অপরিসীম আগ্রহ এবং উৎসাহের কথা সর্বজনবিদিত। কাশীর হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্টা মালব্যজীর জীবনের অন্যতম শ্রেষ্ট কীঁতি। এই বিশ্ববিগ্ভালয়টি স্থাপনের জন্তে তিনি ভারতীয় ধনীদের কাছ থেকে যে অপরিসীম শ্রম এবং ত্যাগ স্বীকার করে অর্থ সংগ্রহ করেছেন, সে শুধু তার মত দৃট়চরিত্র লোকের দ্বারাই সম্ভব। তাঁরই আপ্রাণ প্রচেষ্টায় হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়টি আজ ভারতের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিশ্ববিগ্ভালয়ে পরিণত হয়েছে। তবে এটি পুরোঁদস্তর সাম্প্রদায়িক প্রতিষ্ঠান বলে ভয়ের কারণও আছে এখান থেকে দেশের মধ্যে সাম্প্রদায়িকতার উগ্র বিষ ছড়িয়ে পড় সম্ভব অবশ্য মলব্যজীর নিজের মনে তেমন কোন

ভারতের মুক্তিসাধক ৩৮

অসছুনেশ্ঠ ছিল ন1-_কিংবা নেইও | কিন্তু বর্তমানে ভারতে সাম্প্রদায়িক ভেদবুদ্ধি এত ভীষণভাবে শিকড় গেড়েছে ষে সাম্প্রদায়িক সব প্রচেষ্টাই জাতীয় জীবনের পক্ষে ভয়ের কাঁরণ। যুক্ত প্রদেশের উত্তর-পশ্চিমে আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় এবং দক্ষিণ-পশ্চিমে হিন্দু বিশ্ববিগ্ভালয় অনিবার্ধ কাঁরণ বশতই উভয় সম্প্রদায়ের নিজ নিজ প্রচার কেন্দ্র হয়ে দাড়িয়েছে তবে মালব্যজী বেঁচে থাকতে হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন শোচনীয় পরিণতি হবে না--এ আঁশা আমরা করতে পারি।

মালব্যজী আজ অতিবুদ্দ। তিনি বহুদিন রাজনীতি থেকে অবসর গ্রহণ করেছেন কিন্তু ভারতের মুক্তি সংগ্রামে তার আন্তরিক সহানু- ভূতির অভাঁব নেই। দেশের প্রতিটি সৎ কাজ এবং পাধু প্রচেষ্টার পিছনেই তার একান্তিক শুভেচ্ছ! থাকে তাঁর উদার মহৎ চরিত্রের গুণে তিনি দেশবাঁসী মাত্রেরই প্রিয় মহাত্মা গান্ধী থেকে সুর করে ভারতের সকল নেতাই মাঁলব্যজীকে অপরিসীম শ্রদ্ধার চোখে দেখে থাকেন। তিনি আরও দীর্ঘদিন বেঁচে থেকে ভারতকে মুক্তি-সংগ্রামে জয়ী দেখে যান__আমর। এই কাঁমনাই করি।

লালা লাজপত রায়

লাল! লাঁজপত রায় ভাঁরতের স্বাধীনতার ইতিহাসে “পাঞ্জাব-কেশরী” নামে স্ুগ্রসিদ্ধ। স্বাধীন ভারতে একদিন রণজিৎ সিংহও ঠিক একই নামে প্রসিদ্ধ ছিলেন। জীবনের সুদীর্ঘ পঞ্চাশ বৎসর ব্যাপী সাধনার বলে লাল! লাজপত রাঁয় ভারতের স্বাধীনতার ইতিহাসে যে অক্ষয় কীতি

৩৪ লালা লাঁজপত রায়

রেখে গেছেন, তাতে একথা শ্বীকাঁর করতেই হয় যে তাঁর পাঞ্জাব-কেশরী নাম .সার্থক। এমন নির্ভীক ন্বদেশ প্রেমিক, আত্মত্যাগী মহদাশয় নেতা যে কোন দেশের পক্ষেই গৌরবের বিষয়। আধুনিক পাঞ্জাবের সঙ্গে সঙ্গে আধুনিক ভারতবর্ষের তিনি যে অন্যতম শ্রষ্ট! ছিলেন, নে কথা কোন ক্রমেই অস্বীকার করা চলে না।

১৮৬৫ খৃষ্টাব্দে পাঞ্জাবের লুধিয়ানা জেলার জাঁগ্রঁও নামে ছোট একটি সহরে লাল! লাঁজপত রায়ের জন্ম হয়েছিল। তিনি জাতিতে অগ্রবাঁল সম্প্রদ্দায়ের বৈশ্য পরিবাঁর-তুক্ত ছিলেন। তিনি মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান ছিলেন এবং তার ছেলেবেল1 দারিদ্রের মধ্যেই কেটেছিল। জীবনে লালাজী নিজ হাতে নিজের ভাগ্য তৈরী করেছিলেন তাঁর পিতা লাল রাধাকুষ্ণন ছিলেন সে যুগের একজন উল্লেখযোগ্য লোক এবং প্রথমে তিনি ছিলেন গভর্ণমেণ্ট স্কুলের উদ্ুরি শিক্ষক। ১৮৭৭ খুষ্টাব্বে তিনি সুপ্রসিদ্ধ ধর্মগ্রচাঁরক স্বামী দয়ানন্দ সরঙ্গতীর ধর্স শিক্ষার প্রভাবে আসেন। তিনি নিজে শিক্ষক এবং শিক্ষা-প্রিয় ছিলেন বলে ছেলেকেও ভাঁল ভাবে বিচ্যাশিক্ষা দেবার 'চেষ্ট] করেছিলেন স্কুলের শিক্ষা শেষ করে লালাজী লাহোর গভর্ণমেণ্ট কলেজে প্রবেশ করেছিলেন এবং সেখানে ছুবৎসর বিশ্ববিদ্যালয়ের বৃত্তি ভোগ করেছিলেন। ১৮৮৫ খুষ্টান্দে তিনি বিশ্ববিচ্ধালয়ের আইন পরীক্ষায় দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে উত্তীর্ণ হয়ে ছোট সহর হিসারে আইন-ব্যবসায়ে প্রবৃত্ত হয়েছিলেন। জ্ঞানাঞ্জন-স্পৃহ! লালাজীর চরিত্রের অন্গতম প্রধান বৈশিষ্ট ছিল। তার চরিত্রে প্রাচ্য পাশ্চাত্য জ্ঞানের অপূর্ব সমাবেশ হয়েছিল। তিনি জীবনের প্রথমেই লালা হংসরাঁজ, গুরুদত্ত বিছ্যার্থী প্রভৃতি নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের সংস্পর্শে এসেছিলেন। এ'রা প্রত্যেকেই ভিন্ন ধরণের লোক ছিলেন-কিন্তু প্রত্যেকেরই উদ্দেশ্য ছিল পঞ্চ নদের

ভারতের মুক্তিসীধক ৯০

দেশ পাঞ্জাবের উন্নতি করা। লাল লজপত তীর জীবনের শেষভাগে নিজের আদর্শে এমন একদল যুবক কর্মীকে তৈরী করে রেখে গেছেন, ধার! ভিন্ন ভিন্ন ধরণে এবং ভিন্ন ভিন্ন পথে আজ দেশের অনেক প্রগতিশীল আন্দোলনের নেতৃত্ব কর্ছেন।

লালাঁজী তার উৎসাহ, অধ্যবসায়, সততা বাগ্মিতাঁর গুণে শীঘ্রই আইন-ব্যবসায়ে প্রচুর কৃতিত্ব অর্জন করেছিলেন। অতি অল্লকালের মধ্যে ১৮৯২ খৃষ্টাব্দে তিনি হিসারের 'গাইন-ব্যবসায় ত্যাগ করে লাহোরে চলে এলেন। ছোট পহর হিসারেও কিন্ত তিনি এতদিন চুপ চাপ বসে থাকেন নি। জন্সাঁধারণের কাজে এইখানেই তাঁর ভাতে খড়ি হয়েছিল তিনি দয়ানন্দ কলেজের প্রতিষ্ঠায় সাহাধ্য করা ছাঁড়ীও আর্ধ সমাজ আন্দোলনের জন্তটে অনেক কিছু করেছিলেন। লাহোরে এসেও তিনি আধ সমাজ আন্দোলনের কাজে আত্মনিয়োগ করেছিলেন। অনেকটা তারই প্রভাব এবং কাজের গুণেই যে পাঞ্জাবে আর্য সমাজ আন্দোলন বিস্তার লাঁভ করেছিল সে কথা অস্বীকার করার উপায় নেই। লালা লাঁজপত রায়ের রাজনোতক জীবনের আরম্ভ ১৮৮৮ খুষ্টাবে এই সালে তিনি প্রসিদ্ধ মুসলমান নেতা স্যার সৈয়দ আহম্মদের রাজনৈতিক মতাবলীর সমালোচন! করে অনেকগুলো খোলা চিঠি প্রকাশ করেন। এই সালেই তিনি সর্বপ্রথম ভারতীয় কংগ্রেসের এলাহাবাদ অধিবেদনে যোগ দেন। লালা লাজপতের লেখা খোল] চিঠি গুলোতে দেখ! বায় যে স্যার সৈয়দ আহম্মদের প্রথম জীবনের লেখা এবং রাজনৈতিক মতাব্লীর প্রভাব তার চরিত্রে খুব বেশী পড়েছিল। স্যার সৈয়দ শেষ জীবনে অনেকটা সাম্প্রদায়িক মতাবলম্বী হয়ে পড়েছিলেন তার প্রথম জীবনের লেখার মধ্যে যথেষ্ট রাজনৈতিক দূরদশিতা ন্বদেশ-গ্রীতির পরিচয় পাওয়! যাঁয়। তাই তার প্রথম জীবনের রাজনৈতিক রচনণবলীর গ্রভাঁব লালা

*৪১ লাল! ল'জপত রায়

লাজপতের উপর খুব বেশী। ছাঁড়া ইটালীর স্বদেশ প্রেমিকদের . কাহিনীও তাঁকে স্বদেশ-প্রেমে উজ্জীবিত করেছিল। ( উদতে লেখা তার ইটালীয় স্বদেশপ্রেমিক ম্যাটনিনি গ্যারিবন্ডীর জীবনী এখনও সমগ্র পাঞ্জাবে অত্যন্ত বেশী জনপ্রিয় তার রচিত স্বাধীন মহা রাষ্ট্রের নিভীক বীর প্রতিষ্ঠাতা শিবাঁজীর জীবনীও প্রসিদ্ধ )তার চরিত্রের বড় বৈশিষ্ট ছিল যে তিনি গুধু বড়চিস্ত/ করে কিংবা বড় বড় কথা বলেই ক্ষান্ত হতেন না--সেটাকে কার্ষে পরিণত না কর পর্যন্ত তার শান্তি ছিল না। ১৮৯৭ খুষ্টান্দের ছুভিক্ষের সময় তিনি অনাথ বালক বালিকাদের এমাণ কার্ষে আত্মনিয়োগ করেছিলেন ১৮৯৯--১৯০০ খৃষ্টাব্দের দুর্ভিক্ষের সময়ও তিনি একটি অনুরূপ আন্দোলনের প্রবর্তন করেছিলেন তিনি যেসব ভ্রাণ-সমিতি স্থাপন করেছিলেন তাদের মধ্যস্থতায় মধ্যগ্রদেশ, রাজপুতানা এবং পূর্ববঙ্গের প্রায় ২০০০ অনাথ ধালকবালিকা উদ্ধার পেয়েছিল। ফিরোজপুরে অনাথ আশ্রমের সাধারণ সম্পাদকরূপেও তিনি প্রশংসনীয় কাজ করেছিলেন। গভর্ণমেপ্ট কর্তৃক আমন্ত্রিত হয়ে তিনি ১৯০, খৃষ্টাব্দে দুভিক্ষ কমিশনের সামনে সাক্ষ্য দেন। এর কিছুদিন পরে তিনি গ্রচার-কার্ষের উদ্দেস্টে আমেরিকা এবং ইংল্যাণ্ডে বান। ইংল্যাণ্ডে তিনি গোপালকুষ্চ গোখেলের গঙ্গে সম্মিলিতভাঁবে অনেক কাজ করেন। বিংশ শতাব্দীর প্রথম ভাগে স্বদেশী আন্দোলনে লালাজী উল্লেখযোগ্য অংশ গ্রহণ করেছিলেন তিনি মনে প্রাণে স্বদেশী ছিলেন এবং এই সময় দেশের রাজনৈতিক সমস্তা নিয়ে অনেক ইংরেজী পত্রিকায় তিনি প্রবন্ধাদি লিখতেন। ব্বদেশী সম্বন্ধে তিনি একবার লিখেছিলেন £ “আমার মতে স্বদেশী সম্মিলিত ভারতের সাধারণ ধর্ম হওয়া উচিত জীবনের প্রথমেই কংগ্রেসের সঙ্গে লালাজীর ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ স্থাপিত হয়েছিল কংগ্রেস প্রতিষ্ঠার মাত্র তিন বছর পরে এলাহাবাদে

ভারতের মুক্তিসাঁধক ৪২

১৮৮৮ খুষ্টাবে মিঃ জর্জ ইযুলের সভাপতিত্বে কংগ্রেসের যে অধিবেশন, হুয়, সেই অধিবেশনে তিনি উপস্থিত ছিলেন। এর পর ক্রমে কংগ্রেসের . সঙ্গে তার যোগাঁষোগ গভীরতর হয়। কংগ্রেসের উন্নতির জন্তে তিনি তার লেখনী, বন্তৃতা-শক্তি এবং নিজের আধিক শক্তি নিয়োজিত করেছিলেন। শীঘ্রই জাতীয় কংগ্রেসের কর্তৃপক্ষ লালাজীর বুদ্ধি ৃত্তি, আত্মত্যাগ এবং জলন্ত ব্বদেশপ্রেম দেখে মুগ্ধ হয়ে গেছিলেন। তাই ১৯০৫ খৃষ্টাব্দে কংগ্রেসের তরফ থেকে বিলাতে ভারতের রাজনৈতিক অন্ুবিধা সম্বন্ধে প্রচার কার্য চালানোর জন্তে তিনি কংগ্রেস প্রতিনিধি মণ্ডলীর অন্যতম সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। পাঞ্জাবের ইগ্ডয়ান এসোসিয়েসন্‌ তার বিলাত যাওয়ার খরচের জন্তে ৩০০০২ টাক! তুলে- ছিলেন। লাঁলাজী কিন্তু টাক] গ্রহণ না করে নিজের খরচেই বিলাত গেছিলেন এবং এই তিন হাঁজাঁর টাক! তিনি ছাত্র সমাজের উপকারের জন্যে দান করেছিলেন। বিলাঁতে তিনি প্রচার কার্ষে যথেষ্ট সুনাম অর্জন করেছিলেন। বিলাত থেকে ফিরে এসে তিনি ভারতের রাজ- নৈতিক অর্থনৈতিক উন্নতি সাধনের জন্তো নিভিন্ন পন্থা আবিষ্কারে আত্মনিয়োগ করেছিলেন। ১৯০৫ খুষ্টাব্বে মগাঁমতি গোঁখেলের স্ভা- পতিত্বে কাঁশীতে কংগ্রেসের অধিবেশনে লালা লাজপত রায় বাংলায় দমনমূলক সরকারী আইনের প্রতিবাদ সমর্থন করে একটি নির্ভীক তেজোব্যগ্তক বক্তৃতা দিয়েছিলেন

এর পরে ১৯০৭ খুষ্টাব্দে সহসা! ভারত থেকে লালাঁজীর নির্বাসন তাঁর জীবনের অন্ততম শ্রেষ্ঠ ঘটন1। এই নির্বাসন-দণ্ডের ফলে তিনি সমগ্র ভারতে আরও বেশী জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। লালাজীর নির্বাসনের সুস্পষ্ট কোন কারণ আজ পর্যন্ত জানা যায় নি। তবে এইটুকু বোঝা যায় যে পাঞ্জাবের মত একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রদেশে লাঁলাজীর রাজনৈতিক

লাল! লাঁজপত রায় (

মতবাদের প্রচার প্রসারে ভারত গভর্ণমেপ্ট ভীত হয়ে উঠেছিলেন। ভারতের স্বাধীনতার ইতিহাঁমে লালাঁজীর এই নির্বাসন অতি স্মরণীয় একটি ঘটন1। লালাজী এবং মহারাষ্ট্রের লোকমান্ত তিলক স্বদেশসেবার জন্যে যে নির্যাতন ভোগ করতে সুরু করেন, ভারতের স্বদেশ প্রেমিকদের ভাঁগ্যে সে নির্ধাতন-ভোগ আজও শেষ হয় নি।) লালাজীর নির্বাসনে ভারতীয় জনগণ মোটেই মুষড়ে পড়েনি--বরং তীর নিভীক আদর্শ দেশবাসীদের স্বদেশপ্রেমের কাঁজে আরও বেশী উজ্জীবিত করে তুলেছে। এখনও ভারতে সহন্্র সহম্্ স্বদেশপ্রেমিক দেশের জন্যে দশের জন্ত্ে নীরবে নির্যাতন সহা করে চলেছেন। ভারতের মুক্তি-সংগ্রামের সাফল্য- পূর্ণ অবসান না হওয়! পর্যন্ত তাদের নির্যাতন ভোগ শেষ হবে ন|। লালাঁজীর নির্বাসন-দণ্ডের সংবাদ শুনে তীর স্বদেশপ্রেমিক নির্ভীক পিতা লালা রাধাকষ্ণণ বলেছিলেন £ “আমার পুত্র লাজপতের প্রধান অপরাধ এই যে তিনি তাঁর দেশবাসীদের পক্ষ সমর্থন করতে দঈীড়িয়েছিলেন। তার মত একজন পুত্র আমার আছে বলে আমি আনন্দিত।» উপযুক্ত পুত্রের পিতার মতই কথা নয় কি?

লালাজীর নিবণসনকালের বেশ কিছুটা কেটেছিল আমেরিকায় তাঁকে প্রায় বারো বৎসর ভারতের বাইরে কাটাতে হয়েছিল। তিনি এই দীর্ঘকাল কিন্তু আলস্তে চুপচাপ করে কাটিয়ে দেন নি। তার নির্বাসনের একট! স্থফল এই হয়েছিল যে তিনি বিদেশে ভারতের জাতীয়তাঁর পরিপোঁষক আন্দোলন স্থ্টি করে তুলেছিলেন। আধুনিক কালে পণ্ডিত জওহরলাল নেহেরু কংগ্রেসের সঙ্গে বহির্জগতের যোগা- যৌগ স্থাপিত করলেও, যোগাষোগের স্ত্রপাত করেছিলেন লালা লাজপত রাঁয়। তিনি আমেরিকায় ভারতের পক্ষে জোর প্রচার-কার্য চাঁলিয়েছিলেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রে বাদ করার সময় ভারতের সম্বন্ধে

ভারতের মুক্তিলাধক 9

অসংখ্য প্রবন্ধ এবং প্রচার-পুস্তিক রচন। করেছিলেন শোন! যায় য়ে লালাজীর নির্দেশে আমেরিকায় ১০ লক্ষেরও বেশী ভারতসন্বন্ধীয় প্রবন্ধ. প্রচার-পুম্তিকাদি রচিত হয়েছিল তার ইয়ং ইগ্ডিয়া” ( ০5০৪ [2018 ) নামক পুস্তক আমেরিকায় বহুল-প্রচলিত। এই পুস্তকে তিনি তরুণ ভারতের আশ। আকাজ্জার স্থন্দর চিত্র বিদেশীদের চোখের সামনে তুলে ধরেছেন। মহাযুদ্ধের শেষে ১৯১৯ খুষ্টাব্দে ভারতে তখন একদিকে দুিক্ষ দুর্দশ| আরেক্দিকে লালাজীর প্রিয় জন্মভূমি পাঞ্জাবে সরকারী নির্যাতনে দেশবাসীদের তীব্র অসন্তোষ নিবণীসনে লালাজীর কানে যখন এসব কাহিনী পৌছাত, তিনি স্বদেশে ফেরার জন্তে ব্যাকুল হয়ে উঠতেন। তার ইয়ং ইপ্ডিয়া” পুস্তকে এমন্বন্ধে একটি হৃদয়স্পশী বিবরণ আছে। ১৯১৯ খুষ্টাব্দের শেষভাগে গভর্ণমেণ্ট মহস। তার প্রতি সদগ় হয়ে উঠে তাকে স্বদেশে ফেরার অনুমতি দিলেন। জীবনের একটা! উল্লেখযোগ্য, অংশ বিদেশে কাটিয়ে লালাজী ৯৯২০ খৃষ্টানদের ২০শে ফেব্রুয়ারী স্বদেশের মাটিতে পদার্পণ করলেন। জাতিধর্ম নিবিশেষে ভারতবাসী মাত্রই তাকে সাদর অভ্যর্থনা জানাল। তিনি ভারতের বুবসমাজের উদ্দেশ্যে একটি বাঁগাতে তাদের আত্মবিশ্বাসী আত্মসংযমী হতে এবং হিন্দুমুসলমান এক্য সংস্থাপনে উত্মাহিত করেছিলেন

লালাজা যখন ভারতে ফিরে এলেন তখন গান্ধীজীর নেতৃত্বে ভারতের রাজনীতিক্ষেত্রে অসহযোগ আন্দোলনের ম্থরু হয়ে গেছে। পাঞ্জাবের জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকাণ্ডের নির্মম কাহিনী শুনে লালাজী শ্তস্তিত হয়ে গেলেন। তখন ভারতে মণ্ট/াগুচেমস্ফোর্ড শাসন-সংস্করের ফলে নতুন শাসনতন্ত্র অনুসারে শাসন-কার্ষের সুত্রপাত পাঞ্জাবে গভর্ণমেণ্টের অত্যাচারের প্রতিবাদে লালাজী ব্যবস্থা পরিষদের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্বিতা করবেন না বলে স্থির করলেন। পাঞ্জাবের

৪. লাল! লাজপত রায়

অত্যাচারের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ করে তিনি “বন্দে মাতরম্‌ পত্রিকায় একটি উল্লেখযোগ্য প্রবন্ধ লিখেছিলেন ১৯২০ খুষ্টাব্েই কলিকাতায় গ্রেসের বিশেষ অধিবেশনে লালাজী সভাপতি নির্বাচিত হন এই অধিবেশনেই কংগ্রেসের অসহযোগ নীতি ঘোষিত হয়। গান্ধীজী প্রবতিত অহিংদ অসহযোগ সম্বন্ধে লালাজী তার মত স্থির করে উঠতে ন|৷ পারলেও, তিনি আন্দোলনের বাইরে থাকতে পারেন নি। স্বদেশ প্রেমের জন্তে শান্ই তাঁকে রাজদ্রোহের অভিযোগে কারাবরণ করতে হয়েছিল এবং বেশ কিছুকাল তাকে কারাগারে কাটাতে হয়েছিল। এই কারাগারেই তার ভীষণ অস্থথ হয় এবং সৃত্যুর পুর্ব পর্যন্ত তিনি অস্থখের প্রভাব ভাল ভাবে কাটিয়ে উঠতে পারেন নি। তার অসুস্থতা গুরুতর আকার ধারণ করায় তিনি শেষ পর্যন্ত মুক্তি পান। রোগ থেকে কিছুটা সেরে ওঠার পরই তিনি ব্যবস্থা পরিষদের সদস্ত নির্বাচিত হন এবং জীবনের শেষ পর্যন্ত তিনি ব্যবস্থা পরিষদের সদন্ত ছিলেন। জীবনের শেষ কয় বৎসর লালাজী একটু বেশা পরিমাণে হিন্দু মহাসভার দিকে ঝুঁকে পড়েছিলেন কিন্তু শৈশব থেকে যে কংগ্রেনকে গড়ে তোলায় তিনি সাহায্য করেছিলেন, সে কংগ্রেমের প্রতি তার প্রীতি একটুও কমে নি। হিন্দু মহাসভায় যোগ দিয় হিন্দু সমাজের উন্নতিকল্পে কাজ করলেও লালাজীর মধ্যে গৌড়ামী ছিল না। তার স্বদেশগ্রীতি এবং জাতীয়তা-বোধ মৃত্যু পর্যস্ত অটুট ছিল। তিনি কলিকাতার হিন্দু মহাসভার অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেছিলেন তিনি শ্রমিক আন্দোলনেও উল্লেখযোগ্য অংশ গ্রহণ করেছিলেন এবং ঝরিয়ায় ১৯২১ থুষ্টাব্ধে অনুষ্ঠিত নিখিল ভারত ট্রেড ইউনিয়ন গ্রেসের দ্বিতীয় বাধষিক অধিবেশনৈ সভাপতিত্ব করেছিনেন। তিনি

ভারতের মুক্তিসাধক ৪৬

ভারতীয় শ্রমিকদের প্রতিনিধিরূপে জেনেভায় আস্তর্জীতিক শ্রম” সম্মেলনেও যোগ দিয়েছিলেন লালাজী জীবনে অনেক পুস্তকীদি লিখে গেছেন। তাঁর কয়েকখানির কথা ইতিপূর্বে উল্লেখ করেছি। এইবার তার আর একখানি প্রসিদ্ধ বইয়ের কথা বলি। এখানি তার শেষ বয়সের রচনা মিস্‌ মেয়ো ভারত সম্বন্ধে কুৎসা-পূর্ণ “মাদার ইণ্ডিয়া (০0): 17019) নামক পুস্তক রচন! করেছিলেন এই পুম্তকের তীব্র প্রতিবাদ করে লালাজী লিখেছিলেন “আনহ্যাপি ইণ্ডিয়া” (0077905 10019) | এই পুস্তকখানি ভারতবাসী মাত্রেরই অবন্ত পাঠ্য

এইবার লাল] লাজপত রায়ের অপ্রত্যাশিত এবং অস্বাভাবিক মৃত্যুর কথা আলোচনা করেই তার জীবন-কাহিনী শেষ করি। ১৯২৮ খুষ্টান্ের ৩*শে অক্টোবর এই সময়ে ভারতের শাসন-সংস্কার সম্বন্ধে অনুসন্ধানের জন্তে বিলাতের সাইমন কমিশন আমেন। সমগ্র প্রদেশে তখন এই সাইমন কমিশনকে বয়কট করার আন্দোলন চলছে। উক্ত তারিখে লালাজী লাহোরে সাইমন কমিশন বয়কটের জন্তে একটি বিরাট শোভাষাত্রার নেতৃত্ব করেন। পুলিশ সেই শোভাযাত্রার উপর লাঠি চালায়। পুলিশের লাঠির আঘাতে লালাজী আহত হন। শেষ বয়সে কারামুক্তির পরে তার স্বাস্থ্য ভাল ছিল না-_ একথা পূর্বেই বলেছি। পুলিশের লাঠির আঘাতে লালাজী সেই যে অসুস্থ হয়ে পড়েন, সে অস্তুস্থতা আর ভাল হয় না। ক্রমে তার হৃদয় দুর্বল হয়ে পড়ে। প্রসিদ্ধ চিকিৎসকরা চিকিৎসা করেও লালাজ'কে রোগ-মুক্ত করতে পারেন না। প্রায় আঠারো দিন রোগ যন্ত্রণা ভোগের পর ভারতের এই বীর সন্তান ৬৩ বৎসর বয়সে ১৭ই নভেম্বর হৃদ-যস্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে দেহত্যাগ করেন। তার এই

৪৭ মহাতা। গান্ধী

অস্বাভাবিক মৃত্যুতে সমগ্র দেশ শোকাভিভূত হয়ে পড়ে। মানুষ মাত্রেরই মরণ হয়। কিন্তু এমন শহীদের মৃত্যু খুব কম লোকেরই হয়। লালা লাজপত রায় আজ আমাদের মধ্যে নেই বটে-_কিস্ত্‌ ভারতের সামনে তিনি যে উজ্বল স্বদেশপ্রেম এবং আত্মত্যাগের আদর্শ রেখে গেছেন, সে আদর্শ ভারতের অগণিত নরনারীর বুকে স্বাধীনতার আগুণ জ্বালিয়ে দিয়েছে

মহাত্বা গান্ধী

শিক্ষিত,অশিক্ষিত ধনী দরিন্র পণ্ডিত মূর্খ নিবিশেষে ভারতবাসী মাত্রেরই কাছে মহাত্মা গান্ধী নামটি সুপরিচিত। ভারতের অগণিত নরনারী প্রতিদিন নীরবে এই নামটির উদ্দেস্তে তাদের অন্তরের শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করে। মহাত্মা গান্ধী শুধু বর্তমান ভারতের সবশরেষ্ট, সর্বজন মান্য নেতা নন-_তিনি সমগ্র ছুনিয়ার অন্ততম শ্রেষ্ঠ মহামানব। তার রাজনৈতিক মতাবলী কিংবা ভাবধারার সঙ্গে অনেকেরই মতের অমিল থাকতে পারে এবং আছেও ) কিন্তু তার ব্যক্তিত্ব, চারিত্রিক গুণ, দেশের জন্তে আত্মত্যাগ এবং সুচিস্তিত জীবন-দর্শনকে কেউ অস্বীকার করতে পারেনা দেহের দিক থেকে গান্ধীজী ক্ষুদ্রকায় এবং তুর্বল; কিন্তু তার মত মানসিক শক্তি দৃঢ়তা খুব কম লোকের মধ্যেই দেখা যায়। আজীবন কুচ্ছু সাধনার ফলে গান্ধীজী এই অপরিসীম মানসিক বলের অধিকারী হয়েছেন তিনি পাশবিক বলের বিরুদ্ধে পাশবিক বল প্রয়োগ করতে নারাজ; পাশবিক শক্তির বিরুদ্ধে তিনি মনের দৃঢ়তা

ভারতের মুক্তিসীধক ৪৮

এবং আত্মার শক্তিকেই নিয়োজিত করে থাকেন। জীবনে এই নতুন, অহিংন অস্ত্র প্রয়োগ করতে গিয়ে গান্ধীজীকে দেশের এবং দশের জন্তে বহুবার কারাবরণ করতে হয়েছে-অনেক নির্যাতন লাঞগ্চনা সহ করতে হয়েছে কিন্তু তার অন্তর থেকে এক মুহর্তের জন্তেও স্বদেশ- প্রীতির বহ্কি নিস্তেজ কিংবা নিশ্রভ হয় নি। আজ ৭৬ বৎসর বয়সেও তিনি হিমালয়ের অটুট ধৈর্য দৃঢ়তা নিয়ে কায়োমনে দেশ সেবা করে চলেছেন বালাজীবন বাদ দিলে গান্ধীজীর কর্মজীবনকে সুস্পষ্ট ছুটি ভাগে ভাগ করা যায় দক্ষিণ আফ্রিকার জীবন এবং ভারতের জীবন ১৮৯৩ থেকে ১৯১৩ পর্যন্ত জীবনের প্রায় সুদীর্ঘ বিশ বৎসর কাল তিনি কাটিয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকায়--প্রবাসী ভারতীয়দের সুখছুঃখের বোঝ! বয়ে। ১৯১৫ খুষ্টান্দ থেকে গান্ধীজী স্থায়ীভাবে ভারতবর্ষে বাস কর্ছেন। তখন থেকে আজ পর্যন্ত তিনি ভারতের ম্বাধীনতা- গ্রামে লিপ্ত

মহাত্ম। গান্ধীর পুরো নাম মোহনদাস করমচাদ গান্ধী ১৮৬৯ খৃষ্টানদের ২রা অক্টোবর পশ্চিম ভারতের পোরবন্দর নামে দেশীয় রাজ্যে তার জন্ম হয়েছিল। তিনি তাঁর পিতার সর্বকনিষ্ঠ পুত্র ছিলেন তার পিতা কাবা গান্ধী বেশী লেখাপড়া না জানলেও নিজের সততা, চরিত্রগুণ এবং অধ্যবসায়ের গুণে একাধিক দেশীয় রাজ্যের দেওয়ান পদে অধিষ্ঠিত হয়েছিলেন। তাদের অবস্থা মোটামুটি ভালই ছিল। গান্ধীজী জাতিতে বৈশ্য সম্প্রদায় ভুক্ত বাঁনিয়া। গান্ধীর মাতা ছিলেন দানশীলা ধর্মপরায়ণা মহিলা পিতার চেয়ে মাতার চরিত্রের গ্রভাবই গান্ধীজীর উপর খেশী। মায়ের প্রতি তার অপরিসীম ভক্তি ভালবাসা ছিল তার বাল্যজীবনের কয়েক বছর কাটে পোরবন্দরে এবং কয়েক বছর কাটে রাজকোটে। তৎকালীন হিন্দু সমাজের

৪৯ মহাত্ম! গান্ধী

প্রচলিত নিয়মানুসারে ১৮৮২ খৃষ্টাব্দে মাত্র ১৩ বৎসর বয়সে গান্বীজীর বিবাহ হয়। তার পদ্ধী ৬কম্ভুরবা গান্ধী গাস্ধীজীর চেয়ে কয়েক মাসের বড় ছিলেন। বিবাহের পরে তিনি ম্যাটিকুলেশন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন ১৮৮৪ খুষ্টাব্ধে কিছুদিন রোগভোগের পর তার পিতা দেহত্যাগ করেন গান্ধীজীর জাবনে এই প্রথম শোক। এর কয়েক মাস পরেই তার প্রথম সন্তান জন্মগ্রহণ করে-_কিন্ত দুর্ভাগ্যবশত বাচে না তিনি কিছুদিন ভবনগরে শ্তামলদাস কলেজেও ষোগ দিয়েছিলেন কিন্তু সেখানকার আবহাওয়া ভাল না লাগায় বাড়ীতে ফিরে আসেন। ১৮৮৬ খুষ্টাব্দে গান্ধীজীর দ্বিতীয় পুত্র জন্মগ্রহণ করে। ১৮৮৮ খুষ্টাব্দে ব্যারিষ্টারী পড়ার জন্তে তিনি বিলাত যাত্রা করেন বৈষ্ণব পরিবারের সন্তান ছিলেন বলে গান্ধীজী আজন্ম নিরামিষাশী তবু বিলাত যাত্রার পূর্বে গান্ধীজীর নিষ্ঠাবতী মাতা পুত্রকে দিয়ে বারবার শপথ করিয়ে নিয়েছিলেন যে ইংল্যাণ্ডে থাকার সময় গান্ধীজী মগ্যমাংসাদি স্পর্শও করবেন না। মাতৃভক্ত গান্ধীজী অক্ষরে অক্ষরে সত্য প্রতিপালন করেছিলেন গান্ধীজী প্রায় বৎসর ইংল্যাণ্ডে ছিলেন এই সময় তিনি লগুন বিশ্ববিদ্ভালয়ের ম্যাঁটিকুলেশন পরীক্ষায় পাশ করেন এবং পরে ব্যারিষ্টারী পরীক্ষায়ও উত্তীর্ণ হন। পর জীবনে গভর্ণমেন্ট-বিরোধী অসহযোগ আন্দোলন প্রবর্তনের অভিযোগে গান্ধীজীর ব্যারিষ্টারী ডিগ্রী কেটে দেওয়] হয় আদেশ রদের জন্তে তিনি আর কোন চেষ্টা করেন নি। ১৮৯২ থুষ্টাব্দে গান্ধীজী ভারতে ফিরে আসেন এবং এসেই শোনেন যে তার মাতার মৃত্যু হয়েছে তার পড়াশুনোর ক্ষতি হবে বলে তাকে বিলাতে খবর দেওয়া হয় নি। ভারতে তিনি মাত্র বছর" খানেক ছিলেন এই সময় তিনি বোম্বাই হাইকোর্টে আইন-ব্যবসায় সুরু করেছিলেন প্রথম প্রথম তার বন্তৃতা দিতেই ভীষণ লজ্জা হত।

ভারতের মুক্তিসাধক ৫৯

এই লময় ১৮৯৩ খৃষ্টাব্ষে গান্ধীজী দক্ষণ আফ্রিকার এক ভারতীয় মুসলমান ফার্মের আইন-উপদেষ্টার পদ পেয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার উদ্দোস্তে রওনা হন

দক্ষিণ আফ্রিকা গান্ধীজীর জীবনে এক সম্পূর্ণ নতুন অভিজ্ঞতার দ্বার খুলে দিল। দক্ষিণ আফ্রিকা সম্বন্ধে তার কোন অভিজ্ঞতাই ছিলনা এবং তখন পর্যস্ত তার চরিত্রে কোন রাজনৈতিক জ্ঞানেরও বিকাশ দেখা যায়নি শ্বেতাঙ্গরা কালাআদমী ভারতীয়দের কিরূপ দ্বণা করে-_তার প্রথম নিদর্শন গান্ধীজী দেখলেন শ্বেতাঙ্গশাসিত দক্ষিণ আফ্রিকায়। দক্ষিণ আফ্রিকার উন্নতির জন্তে ভারত থেকে অনেক ভারতীয় কুলি সেখানে আমদানী করা হয়েছিল। ট্রান্সভাল, স্ঠাটাল প্রভৃতি দেশে অনেক ভারতীয় কুলি পুত্রপরিবাঁর নিয়ে বসবাস করতে বাধ্য হয়েছিল সেই স্যত্রে অনেক ভারতীর ব্যবসায়ীও দক্ষিণ আফিকার গিয়ে ব্যবসায় স্থাপন করেছিলেন কিন্তু শ্বেতাঙ্গ শাসক সম্প্রদায় ভারতীয়দের মানুষ বলেই গণ্য করত না। তাদের উপর যৎপরোনাস্তি অন্তায় অত্যাচার কর! হত--শ্বেতাঙ্গ সম্প্রদায়ের থেকে তাদের বিচ্ছিন্ন করে রাখা হস্ত, এমন কি শ্বেতাঙগদের সঙ্গে তাদের ট্রেণের এক কামরায় ভ্রমণ করতেও দেওয়া হ'ত না। ট্রেণে এবং ঘোড়ার গাড়ীতে ভ্রমণ করতে গিয়ে গান্ধীজী একাধিকবার শ্বেতাঙ্গদের দ্বারা লাঞ্চিত হয়েছিলেন। ম্বদেশবাসীদের প্রতি অন্তায় অত্যাচারে গান্ধীজীর সপ্ত আত্মসম্মানবোধ মাথা চাড়। দিয়ে উঠেছিল গান্ধীজীর মক্কেলরা মুসলমান ছিলেন--একথা পূর্বেই বলেছি। গান্ধীজী এই সময় মুনলম।ন ধর্মশাস্ত্রের প্রতি আকৃষ্ট হন এবং তিনি মুসলমানদের প্রধান ধর্মগ্রন্থ কোরাণ পাঠ করেন। প্রধানত তারই প্রচেষ্টায় ত!র মকেলদের মামলা কিছুদিন পরে আপোষে নিষ্পত্তি হয়ে যায় এবং গান্ধীজী দেশে ফেরার উদ্যোগ করেন। কিন্তু

৫১ মহাত্ম। গান্ধী

এই সময় ন্তাটাল গভর্ণমেণ্ট ভারতীয়দের ভোটাধিকার ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করায় প্রবাসী ভারতীয়দের মনে ভীতির সঞ্চার হয় এবং তারা তাদের পক্ষ হয়ে আন্দোলন চালানোর জন্তে গান্ধীজীকে আরও কিছু দিন দক্ষিণ আফ্রিকায় থাকতে অন্থরোধ করে গান্ধীজী ভারতীয়দের পক্ষ হয়ে একখানি স্থন্দর দরখাস্ত লিখে দেন। শীঘ্রই এই দরখাস্ত নিয়ে হ্তাটাল ব্যবস্থা পরিষদে আলোচনা হয়। দক্ষিণ আফ্রিকায় ভারতীয়দের ' পক্ষ থেকে সরকারী কতৃপক্ষের কাছে এই বোধ হয় প্রথম দরখাস্ত এই দরখান্তের ফলে দক্ষিণ আফ্রিকাবাসী ভারতীয়দের মধ্যে প্রচুর সাড়া পড়ে পরে এই দরখাস্তে প্রায় ১০ হাজার ভারতীয়ের সই জোগাড় করে তৎকালীন ওপনিবেশিক সচিব লর্ড রিপণের কাছে পাঠানো হয় তাদের নেতৃত্ব করার জন্তে ভারতীয়-সম্প্রদায় তখন গান্ধীজীকে মোট মাইনে দিয়ে রাখতে চান তিনি রিন্ত এতে আপত্তি জানান। এই সর্তে তিনি দক্ষিণ আফ্রিকায় থাকতে রাজী হন যে ভারতীয় ব্যবসায়ী ফার্মগুলে। তাদের আইনের কাজকর্মে গান্বীজীকে নিয়োগ করবে এবং তিনি অবসর সময়ে ভারতীয় জনমত গঠন করে ভারতীয়দের সঙ্ঘবদ্ধ শক্তিশালী করে তুলবেন।

এই যে রাজনৈতিক কাজে গান্ধীজীর হাতে খড়ি হল, সেই থেকে আজ পর্যন্ত তার বিরাম নেই। ১৮৯৪ খুষ্টাব্ধের মে মাসে তিনি স্ভাটাল ভারতীয় কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠঠ করেন। দক্ষিণ আফ্রিকায় ভারতীয়দের এই সর্বপ্রথম রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান গান্ধীজী শীঘ্রই তার গভর্ণমেণ্ট- বিরোধী কার্য কলাপের জন্তে প্রসিদ্ধি অর্জন করেন। শ্বেতাঙ্গদের কাছে ভারতীয় মাত্রেরই নাম ছিল “কুলি” এবং তারা গান্ধীজীকে বলত “কুলি” ব্যারিষ্টার ১৮৯৬ থুষ্টান্ে তিনি মাস ছয়েকের গন্টে ভারতে ফেরেন। সেই সময় ভারতে তিনি সভা সমিতিতে বক্তৃতা

ভারতের মুক্তিনাধক

দিয়ে হ্তাটালে ভারতীয়দের হুরর্শার চিত্র দেশবাসীদের সামনে তুলে ধরেন এবং সম্বন্ধে একখানি পুক্তিকাও প্রচার করেন। এই মাসেই তিনি পুত্র পরিবার নিয়ে দক্ষিণ আক্রিকার উদ্দেন্তে পুনরায় রওন! হন। কিন্তু ভারতে তার কার্যকলাপের কাহিনী শ্বেতাঙগদের কানে গেছিল এবং ডারবানের শ্বেতাঙগসম্প্রদায় স্থির করেছিল যে জাহাজ থেকে গান্ধীজীকে নামতে দেওয়া হবে না। পোতাশ্রয়ে কয়েকদিন অপেক্ষার পর যদিও শেষ পর্যন্ত গান্ধীজীকে জাহাজ থেকে নামতে দেওয়া হয়েছিল, তবু তাকে শ্বেতাদের হাতে ভীষণ লাঞ্ছিত হতে হয়েছিল বুয়োর যুদ্ধের সময় গান্ধীজী ভারতীয়দের পক্ষ থেকে গভর্ণমেণ্টকে সাহায্য করেন এবং নিজের উদ্যোগে একটি ভারতীয় আ্যাম্ুল্যান্স গঠন করেন বুয়োর যুদ্ধের শেষেও কিন্তু ভারতীয়দের অবস্থার কোন উন্নতি হল না-_-ধরং বর্-বিদ্বেষ আরও বেড়ে গেল এবং ভারতীয়-বিরোধী নতুন নতুন আইন প্রণয়ন করা হল। স্তাটালে ভারতীয় জনমতের প্রচারের জন্তে গান্ধীজী “ইগ্ডিয়ান ওপিনিয়ন/» (1701277 00100)00) নামে একখানি পান্রকা প্রকাশ করেন। এর পরেও গান্ধীজী দক্ষিণ আফ্রিকায় স্থদীর্ঘ বারো বৎসর ছিলেন এই বারো বৎসর তার জীবনে শুধু সংগ্রাম কারাবরণের ইতিহাস তার সুষোগ্যা সহধমিণী কর্তুরবা গান্ধীও ভারতীয়দের পক্ষ সমর্থন করে স্বামীর সঙ্গে একাধিকবার কারাবরণ করেছিলেন। পর জীবনে ভারতের স্বাধীনতার জন্তে যে সত্যাগ্রহ, আন্দোলন প্রবর্তন করে গান্ধীজী ভারতের রাজনীতিতে যুগান্তর এনেছিলেন, তার সুত্রপাত এবং অগ্নি-পরীক্ষা হয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকাতে। দক্ষিণ আফ্রিকার ভারতীয়দের পক্ষ থেকে বিলাতে দরবার করার জন্তেও গান্ধীজী একাধিকবার ইংল্যাণ্ডে গেছিলেন। বুয়োর যুদ্ধের শেষে দক্ষিণ আফ্রিক1

৫৩ মহাত্মা! গান্ধী

যখন ব্রিটিশ ' কমন্ওয়েল্থের অধীনে স্বায়ত্বশাসন পেল, তখনও ভারতীয়- দের কোন অবস্থাস্তর হলনা। জেনারেল ম্মাটূসের দক্ষিণ আফ্রিকা গভর্ণমেণ্টের বিরুদ্ধে গান্ধীজী একাধিকবার অহিংস সংগ্রামে অবতীর্ণ হয়েছিলেন। তার এই সব সংগ্রাম খুব সাফল্য-মণ্ডিত না হলেও স্মাটস্‌ গভর্ণমেণ্ট শেষ পর্যন্ত স্বর নরম করতে বাধ্য হয়েছিলেন তখন স্থুপ্রসিদ্ধ গান্ধী-্মাটস্‌ চুক্তি সম্পাদিত হয়। এই চুক্তির ফলে সাময়িকভাবে দক্ষিণ আফ্রিকাবাসী ভারতীয়দের অবস্থার কিছুট! উন্নতি হয়। এই চুক্তি সম্পাদনের পরে পরেই গান্ধীজীর দক্ষিণ আফ্রিকার জীবন শেষ। দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ভারতীয় বিদ্বেষ আজ পর্যন্ত বিদুরিত হয় নি। এখনও স্মাটস্‌ সাহেবই দক্ষিণ আফ্রিকা গভর্ণমেন্টের কর্ণধার আছেন। তিনি শেব পর্যন্ত গান্ধী-ম্মাটস্‌ চুক্তির মর্যাদা রক্ষা করেন নি। তবে গান্ধীজীর দক্ষিণ আফ্রিকায় সত্যাগ্রহ আন্দোলনের কৃতিত্ব এইখানে যে তিনি সর্বপ্রথম প্রবাসী ভারতীয়দের মনে রাজনৈতিক সচেতনতা এনে দিয়েছিলেন_-তাদের সঙ্ঘবন্ধ করে তুলেছিলেন। সঙ্ববদ্ধভাবে ভারতীয়রা আজও ম্মাটস্‌ গভর্ণমেণ্টের বিরুদ্ধে তাদের ন্যায়সঙ্গত অধিকার সংরক্ষণের জন্তে আগ্রাণ লড়াই করে চলেছে হিন্দু মুসলমান নিরিশেষে দক্ষিণ আফ্রিকার সকল ভারতীয়ই গান্ধীজী প্রতিষ্ঠিত ভারতীয় কংগ্রেসের: সমর্থক। দক্ষিণ আফ্রিকার ভারতীয়রা এখনও সম্রদ্ধ চিন্তে গান্ধীজীর স্থার্থত্যাগ এবং নেতৃত্বের কথা স্মরণ করে।

১৯১৪ খুষ্টাবধে গান্ধীজী দক্ষিণ আফ্রিকা ত্যাগ করে ইংল্যাণ্ড রওন। হন। সেই সময় বিগত মহাযুদ্ধের আরম্ভ। ইংল্যাণ্ডে এসে তিনি একটি ভারতীয় ত্যান্ুল্যান্স গঠনে ব্যাপৃত হয়ে পড়লেন কিন্তু সহসা প্রুরিসিতে আক্রান্ত হওয়ায় ডাক্তারর! তাকে ভারতে ফিরে যাবার উপদেশ

ভারতের মুক্তিসাধক ৫৪

দিলেন। ভারতের রাজনৈতিক আন্দোলনে এইবার গান্ধীজীর কাজ স্বর হল। তিনি ১৯১৫ খুষ্টান্দে ভারতে ফিরে এলেন এবং. আহমদাবাদের নিকটে ওয়ার্ধায় সত্যাগ্রহ আশ্রম সংস্থাপন করেন কততৃরবা গান্ধী হলেন প্রথম আশ্রম-বাসিনী নারী। তিনি এসে সমগ্র ভারতে দক্ষিণ আফিকায় কুলি প্রেরণ বন্ধ করার জন্তে আন্দোলন সুরু করলেন। প্রায় এক বছর আন্দোলন চলার পরে ফল দেখা গেল। দ।ক্ষণ আফ্রিকায় ভারতীয় কুলি-প্রেরণ নিষিদ্ধ হয়ে গেল। এই সময় গান্ধীজীর জীবনে আরও তিনটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা আছে তিনি আহ মদাবাদের মিল শ্রমিকদের দাখী পূরণের জন্তে সর্বপ্রথম অনশন করেন অনশনকে গান্ধীজী সত্যাগ্রহের অন্ততম প্রধান অস্ত্র বলে মনে করেন। এর পর তিনি একাধিকবার এই অনশন করেছেন। বিহারের চম্পারণ জেলার নীলচাষীদের ছুর্দশার প্রতিকারে এবং কৈরা জেলার চাষীদের খাজন| বন্ধ আন্দোলনে গান্ধীজী সত্যাগ্রহের প্রবর্তন করেন ছুটি আন্দোলনই সাফল্য লাভ করেছিল ভারতে এই বোধ হয় সর্বপ্রথম বড় রকমের কৃষক আন্দোলন। চম্পারণ কৈরায় কষকদের মধ্যে কাজ করতে গিয়ে গান্ধীজী দরিদ্র ভারতীয় কৃষক সমাজের দুর্দশার সঙ্গে মুখোমুখী এসে দাড়ালেন মেই থেকে ভারতী কৃষকদের ছুঃখ ছুূর্দশশার প্রতিকার গান্ধীজীর জীবনের অন্ঠতম প্রধান উদ্দেশ্ত হয়ে ধ্াড়িয়েছে। তিনি নিজের জীবনের মধ্যেও ভারতীয় কৃষকের দারিদ্রকেই সাদরে বরণ করে নিয়েছেন হাটুর ওপর পর্যন্ত খদ্ধর পড়ে স্বল্প ব্যয়ে মহাত্সাজী কিরূপ অনাঁড়ন্বর জীবন যাপন করেন--সেকথা আজ বিশ্ব-বিদিত। গত মহাযুদ্ধেও গান্ধীজী নানাভাবে ব্রিটিশদের সাহাব্য করেছিলেন এবং তাঁর মনে আশা ছিল যে ভারতীয়দের যুদ্ব-প্রচেষ্টায় সত্ষ্ট হয়ে ব্রিটিশ গভর্ণমেণ্ট হয়ত তাদের অনেকটা! স্বায়ত্ত

৫৫ | মহাত্মা গান্ধী

শাসন দেবেন। বুদ্ধ-প্রচেষ্টায় সাহায্যের জন্যে গান্ধীজী বুটিশ গভর্ণমেণ্টের কাছ থেকে কাইজার-ই-হিন্দ, মেডেল পেয়েছিলেন পরে জালিয়ানালাবাগের হত্যাকাণ্ডের পরে গান্ধীজী প্রতিবাদে মেডেল ত্যাগ করেন

বুটিশ গভর্ণমেণ্টের উপর গান্ধীজী যে আশা স্থাপন করেছিলেন সে আশা ভাঙতে বেশী দেরী হল না। শীঘ্রই রাউলাট অ্যাক্টের প্রতিবাদে সমগ্র ব্রিটিশ ভাঁরত মুখর হয়ে উঠল। ইতিপূর্বে তুরস্কের সমর্থনে আলি ভ্রাতৃদ্ধয়ের নেতৃত্বে ভারতীয় মুসলমাঁনর্দের খিলাফৎ আন্দোলন সুরু হয়েছিল। গান্ধীজী নিজেও খিলাফৎ আন্দোলনে সাহাধ্য করেছিলেন এবং ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে মুসলমানদের সাহাধ্য লাভের জন্টে আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলেন হিন্দু মুসলমান এক্য মৈত্রী স্থাপন গান্ধীজীবু জীবনের অন্তম আদর্শ ক্প্র। এই সময় তিনি আলি ভ্রাতৃদ্বয়ের সঙ্গে হিন্দু মুসলমানের একটা! বোঝাপড়া প্রায় করে এনেছিলেন কিন্তু ছুঃখের বিষয় সেটা স্থায়ী হয় নি। তবে গান্ধীজীর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে অনেক মুসলমান গান্ধীজীর ভক্ত হয়েছিলেন এবং কংগ্রেসের মুসলমান সমর্থকও অনেক বেড়ে গেছিল। গান্ধীজী এই সময় “ইয়ং ইগ্ডিয়!” নামক পত্রিকা. প্রকাশ করেন এবং তার মারফৎ নিজের রাজনৈতিক মতামত সাঁধারণ্যে প্রচার করতে থাকেন। ভারতীয় মুসলমানরা আলি ভ্রাতৃদ্ধযের নেতৃত্বে খিলাফৎ আন্দোলন সুরু করেছিল এবং তার পিছনে গান্ধীজীর সন্ত্রির় সমর্থন ছিল। তখনও খিলাফৎ আন্দোলন চলেছে দেশব্যাপী রাউলাট আইনের প্রতিবাঁদে হুরতাঁল হল পাঞ্জাবে গভর্ণমেণ্ট কঠোর হস্তে এই আন্দোলন দমন করলেন অমুত- সরের জালিয়ানওয়ালাবাগে পুলিশ জনতার উপরে গুলি চালাল। সমগ্র পাঞ্জাবে সামরিক আইন জারী হল। সমগ্র ভারতবর্ষ এই অন্তায়

ভারতের মুক্তিসাধক ৫৬

অত্যাচারের প্রতিবাদে মুখর হয়ে উঠল। সম্বন্ধে তদন্তের জন্যে একটি সরকারী তদন্ত কমিটি নিযুক্ত হয়েছিল, কিন্তু ভারতের জাতীয় কংগ্রেস তার সঙ্গে সহযোগিত! করে নি। জাতীয় কংগ্রেসের উদ্যোগে গান্ধীজীর সভাপতিত্বে একটি ভিন্ন তদস্ত কমিটি নিয়োজিত হয়েছিল। এই কংগ্রেস তদস্তকমিটির বর্ণনাই দেশবাসীর! গ্রহণ করেছিল এই সব ঘটনার ফলে গান্ধীজী ক্রমশ ব্রিটিশদের স্যায়পরতা এবং সততার উপর বিশ্বাস হারিয়ে ফেললেন অবশেষে মণ্ট্যাগ্ু-চেম্সফোর্ড শাসন-সংস্কারের ফলে ভারতে যে মব নতুন আইনসভা স্থাপিত হ'ল, সেগুলোতে দেশপ্রেমিক দেশ- বাসীদের প্রবেশ বন্ধ করবেন বলে গান্ধীজী মনস্থ করলেন। তিনি গতর্ণমেণ্টের সঙ্গে সর্বপ্রকার অসহযোগের নির্দেশ দিয়ে অহিংস অসহযোগ আন্দোলনের প্রবর্তন করলেন। ভারতীয় কংগ্রেসের ১৯২৭ খৃষ্টানদের কলিকাতার বিশেষ অধিবেশনে গান্ধীজীর কর্মপদ্ধতি গৃহীত হল। এই যে

গ্রেসের সঙ্গে গান্ধীজীর যোগাযোগ স্থাপিত হ'ল” সুদীর্ঘ ২৪ বৎসর পরে মে যোগাযোগ অ!জও্ অটুট আছে। গান্ধীজী এসে কংগ্রেসের বাঁজ- নীতির মোড় ফিরিয়ে দিলেন। ভারতীয় কংগ্রেস এতদিন পর্যন্ত শুধু ব্রিটিশ গভর্ণমেণ্টের কাছে আবেদন নিবেদন নিয়েই ব্যস্ত ছিল। গান্ধীজী কংগ্রেসকে গভর্ণমেণ্টের বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষ সংগ্রামে নামালেন। তাছাড়া তার স্থবিশাল ব্যক্তিত্ব নেতৃত্বের প্রভাবে ভারতীয় জনসাধারণের সাথে- নির্যাতিত নিপীড়িত কৃষক মজছুরদের সঙ্গে কংগ্রেসের যোগা- যোগ সংস্থাপিত হল। ভারতীয় কংগ্রেস হল ভারতীয় জনমতের সত্যিকার প্রতীক। স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে গান্ধীজীর নেতৃত্বে

ংগ্রেসের জয়যাত্রা! স্থরু হল। গান্ধীজীর অসহযোগ আন্দোলনে হিন্দুমুসলমান নিবিশেষে সবাই এসে যোগ দিল--দলে দলে লোক কারাবরণ করল, দেশব্যাপী ধর্মঘট হল। গান্ধীজী দেশব্যাপী বিদেশী

৫৭ মহাত্মা! গান্ধী

বস্ত্র বর্জন করে শ্বদেশী খদার পরিধানের আন্দোলনও সুরু করলেন। দেশবাসীদের স্বদেশ-গ্রীতি জাগানোর জন্তে প্রকাশ্তে বিদেশী বন্ত্রে অগ্রি- সংযোগ করা হ'ল। কিন্তু আন্দোলন শেষ পর্যন্ত সার্থক হল না। তিনি যে অহিংস উপায়ে গভর্ণমেণ্টকে নিক্ষিন করে দেবার পরিকল্পন! করেছিলেন, সে পরিকল্পনা সাঁফল্য-মগ্ডিত হল না। অনেক স্থানে হিংসার প্রকাশ দেখা গেল-_দাঙ্গ৷ হাঙ্গামা হল। অহিংস আন্দোলনের ব্যর্থতায় হতাশ হয়ে তিনি আন্দোলন প্রত্যাহার করলেন এবং সবরমতী আশ্রমে ফিরে গেলেন ১৯২২ খুষ্টাব্দে তাকে গ্রেপ্তার করা হুল এবং রাজদ্রোহের অভিযোগে তার ছয় বৎসর সশ্রম কারাদণ্ড হল। বিচারের নময় গান্ধীজী আত্মপক্ষ সমর্থনে সত্যাগ্রহ আন্দোলনের আসল উদ্দেশ্য বর্ণনা করে একটি স্থৃদীর্ঘ এবং উল্লেখযোগ্য বক্তৃতা করেছিলেন কার্যত গান্ধীজীকে ছুবংসরের বেশী কারাদণ্ড ভোগ করতে হয় নি। পুণার যারবেদা জেলে থাকার সময় তিনি আযপেগ্ডিসাইটিস্‌ রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েন; পরে পুণা হাসপাতালে তার উপর অস্ত্রোপচার করা হয়। এর পর তাঁকে বিনা সর্তে মুক্তি দেওয়! হয়। এই সময় দেশে হিন্দু মুসলমানদের ক্রমবর্ধমান বিরোধের সুচনা দেখে গান্ধীজী মর্মাহত হন এবং এর প্রতিবাদে অন্থস্থ শরীরেই দিলীতে অনশন সরু করেন। ১৯২৪ খষ্টাব্বে গান্ধীজী সর্বসম্মতিক্রমে বেলগী'ও কংগ্রেস অধিবেশনের সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯২০ খুষ্টান্দের পর থেকে ভারতীয় কংগ্রেস কার্যত গান্ধীজীর নীতি এবং নেতৃত্বই মেনে চলেছে ঠিনি কিন্তু এই একবারের বেশী কংগ্রেসের সভাপতি পদে বসেন নি।

অসহযোগ আন্দোলনের সময় গান্ধীজীর “ইয়ং ইণ্ডিয়া” পত্রিকা বন্ধ হয়ে যায়। পরে তিনি “হরিজন” নামে একখানি সাপ্তাহিক পত্রিকা প্রকাশ করেন। গান্ধীজী কর্তৃক “হরিজন” নামে অভিহিত

ভারতের মুক্তিসাধক

অন্থন্নত হিন্দু সম্প্রদায়ের উন্নতি এই পত্রিকাখানির মুখ্য উদ্দেশ্ত হলেও) পত্রিকাখানি গান্ধীজীর রাজনৈতিক মতামতেরও মুখপত্র ছিল | ১৯৪২ খুষ্টাব্ধের অগাষ্ট আন্দোলনের সময় গান্বীজীর গ্রেপ্তারের পর “হরিজনের” প্রকাশও বন্ধ হয়ে যায়। অসহযোগ আন্দোলনের পর গান্ধীজী চুপচাপ বসে ছিলেন না। তিনি নানারপ গঠনমূলক কার্ষধে আত্মনিয়োগ করেছিলেন; তার মধ্যে চরকা . আন্দোলন, অস্পৃশ্তত৷ নিবারণ আন্দোলন এবং পল্লী উন্নয়ন আন্দোলন বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য গান্ধীজী তার জীবনের দ্বিতীয় আন্দোলন সুরু করেন ১৯৩০ খুষ্টাব্ে। এই আন্দৌোলনই আইন অমান্য আন্দোলন নামে গ্রসিদ্ধ। গভর্ণমেন্টের লবণ-তৈরী আইন ভঙ্গ করে তিনি এই আন্দোলন স্থুরু করেন। গান্ধীজী ১২ই মার্চ তারিখে আশ্রম থেকে একদল শিষ্যসহ সমুদ্রতীরের উদ্দেশ্তে বওন| হন তারা পায়ে হেঁটে একমাসে সমুদ্রতীরবর্তী দণ্ডীতে উপস্থিত হয়েছিলেন পথে গ্রামে গ্রামে গান্ধীজী গ্রামবাসীদের অসহযোগ আইন অমান্ত আন্দোলনে যোগদানের জন্যে অনুরোধ জানিয়েছিলেন লবণ তৈরী গভর্ণমেণ্টের একচেটিয়া অধিকার দণ্ডীতে লবণ তৈরী করে গভর্ণমেণ্টের আইন ভঙ্গ করায় তিনি গভর্ণমেণ্টের কোপদৃষ্টিতে পড়েন এবং বিনা বিচারে সরকারী আটকবন্দী হন। সারা! দেশে আইন অমান্তের হিড়িক পড়ে ষায়--দলে দলে স্বদেশপ্রেমিকরা কারাবরণ করেন গভর্ণমেণ্টও কঠোর হস্তে দমনমূলক আইন প্রয়োগ করেন। এই যখন অবস্থা তখন বিলাতের বড়কর্তারা মনে করলেন যে ভারতকে আরও কিছু শাসন- তান্ত্রিক অধিকার ন! দিলে চলে না বিলাতে সম্বন্ধে গোল টেবিল বৈঠকের ব্যবস্থা হয়েছিল কংগ্রেস প্রথমে বৈঠকে যোগ দিতে সম্মত হয় নি। পরে ১৯৩১ এর মার্চ মাসে তৎকালীন বড়লাট লর্ড

৫৯ মহাত্সা! গান্ধী

আরউইনের সঙ্গে গান্ধীজীর গান্ধী-আরউইন চুক্তি হয়। এই চুক্তির ফলে গান্ধীজী আইন -অমান্ত আন্দোলন প্রত্যাহার করতে সম্মত হন এবং বড়লাটও দেশের বুক থেকে সমস্ত দমনমূলক ব্যবস্থা তুলে নিতে রাজী হন। কংগ্রেসের একমাত্র মুখপানত্ররূপে গান্ধীজী বিলাতের দ্বিতীয় গোল টেবিল বৈঠকে যোগ দেন। কিন্তু তার যোগদানে ফল হয় নি। ১৯৩২ খুষ্টান্দে তিনি ভারতে ফিরে দেখেন যে লর্ড আরউইনের পরবর্তী বড়লাট লর্ড উইলিংডন গান্ধী-আরউইন চুক্তি ভঙ্গ করেছেন এবং দমনমূলক আইন স্থষ্টি করে অনেক কংগ্রেস নেতাকে পুনরায় কারাগারে প্রেরণ করেছেন। সময় গান্ধীজীর স্ত্রী কম্তুরবা গান্ধীও বারকয়েক কারারদ্ধা হন। অবস্থায় গান্ধীজী পুনরায় আইন অমান্ত আন্দোলন প্রবতনের সিদ্ধান্ত করায় ধৃত এবং কারারুদ্ধ হন। তাকে পুনরায় অনির্দিষ্ট কালের জন্তে যারবেদা কারাগারে রাখা হয় ভারতীয় শাসন-সংস্কারে এই সময় ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ম্যাকডোনান্ডের সাম্প্রদায়িক রোয়েদাদের কথা ঘোষিত হয়। এই রোয়েদাদে অনুন্নত শ্রেণীর হিন্দুদের হিন্দুসমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ধরা হয়েছে। এই অন্ঠায়ের প্রতিবাদে গান্ধীজী কারাগারেই আমরণ অনশন স্থুকু করেন তখন বর্ণহিন্দু অন্রন্নত সম্প্রদায়ের নেতার! সম্মিলিত হয়ে পুণা চুক্তি সম্পাদন করেন এবং ব্রিটিশ গভর্ণমেণ্ট সে চুক্তি মেনে নেওয়ায় গান্ধীজী অনশন ত্যাগ করেন। এর কিছুদিন পরেই গাঞ্ধীজী মুক্তি পান। আইন অগান্য আন্দোলন তখন শেষ হয়ে গেছে গান্ধীজী তখন কংগ্রেস থেকে দূরে সরে গিয়ে তাঁর প্রিয় সংগঠনমূলক কাজে আত্মনিয়োগ করেন।

১৯৩৭ খৃষ্টাব্দে নতুন ভারত শ!সনতন্ত্র কার্ধকরী হলে বেশীর ভাগ প্রদেশেই কংগ্রেস গভর্ণমেণ্ট স্থাপিত হয়। কিন্তু কংগ্রেসের সঙ্গে গভর্ণমেণ্টের প্রথম বিরোধ বাধে ১৯৩৯ খৃষ্টাব্দে জার্সাণীর যুদ্ধ-

ভারতের মুক্তিসাধক

ঘোষণার পর। কংগ্রেল তখন ব্রিটিশদের যুদ্ধের উদ্দেশ্য জানতে চায় এবং ভারতকে কবে স্বাধীনতা দেওয়। হবে সে সম্বন্ধে সুস্পষ্ট ঘোষণাবাণী শুনতে চায়। গভর্ণমেণ্ট প্রস্তাবে সম্মত না হওয়ায় বিভিন্ন প্রাদেশিক কংগ্রেন মন্ত্রিমগুলী একযোগে পদত্যাগ করে। ফলে সমগ্র দেশে রাজনৈতিক অচল অবস্থার হষ্টি হয়। ব্রিটিশ গভর্ণমেন্টের পক্ষ থেকে অনেকভাবে কংগ্রেসকে দলে টানার চেষ্টা হয়, কিন্তু ফল হয় না। কংগ্রেসের একমাত্র দাবী £ ভারত শাসনে আমাদের প্ররুত অধিকার দাও, ভারতে জাতীয় গভর্ণমেপ্ট স্থাপন কর, তবেই আমর! ব্রিটিশ যুদ্ধ প্রচেষ্টায় সাহায্য করব_ নচেৎ নয়। এমনই ভাবে ছুবৎসর কেটে যায়। ১৯৪১ খ্বষ্টাব্ের ডিসেম্বর মাসে জাপান হঠাৎ যুদ্ধ ঘোষণা! করে বসে এবং দেখতে দেখতে ১৯৪২ খৃষ্টানদের মার্চ মাসের মধ্যে সিঙ্গাপুর, মালয় এবং সমগ্র ব্রহ্দদেশ দখল করে বসে। ব্রিটিশ গভর্ণমেন্ট সহস! ভারতের দাবী সম্বন্ধে সচেতন হয়ে স্তার স্টাফোর্ড ক্রিপসের মারফৎ এপ্রিল মাসে ভারতের শাসনতান্ত্রিক সংস্কারের প্রস্তাব পাঠান। কিন্তু যুদ্ধকালে ভারতে প্রকৃত জাতীয় গতর্ণমেণ্ট স্থাপনের কোন ব্যবস্থা আলোচ্য প্রস্তাবে না থাকায়, কংগ্রেস, মুসলীম লীগ প্রভৃতি ভারতের সমস্ত রাজনৈতিক দলই ক্রিপস প্রস্তাব নাকচ করে দেয়। ভগ্র মনোরথ স্তার স্টাফোর্ড ক্রিপ্‌ন্‌ দেশে ফিরে যান। ক্রিপ্‌স্‌ প্রস্তাবের ব্যর্থতার পর কংগ্রেস আবার নতুন করে স্বাধীনতার আন্দোলন স্থরু করার সঙ্কল্প করে এবং জাতির এই সম্কট-মুহতে আবার আন্দোলন পরিচালনার পূর্ণ কতৃত্ব গান্ধীজীর উপর দেয় হয়। ১৯৪২ খুষ্টান্বের ৮ই আগষ্ট বোম্বাইতে নিখিল ভারত কংগ্রেস কমিটির অধিবেশনে আন্দোলনের সপক্ষে প্রস্তাব গৃহীত হয়। কিন্তু আন্দোলন স্থুর হবার আগেই ৯ই

৬১. মহাত্মা গান্ধী

আগষ্ট প্রাতঃকালে মাত! গান্ধী, মৌলানা আজাদ, জওহরলাল নেহেরু প্রভৃতি নেতৃবৃন্দ ধরা পড়েন। সেইদিন সন্ধ্যাকালে গান্ধীভীর পর্ধী কন্তুরবাও ধর! পড়েন। ্বামীর সঙ্গে তাকে পুণার আগা থা প্রাসাদে আটক রাখা হয়। নেতৃবৃন্দের গ্রেপ্তারের সংবাদে সমগ্র দেশব্যাপী বিরাট চাঞ্চল্য উত্তেজনার সঞ্চার হয়। দেশব্যাপী বিশৃঙ্খলার পুলিশের সঙ্গে জনতার অনেক সংঘর্ষ হয়। সারা দেশব্যাপী ধরপাকড় চলে এবং সরকারী দমনমূলক ব্যবস্থা অবলম্িত হয়। আগা খা প্রাসাদে ১৯৪৩ খুষ্টাব্ের ফেব্রুয়ারী মাসে গান্ধীজী ২১ দিন ব্যাপী অনশন পালন করেন। সমস্ত দেশব্যাপী গান্ধীজীর মুক্তির জন্তে আন্দোলন চলে__কিন্তু গভর্ণমেণ্ট অটল ছিলেন। এই সালেই গান্ধীজী তার প্রিয় সেক্েেটারী মহাদেব দেশাইকে হারান ১৯৪৪ খৃষ্টানদের ২২শে ফেব্রুয়ারী গান্ধীজী তাঁর জীবনের দারুণতম শোক পান। এই দিন আগা খ| প্রাসাদে হৃদরোগের আক্রমণে বন্দিনী কল্তুরবা গান্ধী ৭৫ বয়সে দেহত্যাগ করেন। সুদীর্ঘ ৬১ বৎসর ধরে যিনি গান্ধীজীর সঙ্গিণী ছিলেন, যিনি আজীবন তাঁকে কর্মে প্রেরণা দিয়ে এসেছেন_-শুধু তাই নয়, স্বামীর সঙ্গে ছায়ার মত থেকে যিনি দেশের জন্যে দশের জন্যে সমস্ত দুঃখ নির্যাতন হাসিমুখে সহ করেছেন, সেই নারী-রত্বকে হারিয়ে মহাঁত্া! গান্ধী যে শোকাভি- ভূত হয়ে পড়বেন এটা খুবই স্বাভাবিক শুধু ভারতবর্ষ নয়-_ সমগ্র জগত থেকে গ্ান্ধীজী তার এই শোকে সান্তবনা-বাণী পেয়েছিলেন। কারাগারে গান্ধীজীর নিজের স্বাস্থ্যও ভাল ছিল না। তার উপর এই মানসিক আঘাত এই ঘটনার মাস তিনেক পরে ব্রিটিশ গভর্ণমেণ্ট সহস। গান্ধীজীকে বিনা সরতে মুক্তি দেন। মুক্তি পাবার পরেই গান্ধীজী হিন্দু মুসলমান মিলনের জন্তে পরম উৎসাহে

ভারতের মুক্তিসাধক ৬২

ব্রতী হন। হিন্দু মুসলমান মিলন তাঁর আজীবনের স্বপ্র সাধন!। তাই বোম্বাইতে যখন অক্টোবর মাসে গান্ধীজী এবং জিন্াা সাহেবের মধ্যে উনিশ দিনব্যাপী আলোচনার স্ুত্রপাত হয়, তখন অনেকেই আশ! করেছিল যে এবার বোধ হয় কংগ্রেস-মুমলিম লীগ মিলন হবে। কংগ্রেস-মুসলিম লীগের বিরোধ দেখিয়ে ব্রিটিশ গভর্ণমেণ্ট ভারতের স্বাধীনতার দাবীকে উপেক্ষা করে থাকেন। প্রধানত গান্ধীজীর আগ্রহে এবং উদ্ভোগেই গান্ধী-জিন্ন! সাক্ষাৎকার হয়। কিন্ত জিন্না সাহেবের অযৌক্তিক এবং অন্তাঁয় দাবীর জন্তে শেষ পর্যন্ত অলোঁচনা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। তবু আশাবাদী মহাত্সাজী কিন্তু হিন্দু মুসলমান মিলন সম্বন্ধে হতাশ হন নি। বিগত ২রা অক্টোবর গান্ধীজী ৭৫ বৎসর পার হয়ে ৭৬ বৎসরে পদার্পণ করেছেন। উপলক্ষে সমগ্র জাতি তাকে অভিনন্দন জানিয়েছে গান্ধীজী ব্মানে আবার কংগ্রেসের গঠনমূলক কার্ধে আত্মনিয়োগ করেছেন। কংগ্রেসের প্রাণম্ব্ূপ যেসব নেতা--তার আজও কারাপ্রাচীরের অন্তরালে |

গান্ধীজীর মত পুত্রকে বুকে ধরে ভারতজননী গৌরবান্বিতা। তিনি শুধু পরাধীন ভারতে স্বাধীনতার পথপ্রদর্শক নন) এই অহিংসার খষি হিংসাঁজর্জরিত বতমান পৃথিবীরও শিক্ষাণ্তরু। তাঁই পৃথিবীবাঁসীর! তাকে জগতের অন্ঠতম শ্রেষ্ঠ মহামানব বলে শ্বীকার করতে বাধ্য হয়েছে। তিনি আরও দীর্ঘাঘু লাভ করে ভারতের স্বাধীনতা লাভ স্বচক্ষে দেখে যান__-এই আমাদের একমাত্র কামনা

মৌলানা আজাদ | দেশপ্রিয় ফীন্দ্রমোহন

জওহরলাল নেহেরু

রাষ্ট্রপতি স্বভাষচন্ত্র

দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ

বাংল৷ দেশে আজ পর্যস্ত দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জনের মত জনপ্রিয় নেতার আবির্ভাব হয় নি--এ কথা বললে বোধ হয় অত্যুক্তি হবে না তার মৃত্যুর পরে প্রায় বিশ বৎসর অতীত হতে চল্ল-_কিস্তু এখন পর্যস্ত তার জনপ্রিয়ত! আদৌ হাস পায় নি। অপরিসীম আত্মত্যাগ এবং একাস্তিক দেশপ্রীতির গুণে তিনি বাঙালী জাতির মনে যে প্রেম শ্রদ্ধার আসন দখল করেছিলেন, তার মৃত্যুতে শূন্ সে আসন আর কোন বাউণলী নেতা কোনদিন দখল করতে পারবেন কিনা সন্দেহ ১৮৭০ খুষ্টাব্দের ৫ই নভেম্বর কলিকাতায় দেশবন্ধুর জন্ম হয়। তার পিতার নাম ভুবনমোহন দাশ এবং মায়ের নাম নিস্তারিণী দেবী দাশ পরিবার বাংলা দেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ শিক্ষিত এবং সংস্কতিবান পরিবার ছিলেন। তারা ব্রদ্গ- ধর্মমতাবলম্বী ছিলেন। ভূবনমোহন আইন-ব্যবসাক্ী হলেও অবসর সময়ে সাংবাদিকতার চর্চা করতেন এবং গাঁন লিখতেন পরে চিত্তরঞ্জনের নিজের চরিত্রেও ছুটি গুণের বিকাঁশ দেখা গেছিল তিনি কঠোর রাজনৈতিক জীবনের ফাকে ফাঁকে সাংবাদিকতার চা করতেন এবং কবিতাও লিখতেন। একথা নিঃসঙ্কোচে বলা চলে যে দেঁশবন্ধুর রাজনৈতিক জীবনে কবিপ্রাণের স্থনিবিড় স্পর্শ ছিল।

চিত্তরঞ্জন কলিকাতার লগুন মিশনারী স্কুল থেকে ম্যাটি.ক পাশ করে প্রেসিডেন্সী কলেজে ভত্তি হন। সেখান থেকে ১৮৯০ খবষ্টাবে তিনি বি-এ পাশ করেন এর কিছু পরেই তিনি আইন পড়ার জন্তে এবং আই-সি-এস্‌ পরীক্ষা দেবার জন্যে ইংল্যাণ্ড যান। ১৮৯১ খুষ্টাব্ে তিনি সিভিল সাঁভিস পরীক্ষা দেন কিন্তু কৃতকার্য হতে পারেন না। ১৮৯২

ভারতের মুক্তিসাধক ৬৪

ধৃষ্টাবেতিনি মিডল্‌ টেম্পল্‌ থেকে ব্যারিষ্টারী পাশ করেন। ইংল্যান্ডে থাকার সময় তিনি কয়েকটি রাজনৈতিক বক্তৃতা দিয়েছিলেন-_বিশেষত পার্লামেন্টের নির্বাচনে প্রথম ভারতীয় প্রতিযোগী দাদাভাই নৌরজীর সমর্থনে তার বক্তৃতা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য ১৮৯৩ খুষ্টাব্ধে কলিকাতায় ফিরে তিনি কলিকাতা! হাইকোর্টে ব্যারিষ্টারী সুরু করেন_ কিন্তু কয়েক- বছর তার পশার জমে না। কিছুকাল তাকে দারুণ অর্থাভাবের মধ্য দিয়েও কাটাতে হয়। ক্ষীণ-স্বাস্থ্য ভুবনমোহন কয়েকটি খণ করেছিলেন তার উপর তিনি আবার এক বন্ধুর জন্তে বহু টাকার জামিন হয়েছিলেন। ব্যাপারে চিত্তরঞ্জনও পিতার সঙ্গে সমান দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন। পরে তার এই পিতৃ-বন্ধু জামিনের সর্ত পালন করতে অসমর্থ হওয়ায় ভূবনমোহুন এবং চিত্তরঞ্জন উভয়েই আথিক সংকটের সম্মুখীন হয়ে ১৯০৬ খষ্টান্বে নিজেদের দেউলিয়া বলে ঘোষণা করতে বাধ্য হয়েছিলেন। চিত্তরঞ্জন যে কত বড় সাধুপ্রকৃতির লোক ছিলেন তার প্রমান পাওয়া যায় বখন দেখি যে আথিক সামর্থ অর্জন করার পর তিনি পাই পয়সাটি পস্ত এখণ শোধ করে দেন। অথচ তথন খণ শোধ না! করলে আইনের চোখে তিনি আদৌ দোষী হতেন না। পৃথিবীর অন্ত কোন দেশে আর কোন লোকের চরিত্রে এরূপ উদারতা, সাধুতা এবং সদাশয়তার সন্ধান মেলে না। তার এই সাধুতায় দেশবাসীরা মুগ্ধ হয়ে মুক্ত কণ্ঠে তীর প্রশংসা করেছিল

১৮৯৩ থেকে ১৪৯০৬ খষ্টাব্বের মধ্যে তাঁর জীবনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা হচ্ছে--বাসন্তী দেবীর সঙ্গে তার বিবাহ এবং “মালঞ্চ” “মালা” নামে তার দুখানি কাব্য-গ্রন্থের প্রকাশ। এইখানে চিত্তরঞ্জনের কবি-প্রতিভা এবং তার সংবাদিকতা-শক্তির উল্লেখ করা প্রয়োজন তার ছুটি শর্তির আলোচনা ছাড়া দেশবন্ধুর জীবনী সম্পূর্ণ হতে পারে না।

৬৫ দেশবদ্ধু চিত্তরঞ্জন দাঁশ

রাজনৈতিক নেত! এবং আইন-ব্যবসায়ী হিসাবে তাঁর যে সুনাম ছিল তার আড়ালে চিত্তরঞ্জনের কবি-প্রসিন্ধি চাপা পড়ে গেছে কবিতা রচন! চিত্তরঞ্রনের নেশা ছিল; তিনি কখনও একে পেশ! হিসাবে বিবেচনা করতেন না। তাঁর রচিত কোন কোন কবিতা যে বাংল৷ সাহিত্যে স্থায়ী আসন লাভ করবে-_সে বিষয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই। তার মধ্যে খুব উচু দরের মৌলিক কবি-প্রতিভ! না থাকলেও, তার মধ্যে প্রকৃত শিল্পী-সুলভ উদারতা, আন্তরিকতা এবং একনিষ্ঠ ছিল। তার কবিতায় গন্ভীর চিন্কাশীলতা এবং নিবিড় হ্ৃদয়াবেগের সংমিশ্রণ দেখা যায়। তার কবিতার বিষয়-বস্ত সব সময়ই গুরু গন্তীর--ভগবান, মানব-জীবন, প্রেম জীবন সম্বন্ধে প্রশ্ন তার কাব্যে ওতপ্রোতভাবে বিজড়িত। তীর হৃদয়াবেগের উষ্ণতায় এই সব প্রশ্ন মূর্ত হয়ে দেখা দেয়। তাঁর কবিতার মধ্যে তার আধ্যাত্মিক ভ্রমবিকাশের ইতিহাস সন্নিব্ধআছে বলা চলে। কিভাবে তাঁর মন থেকে ব্রাহ্ম সমাজের সঙ্কীর্ণ সাম্প্রদায়িক আদর্শ বিদুরিত হয়ে পাশ্চাত্য শিক্ষার ফলে বুদ্ধিবৃত্তি, নাস্তিকতা! এবং আত্মপরতা দেখা দিয়েছিল-_তার প্রথম জীবনে রচিত কাব্যের মধ্যে সে কাহিনী আছে। তার পরজীবন রচিত কাব্যের মধ্যে আমরা দেখি বৈষ্ণব আদর্শের গভীর প্রভাব। রাজনীতি এবং সাহিত্য--এই উভগ্ন ক্ষেত্রেই চিত্তরঞ্জন বিদেশী -প্রভাব কাটিয়ে উঠে স্বাদেশিকতার দিকে ধীরে ধীরে মোড় ফিরেছিলেন। তার অশাস্ত আত্মা শেষ পর্যস্ত এসে বৈষ্ণববাদের প্রেম, প্রীতি ভক্তির মধ্যে আশ্রয় খুঁজে পেয়েছিল চিত্তরঞ্জন দেশের নাঁড়ীর সন্ধান পেয়ে দেশবাসীদের সঙ্গে গভীর সংষোগ স্থাপন করতে পেরেছিলেন তর প্রথম জীবনের কাব্য-গ্রস্থ “মালঞ্চে'র মধ্যে ভগবানের বিরুদ্ধে যে বিদ্রোহ দেখ! গিয়েছিল--তা পরে শান্ত হয়ে এসেছিল। তার পরের কাব্য-গ্রন্থ

ভারতের মুক্তিনাধক ৯৬

“কিশোর কিশোরী” অন্তর্যামী” প্রভৃতির মধ্যে আমরা দেখি শীস্ত সমাহিত বৈষ্ণব প্রেম প্রীতি। এর শ্রেষ্ঠ এবং সুমহান রূপ দেখা যায় "সাগর-সঙ্গীতে”র কবিতাঁবলীতে। “সাগরে*র মধ্যে যেমন একই যোগে তরঙ্গসম্কুলতা এবং প্রশান্তি দেখা যায়,__কবির মনেও তেমনই আছে চাঞ্চল্য আর প্রশাস্তি। “সাগর-সঙ্গীতে'র অনেক কবিতাই বাংলা সাহিত্যে স্থায়ী আমন পাবে বলে আশা কর! যায়।

দেশের সমস্ত সাহিত্য আন্দোলন এবং সাহিত্য প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চি্তরঞ্জনের গভীর সংযোগ ছিল। তিনি ১৯১৫ খৃষ্টাব্দে বঙ্গীয় সাহিত্য সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেছিলেন বাংলার গীতি কবিত৷ সম্বন্ধে তিনি যে সভাপতির অভিভাষণ পাঠ করেছিলেন তা৷ খুবই মনোজ্ঞ এবং চিন্তাশীল হয়েছিল। তিনি সংবার্দিকতার প্রতিও যথে্&ই মনোনিবেশ করতেন এবং ১৯০৬ থুষ্টাবে প্রতিষ্ঠিত ইংরেজী দৈনিক "বন্দেমাতরমে'র তিনি ছিলেন অন্ততম প্রতিষ্ঠাতা এবং সম্পাদক সঙ্ঘের অন্ততম সদস্তয | ংবাদিকতার ক্ষেত্রে তার সব চৈয়ে বড় কীতি হচ্ছে “ফরওয়ার্ড 'নারায়ণে'র প্রতিষ্ঠা সম্পাদনা ইংরেজী দৈনিক “ফরওয়ার্ড ছিল বাংলার স্বরাজ্য দলের মুখপত্র--আর “নারায়ণ ছিল বাংলা! মাসিক পত্র। “ফরওয়ার্ড বেশ কয়েক বছর ধরে গৌরবের সঙ্গে চলেছিল পরে স্বরাজ্য দলের মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে “ফরওয়ার্ডেরও জনপ্রিয়তা গেছিল কমে কিন্তু চিন্তরঞ্জনের জীবিতকালে “ফরওয়ার্ড ছিল অন্ঠতম জনপ্রিয় ইংরেজী দৈনিক। সাহিত্যরসপিপাঙ্গু চিত্তরঞ্জন কিন্তু ইংরেজী দৈনিক সম্পাদনা করেই জস্তষ্ট থাকতে পারেন নি। তাই তিনি সাহিত্য-মাসিক 'নারায়ণ' প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ছুঃখের বিষয় শেষ পর্যন্ত এই বাংলা মানিকখানির অকাল মৃত্যু হয়।

আইনজীবী হিসাবে চিত্তরঞ্জন প্রথম প্রসিদ্ধি লাভ করেন ১৯০৮

৬৭. | দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ

খৃষ্টাব্দে শ্রীঅরবিন্দ ঘোষের (অধুনাখ্যাত শ্রীঅরবিন্দ) মামলায়। ১৯০৫ থুষ্টার্যে বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সারা বাংল! দেশে জাতীয়তাবাদী আন্দোলন এবং বৈপ্লবিক কার্ধকলাপ সুরু হয়। আন্দোলন দমনের জন্তে গভর্ণমেণ্ট অস্বাভাবিক ব্যবস্থা অবলম্বন করেন। অরবিন্দ ঘোষ ছিলেন সে সময়ের শ্রেষ্ঠ জাতীয়তাবাদী পত্রিক। “বন্দে মাতরমে'র সম্পাদক রাজদ্রোহের অপরাধে কলিকাতার প্রধান প্রেসিডেন্সি ম্যাজিষ্্রেটের কোর্টে তার বিচার হয়। চিত্তরঞ্জন ছিলেন অরবিন্দ ঘোষের পক্ষের ব্যারিষ্টার। তার অপুর্ব আইন-জ্ঞান এবং বাক্-চাতুর্ধে তিনি এই সময় দেশবাসীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। কিন্ত এইবছরের মানিকতল! বোমার মামলায় চিত্তরঞ্জন সমগ্র দেশের হৃদয় জয় করেন। মানিকতলা বোমার মামলা ভারতের রাজনৈতিক বিচারের ইতিহাসে অন্ততম চমকপ্রদ ঘটনা মজঃফরপুরে একটা বোমা ছুর্ঘটনার ফলে পুলিশ অনুসন্ধান করে কলিকাতার মানিকতলায় একটি বোমার কারখান। আবিষ্কার করে। ৩৬ জন বাঙালী যুবককে সম্রাটের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র এবং যুদ্ধ ঘে'ষণার অপরাধে অভিযুক্ত করা হয়। অরবিন্দ ঘোষের ভ্রাতা বারীন্দ্র ঘোষ সন্ত্রাসবাদী দলের অন্ততম নেতা ছিলেন বলে, তাকেও বিচারার্৫ধে উপস্থিত করা হয়। অনেকদিন এই মামলা চলেছিল; দুইশর চেয়েও বেশী সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছিল, প্রায় চার হাজারের মত দলিল দস্তাবেজ হাজির করা হয়েছিল এবং বোমা, পিস্তল প্রভৃতি ৫০০ গ্রকারের যন্ত্রাদি প্রদশিত হয়েছিল। কার্ধত এক পয়সা না নিয়েই চিত্তরঞ্জন আসামীদের পক্ষে এই মামল! পরিচালন! করে নিজের আইন-জ্ঞান এবং তর্কশক্তির প্রমাণ দিয়েছিলেন এই মামলার আসামীদের কার্ধকলাপ যতই আপত্তিকর হোক, জাতীয়তাবাদী দেশবাসীরা তখন এঁদের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে

ভারতের মুক্তিসাধক ৬৮

উঠেছিল ফলে এই মামলার আসামী পক্ষ সমর্থন করে চিত্তরঞ্জনও দেশবাসীদের প্রিয়পাত্র হয়ে উঠলেন | এই মামলা থেকেই চিত্তরঞ্জনের আইন-ব্যবসায়ে বিপুল সাফল্যের স্ত্রপাত হ'য়েছিল। খ্যাতি এবং অর্থোপার্নের দিক থেকে তিনি ভারতের অন্ঠতম শ্রেষ্ঠ আইনজীবী হয়ে ধাড়িয়েছিলেন। অনেক সময় তার বাষিক আয় লক্ষ টাকায় পর্যন্ত দাড়াত। এর গরেও চিত্তরঞ্জন বহু বনু বড় মামলা পরিচালন! করে সমগ্র ভারতব্যাপী খ্যাতি অর্জন করেছিলেন

১৯০৫-এর বঙ্গভঙ্গ থেকে যে জাতীয় আন্দোলনের আরম্ত, চিত্তরঞ্জন গোড়া থেকেই তার সঙ্গে সংযুক্ত ছিলেন এবং জাতীয় আন্দোলনের মুখপত্র “দি নিউ ইগ্ডিয়া' “বন্দে মাতরমে*র সঙ্গেও তার গভীর সংযোগ ছিল। তিনি ১৯০৬ খুষ্টান্দে প্রতিনিধি হিসাবে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেদেও যোগ দিয়েছিলেন কিন্তু ১৯১৭ খুষ্টাব্দের পুর্বে তিনি প্রত্যক্ষভাবে বাস্তব রাজনীতিতে নামেন নি। এই সালে তাঁকে কলিকাতায় অনুষ্ঠিত কংগ্রেসের বঙ্গীর প্রাদেশিক সম্মেলনের সভাপতি নির্বাচিত কর! হয়। এই যে তার সঙ্গে রাজনীতির প্রত্যক্ষ যোগাযোগ স্থাপিত হ'ল, সে যোগাযোগ তার মৃত্যু পর্যন্ত অক্ষুগ্ন ছিল বঙ্গীয় প্রাদে- শিক সম্মেলনে চিত্তরঞ্জনের প্রথমবারের অভিভাষণ হয়েছিল অত্যন্ত বেশী হৃদয়াবেগে এবং উচ্ছ্বাসে পুর্ণ। এই অভিভাষণের মধ্যে সুগভীর চিন্তাশীলতা কিংবা রাজনৈতিক বিচার-বুদ্ধির পরিচয় পাওয়া যায় খুব কম। কিন্তু এই বছরই তিনি মণ্ট্যাগু-চেম্স্ফোর্ড কমিশনের কাছে যে সাক্ষ্য দিয়েছিলেন, তার মধ্যে তার রাজনৈতিক বিচার-বুদ্ধি এবং বাস্তব জ্ঞানের প্রত্যক্ষ পরিচয় পাওয়া যাঁয়। ঠিক এই বছরই কংগ্রেসের কলিকাতা অধিবেশনে শ্রীমতী আযানি বেশাস্তকে সভানেত্রী কর! নিয়ে কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটিতে মতভেদের স্থ্টি হয়। চিত্তরঞ্জন

৬৯. দেশবন্ধু চিত্তরঞ্রন দাশ

বামপন্থী কংগ্রেসীদের পক্ষাবলম্বন করে এই বিরোধে অংশ গ্রহণ করেন। এই নিয়ে ভারতের কংগ্রেসে বামপন্থী দক্ষিণপন্থীদের যে বিরোধ স্থষ্টি হয়ঃ তার ফলে নরম মতাবলম্বী দক্ষিণপন্থীরা কংগ্রেস থেকে দূরে সরে গিয়ে নিজেদের উদারনৈতিক দল সংগঠন করেন। উদারনৈতিক দলের সভ্যরা বেশীর ভাগই বয়সে প্রাচীন এবং উদার মতাবলম্বী কংগ্রেস সেবী ছিলেন নিয়মতান্ত্রিক পথে ব্রিটিশ গভর্ণমেন্টের সঙ্গে বিরোধ না করে যথাসম্ভব স্বায়ত্ুশাসন অর্জন করাই ছিল তাদের লক্ষ্য ১৯১৭ খুষ্টাব্দে কলিকাতায় কংগ্রেস অধিবেশনের পূর্বে চিত্তরঞ্জন পুর্ব বঙ্গেও বনু স্থানে বক্তৃতা দিতে গেছিলেন। তার বক্তৃতা শোনার জন্তে প্রচুর লোক সমাবেশ হ'ত। ক্লিকাতার কংগ্রেস অধিবেশনে তিনি আবেগপুর্ণ ভাষায় ভারতের স্বাধীনতার অধিকার সম্বন্ধে বক্তৃতা করেছিলেন

১৯১৮ খুষ্টার্দে তিনি কংগ্রেসের দিল্লী অধিবেশনে শ্রীমতী বেশান্তের নেতৃত্বাধীনে উদারটনতিক দলের বিরোধিতা সত্বেও সম্পূর্ণ প্রাদেশিক স্বায়ত্বশাসনের দাবী পাশ করিয়ে নিয়েছিলেন এই বৎসর তিনি ভারতরক্ষা বিধির অন্তভূক্ত রাউলাট আইনের . বিরুদ্ধে জনগণকে জাগিয়ে তুলেছিলেন এবং কলিকাতার টাউন হলে একটি বিরাট জনসভায় তীব্র ভাষায় এই আইনের নিন্দা করে বক্তৃতা দিয়েছিলেন। ১৯১৯ খুষ্টাব্দে ভারতের অবস্থা আরও সস্কটপূর্ণ হয়ে উঠল) এই বৎসরই অমৃতনরে পুলিশের অত্যাচার চলে। বিষয়ে অনুসন্ধানের জন্তে কংগ্রেস যে কমিটি সংগঠন করেছিল, চিত্তরঞ্জন তার অন্ততম সদস্তরূপে যথেষ্ট কাজ করেছিলেন। এই কমিটিতেই তার সর্বপ্রথম মহাত্ম! গান্ধীর সঙ্গে দেখা হয়। গান্ধীজী যখন ভারত-রক্ষা বিধির বিরুদ্ধে সত্যাগ্রহ আন্দোলন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন, তখন চিত্তরঞ্জন তাকে সমর্থন

ভারতের মুক্তিসাধক

করেছিলেন রাঁউলাট আইন বড়লাটের সম্মতি পাঁওয়ার পর দ্বিতীয় রবিবারে (৬ই এপ্রিল) সমগ্র ভারতব্যাী পূর্ণ হরতাল প্রতিপালিত হয়। এই বসরই অমৃতসরের কংগ্রেস অধিবেশনে চিত্তরঞ্জন কংগ্রেসের চরমপন্থীদলের অন্যতম প্রধান নেতারূপে গণ্য হলেন। এরা মণ্ট্যাপ্- চেমস্ফোর্ড শাসন-সংস্কারকে ভারতের পক্ষে সম্পূর্ণ অনুপযুক্ত, অসস্তোষ- জনক এবং হতাশাজনক বলে মনে করতেন ১৯২০ খ্ুষ্টাৰ ভারতীয় কংগ্রেসের ইতিহাসেও যেমন ম্মরণীয় বখসর, চিত্তরঞরনের ব্যক্তিগত জীবনেও তেমনই ম্মরণীয় বসর | এই বৎসরই ভারতীয় রাজনীতিতে মহাত্মা গান্ধীর সর্বব্যাপী অত্যুদয়। কলিকাতার বিশেষ কংগ্রেস অধিবেশনে মহাত্মা গান্ধী তার পাঁচ দফা কর্মতালিকার প্রস্তাব পেশ করেন। গভর্ণমেণ্টের সঙ্গে পরিপূর্ণ অসহযোগই ছিল এই কর্মতালিকার মূল উদ্দেশ্ত। চিত্তরঞ্জন কাউন্সিলের মুধ্যে থেকে সরকারী কার্ধে বিরোধ-স্থষ্টির প্রয়াণী ছিলেন। তাই তিনি গান্ধীজীর প্রস্তাবের বিরোধিতা করেন। তবু কংগ্রেসে গান্ধীজীর প্রস্তাবই গৃহীত হয়। তিন মাস পরে কংগ্রেসের নাগপুর অধিবেশনে চিত্তরঞ্জন মহাত্া গান্ধীর প্রস্তাবে সম্মতি জ্ঞাপন করেন। কংগ্রেসের অসহযোগ-নীতি অনুসারে কাউন্সিল বর্জন, সরকারী কাজে ইন্তফা দান, আইন-ব্যবসায় ত্যাগ, স্কুল কলেজ বর্জন প্রভূত নির্দেশ দেওয়া হয়। চিত্তরঞ্জন মনে প্রাণে অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দেন--নিজের লাভজনক আইন- ব্যবসায় পরিত্যাগ করেন। শুধু তাই নয়--তার জীবনে একটা আমূল পরিবর্তন আসে বিলাসী চিত্তরঞ্রন একদিনে দেশের জন্তে সর্বত্যাগী সন্ন্যাসী হয়ে পড়েন। ভারতের আর কোন নেতা চিত্তরঞ্জনের মত বির্লাট ত্যাগ স্বীকার করেছেন কিন! সন্দেহ কয়েক বৎসর পরে তিনি তার বিরাট সম্পত্তি একটি মেডিক্যাল স্থূল নারীদের

৭১. দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ

জন্তে একটি হাসপাতাল স্থাপনের উদ্দেশ্তে দান করেন। তার বিরাট আত্মত্যাগে সমগ্র দেশের হৃদয় এরূপ মুগ্ধ হয় যে, দেশবাসীরা তাকে 'দেশবন্ধু, আখ্যা দিয়ে সম্মানিত করে। দেশের জন্তে দেশবন্ধুর আত্মত্যাগের কথা বিবেচনা করলে বিম্ময়ে হতবাক হয়ে যেতে হয়। এই থেকেই চিত্তরঞ্নের রাজনৈতিক জীবনের অব্যাহত অগ্রগতি সুরু হল। তাঁর আহ্বানে সহজ্র সহস্র ছাত্রছাত্রী স্কুল কলেজ ছেড়েছিল এবং আইন-জীবীরা ব্যবসায়-ত্যাগ করেছিলেন। দেশের অনেক স্থানে জাতীয় স্কুল কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং ১৯২১ খৃষ্টাব্দে চিত্তরঞ্জন ঢাকাতে একটি জাতীয় বিশ্ববিগ্ালয় স্থাপন করে- ছিলেন তার অন্তান্ত কাজের মধ্যে উল্লেখযোগ্য আসাম বেঙ্গল রেল কর্মীদের ধর্মঘট, আসামের চ1 বাগানের কুলিদের কর্মপরিত্যাগ এবং তগ্রেসের জন্তে স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী সংগঠন অসহযোগ আন্দো- লনকে সফল করার জন্তে কংগ্রেসের এক কোটি টাকা এক কোটি স্বেচ্ছাসেবকের প্রয়োজন ছিল। চিত্তরঞ্জনের আহ্বানে সহস্র সহস্র যুবক স্বেচ্ছায় কংগ্রেস স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীতে যোগ দিয়েছিল শীপ্ই গভর্ণমেণ্ট এই আন্দোলন নিষিদ্ধ করে আইন জারী করলেন। কংগ্রেস আইন অমান্ত করে প্রতিশোধ গ্রহণের সিদ্ধান্ত করল এবং এই সিদ্ধান্তে খিলাফৎ কমিটিরও সমর্থন পেল। এই ভাবে গভর্ণমেণ্ট কংগ্রেসের মধ্যে যে বিরোধ স্থষ্টি হল, তার ফলে অনেককে কারাবরণ করতে হল। চিত্তরঞ্জনের স্ত্রী, পুত্র এবং ভগ্নী ধরা পড়লেন এবং সরকারী বিচারে চিত্তরঞজনকেও ছয় মাসের জন্যে কারারুদ্ধ হতে হল। ইত্যবসরে তিনি ১৯২১ খ্বষ্টাব্দের কংগ্রেস অধিবেশনের সভাপতি মনোনীত হয়েছিলেন $ কিন্তু তিনি বিচারাধীন রাজবন্দী ছিলেন বলে তাঁর পক্ষে সভাপতিত্ব কর! সম্ভব হয়নি কংগ্রেস কর্মীরা স্থানে স্থানে

ভারতের মুক্তিসাধক পা

হিংসার আশ্রয় নিয়েছিলেন বলে গান্ধীজী আন্দোলন প্রত্যাহার করেন- কিন্ত শীঘ্রই নিজে কারারুদ্ধ হন। ১৯২২ এর জুলাই মাসে চিত্তরঞ্জন. যথন মুক্তি পেলেন, তখন অসহযোগ আন্দোলন অনেকটা স্তিমিত হয়ে এসেছে তিনি বেরিয়ে এসে এক নতুন নীতির প্রবর্তন করলেন। এই নীতি অনুসারে কংগ্রেস আইন সভার সাদস্ত নির্বাচনে প্রতিথবন্ৰিতা করবে এবং আইন সভার ভিতর থেকে ব্রিটিশ গভর্ণমেণ্টকে আঘাত হানবে স্থির হল। ১৯২২ এর কংগ্রেস অধিবেশনে সভাপতিত্ব করার সময় চিত্তরঞ্জন তীর নতুন নীতি ঘোষণা করলেন; কিন্ত ভোটে তিনি হেরে গেলেন। এর পর তিনি তার নতুন নীতির আদর্শে পণ্ডিত মতিলাল নেছেরুর সহযোগিতায় স্বরাজ্যদল গঠন করে ১৯২৩ সালের কংগ্রেস অধিবেশনে প্রস্তাব পাশ করিয়ে নিলেন। মহাত্মা গান্ধীর প্রভাব চিত্তরঞ্জনের কাছে খর্ব হয়ে গেল।

চিত্তরঞ্জন ভারতীয় রাজনীতিক্ষেত্রে অন্ততম শ্রেষ্ঠ নেতা হয়ে ঈাড়ালেন। বাংলায় অল্প সময়ের মধ্যে তিনি স্বরাজ্যদলকে এমনভাবে গড়ে তুললেন, যে কাউদ্ষিলে তার দলই সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়ে দীড়াল। মন্ত্রিমগুল গঠন করার আমন্ত্রণ পেয়েও স্বেচ্ছায় তা তিনি অবজ্ঞা করলেন এবং প্রতি পদে তাঁর দলের হাতে সরকার পক্ষের পরাজয় হ'তে লাগল। এমনই ভাবে মণ্ট্যাগু-চেম্ন্ফোর্ড শাসন-সংস্কারকে চিত্তরঞ্জন বিধ্বস্ত করলেন। ১৯২৪ খৃষ্টাব্দে কলিকাতা কর্পোরেশনের নতুন নির্বাচনেও তারই দল পূর্ণ প্রাধান্ত পেল এবং চিত্তরঞ্জন কলিকাতা কর্পোরেশনের প্রথম মেয়র হলেন। ১৯২৫ খৃষ্টান্বেও তিনি মেয়ররূপে পুনরায় নির্বাচিত হয়েছিলেন এই সময় চিত্তরঞ্জন কার্ধত বাংলাদেশের একনাঁয়ক হয়ে দীড়িয়েছিলেন-_: কিন্তু তিনি কখনও একনায়কত্ব ভালবাসতেন না। তার মন ছিল পুরোধস্তর গণতন্ত্রের অন্রাগী। ১৯২৫ খুষ্টান্বের ১৬ই জুন তারিখে

৭৩ দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ

মাত্র ৫৫ বৎসর বয়সে অকল্মাৎ দাজিলিংয়ে চিত্তরঞ্জনের দেহাঁবসাঁন হয়। তাঁর মৃত্যুতে সমগ্র দেশ শোকাভিভূত হয়ে পড়ে শোকাচ্ছন্ন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ চিত্তরঞ্জনের মৃত্যু উপলক্ষে লেখেন £ “এনেছিলে সাঁথে করে মৃত্যুহীন প্রাণ, মরণে তাহাই তুমি করে গেলে দান।” প্রকৃতই আধুনিক যুগে এই দাঁনবীরের দানের তুলনা মেলে না। দাঁজিলিং থেকে চিত্তরঞ্জনের শবদেহ কলিকাতায় এনে সৎকার কর! হয়। তার মৃতদেহ নিয়ে প্রায় ছুই মাইল দীর্ঘ তিন লক্ষ নরনারীর যে শোভা যাত্র! বের হয়, তার পূরোভাগে ছিলেন ন্বয়ং মহাঁত্ব! গান্ধী রাজনৈতিক নেতা হিসাবে চিত্তরঞ্রনের সংগঠনশত্তি এবং মংগ্রাম- শক্তি ছিল প্রচুর এবং তিনি অত্যন্ত স্থকৌশলী নেতা ছিলেন। কিন্তু তার নেতৃত্বের সবচেয়ে বড় গুণ এই ছিল যেত্ার সুমধুর ব্যক্তিত্বের গ্রভাবে তিনি লোকের মনে গ্রীতি শ্রদ্ধা জাগাতে পারতেন। তা ছাঁড়া তিনি হিন্দু এবং মুসলমান--এই উভয় সম্প্রদায়ের মান বিশ্বাসভাজন নেতা ছিলেন। তার মত আর কোন ভারতীয় হিন্দু নেতাকে মুসলমান সম্প্রদায় এমনভাবে বিশ্বাস করত না। তার উদ্যোগে যে হিন্দুমুসলমাঁন চুক্তি সম্পাদিত হয়েছিল, তাঁর মধ্যে চিত্তরঞ্জীনের হৃদয়ের উদারতা এবং পরমত-সহিষুণত] প্রতিফলিত। রাজনৈতিক চিন্তার দিক থেকে তিনি তার সময়ের চেয়ে অগ্রগামী ছিলেন। তিনি শুধু ধনী মধ্যবিত্ত সম্প্রদায়ের মুক্তির কথাই ভাবতেন না-ভারতীয় শ্রমিকদের মুক্তি- চিন্তাও তাকে আচ্ছন্ন করে রাখত। নিষ্নোক্ত গয়! কংগ্রেসে (১৯২২) প্রদত্ত তার বক্তৃতার অংশ বিশেষের মধ্যে আমাদের উক্তির সমর্থন মিলবে £ “আমাদের মধ্যে অনেকের বিশ্বাস আছে যে মধ্যবিত্ত সম্প্রদায় জনগণের মধ্যে শ্বরাজ আনবে। কোন শ্রেণী-আন্দোলন ত্বরাঁজের

ভারতের যুক্তিসাধক |

জন্যে আন্দোলনে পরিণত হ'তে পারে, একথা আমি বিশ্বাস করি না।"--**"ব্তমানে ভারতে যে শ্বেত আমলাতন্ত্রের শাসন চল্ছে, তার, পরিবর্তে যদি মধ্যবিত্ত শ্রেণীর ভারতীয় আমলাতিস্ত্রের স্থষ্টি হয়, তবে ভারতের কি লাভ হবে ?-.."""জনগণ যদি ম্বরাঁজপ্র।প্তিব জন্তটে আমাদের সাথে সহযোগিতা না করে, তবে আমার ম্বরাজের আদর্শ কখনও পূর্ণ হবেনা। অন্ত যে কোন প্রচেষ্টার ফলে ইউরোগীয় সমাজতান্ত্রিকর! যাঁকে বলে “বুজোয়া” গভর্ণমেণ্ট তাঁরই সৃষ্টি হবে ।'**-.*আজ যদি সমগ্র ইউরোপ স্বাধীনতার যুদ্ধে লিপ্ত হয়, তবে তাঁর কাঁরণ এই যে ইউরোপের জাতিপুঞ্জ মধ্যবিভ্ত মম্প্রদায়ের হাত থেকে ক্ষমতা ছিনিয়ে নেবার জন্তে শক্তি সংগ্রহ করছে আমি ইউরোপীয় ইতিহাসের এই অধ্যায়ের পুনরাবৃত্তি এড়াতে চাঁই।” চিত্তরঞ্জনের মৃত্যুতে ভারতের রাজনৈতিক জগতের যে ক্ষতি হয়েছে, অপূরণীয়

দেশপ্রিয় যতীন্দ্রমোহুন

দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের মৃত্যুর পর বাংলার রাজনীতিক্ষেত্রের সর্বময় কতৃত্বের ভাঁর ধার উপর এসে পড়েছিল, তিনি দেশগ্রিয় যতীন্দ্রমোহন সেনগুপ্ত তিনি আমরণ গুরু কর্তব্যের ভার সগৌরবে বহন করে গেছেন সে সময়ে দেশবন্ধুর পরেই ছিল তাঁর খ্যাতি এবং জনপ্রিয়তা দেশের জন্যে, দশের জন্যে প্রচুর আত্মত্যাগ এবং কাঁরা-নির্যংতন ভোগ করেই তাঁকে জনপ্রিয়তা অর্জন করতে হয়েছিল। তাঁর ভীবনে তিনি বহুবার অপূর্ব সংগঠন-শক্তির প্রমাণ দিয়েছিলেন। জন্ম থেকেই যতীন্দ্

৭৫. দেশগ্রিয় যতীন্দ্রমোহন

মোহনের রক্তে রাঁজনীতির বীজ ছিল বল! চলে। তীর পিতা যাত্রামোহন সেনগুপ্ত ছিলেন তৎকালীন চট্টগ্রামের অন্যতম শ্রেষ্ঠ আইনজীবী এবং স্বদ্দেশ প্রেমিক। উনবিংশ শতাবীর শেষ দশকে এবং বিংশ শতাব্দীর প্রথম ভাগে ধার! বাংলার সমাঁজ-জীবনে রাঁজনীতির সচেতনত| এনে দিয়েছিলেন, যাত্রীমোহন ছিলেন তাদের অন্ততম। তিনিই চট্টগ্রাম জেলায় সর্বপ্রথম জাতীয় আন্দোলনের প্রতিষ্ঠা করেছিলেন

১৮৮৫ খুষ্টাব্বের ২২শে ফেব্রুয়ারী চট্টগ্রামের বরমা গ্রামে যাত্রামোহনের পল্লীনিবাসে যতীন্দ্রমোহনের জন্ম হয়েছিল। তিনি ছিলেন পিতামাতার তৃতীয় সন্তান। তাঁর মাতার নাম ছিল বিনোদিনী দেবী। জীবনের শেষ ভাগে যাত্রামৌহন ব্রাঙ্গ ধর্ম গ্রহণ করলেও বিনোদিনী দেবী আজীবন হিন্দুধর্সেই আস্থাবতী ছিলেন। তিনি রীতিমত পূজা, জপতপ প্রভৃতি করতেন। যাত্রামৌোহন কখনও স্ত্রীর ধর্ম বিশ্বামে আঘাত করতেন না। ছেলে মেয়েদের মধ্যে ষতীন্দ্রমোৌহনকেই বোধ হয় বিনোদিনী দেবী সর্বাপেক্ষা বেশী ভালবাসতেন পুত্রেরও মাতার প্রতি ভক্তির সীম! ছিল না। ছোটবেলা! থেকেই যতীন্দ্রমোহনের দেহ বেশ বলিষ্ঠ সুগঠিত ছিল। তার উপর তিনি খেলাঁধুলে! ব্যায়ামচর্চা প্রভৃতি বিষয়ে খুব বেশী উৎসাহী ছিলেন। খেলাধুলো এবং ব্যায়মচর্চ/ অনেক সময় তার লেখাপড়ায় ব্যাঘাতও সৃষ্টি করত। তীর বাবার প্রথম থেকেই ইচ্ছা ছিল যে তিনি যতীন্দ্রমোহনকে ব্যারিষ্টারী পড়ার জন্গে ইংল্যাপ্ডে পাঠাবেন চট্টগ্রামে থাকতে বতীন্রমোহন একাধিক স্কুল বদল করেছিলেন; তারপর তিনি কলিকাতায় আসেন এবং এখানেও পর পর একাধিক স্কুল বদল করে অবশেষে হেয়ার স্কুল থেকে এন্ট৭ন্স পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এর পর তিনি গ্রেসিডেন্সী কলেজে ভি হন। কলেজে পড়ার সময় তাঁর বিলাত যাবার প্রস্তাব ওঠে। এত অল্প বয়সে পুত্রকে বিদেশে পাঠানোর ইচ্ছ। মাতা

ভারতের মুক্তিসাঁধক ৭৬

বিনোদিনী দেবীর একটুও ছিল না। বন্ুকষ্টে মাতাঁকে সম্মত করানোর পর ১৯০৪ থুষ্টাব্বের আগষ্ট মাসে যতীন্্রমোহন ইংল্যাণ্ড যাত্রা করেন |, ইংল্যাণ্ডে গিয়ে তিনি কেম্িজের ডাউনিং কলেজে ভতি হন। লেখা পড়া ছাড়াও তিনি সেখানে সকল রকমের খেলীধুলে! এবং বাগ্সিতার জন্যে ছাত্রমহলে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন। ক্রিকেট, টেনিস হকি এবং দাড় টানায় তিনি সমান পারদশিতা দেখিয়েছিলেন। তাঁদের কলেজের সঙ্গে অন্যান কলেজের ক্রীড়া-গ্ররতিযোগিতায় তিনিই দলের নেতা নির্বাচিত হতেন। গে সময় কেছ্বিজে ভারতীয় ছাত্রদের কেদিজ ভারতীয় মঙ্জলিস এবং প্রাচ্য প্রতীচ্য সমিতি নামে দুটি প্রতিষ্ঠান ছিল। ছাত্রমহলে যতীন্ত্রমোহনের জনগ্রিয়তা এত বেশী ছিল যে তিনি উভয় প্রতিষ্ঠানেরই সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন। সমিতি ছুটির অধিবেশনে তিনি সুন্দর বন্ৃতা দ্রিতেন। এইভাবে তাঁর ভাঁবী জীবনের বাগ্সিতার ভিত্তি স্থাপিত হয়েছিল। কেনম্থি'জে ছাত্রাবস্থায় তিনি ব্রতচারীর প্রতিষ্ঠীতা পরলোক গত গুরুমদর দত্ত এবং আধুনিক ভারতের অন্ততম শ্রেষ্ঠ নেতা পণ্ডিত জওহরলাল নেহেরুর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে এসেছিলেন বিলাত প্রবাসের সময় ১৯০৬ খুষ্টাব্ধে দেশে তাঁর মাতা বিনোদিনী দেবীর মৃত্যু হয়। মাতার আকস্মিক মৃত্যু-সংবাদে যতীন্দ্রমোহন অত্যন্ত শোকাভিভূত হয়ে গড়েন। মাতার মৃত্যুর কিছু পরে তিনি অল্লপকালের জন্তে দেশে ফিরেছিলেন। ইংল্যাণ্ডে ফিরে গিয়ে তিনি কেন্থিংজের বি-এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন এবং ১৯০৯ খরষ্টাবে গ্রে ইন্‌ থেকে ব্যারীষ্টারী সনদও পান। বিলাত প্রবামের সময় তিনি গ্রে পরিবার নামক একটি মহৎ ইংরেজ পরিবারের স্পর্শে আসেন এবং পিতাঁর অমত সত্বেও তিনি এই পরিবারের কনা কুমারী নেলী গ্রের পানি গ্রহণ করেন। পর জীবনে ইনিই স্ুগ্রসিদ্ধা জন- নেত্রী শ্রীযুক্ত! নেলী সেনগুপ্তা হয়ে দীড়িয়েছেন। বিবাহের পর তিনি

শা

৭১৭ দেশপ্রিয় যতীন্দ্রমোহন

সন্ত্রীক ভারতে চলে আসেন। যাত্রামোহন পুত্রবধূর মংস্পর্শে এসে তার

মধুর চরিত্র এবং সেবাষত্বের গুণে নিজের পূর্বমত বদলাতে বাধ্য হন এবং

পুত্র পুত্রবধুকে প্রাণ ভরে আশীর্বাদ করেন।

১৯১০ খ্ষ্টান্দে যতীনন্ত্রমোহন কলিকাতা হাইকোর্টে ব্/ারিষ্টারী স্থরু করেন। প্রথম প্রথম তাঁর খুব অর্থাভাব চলতে থাকে ১৯১৩ খুষ্টান্বে তিনি রিপন কলেজের ভাইস্‌ প্রিন্সিপাল নিধুক্ত হন। এতৎ সত্বেও তার অর্থ।ভাঁব কমে না। অর্থের স্বাচ্ছন্দ্য যতীন্দ্রমোঁভনের জীবনে কোনদিন আসেনি একসময় ব্যারিষ্টারীতে তার মামে ১০১২ হাজার টাক পর্ষস্তও আঁয় হত। কিন্তু তিনি দেশের কাঁজের জন্তে নিজের আইন ব্যবসায়ের দিকে যখোঁচিত মনোনিবেশ করতে পারতেন না। তা ছাড়া তিনি অনেক সময় প্রচুর খণ করেও দেশের কাজে সহায়তা করতেন। এইবার আমর1 যতীন্দ্রসোহনের রাজনৈতিক জীবন সম্বন্ধে আলোচনা করব। পূর্বেই বলেছি যে ব্বদেশ-গ্রেম রাঁজনীতি তার রক্তকণাঁর মিশে ছিল। ভাঁরতে ফেরার পর ১৯১১ খুষ্টান্দে তিনি প্রত্যক্ষ রাঁজনীতির সংস্পর্শে আসেন। বৎসর ফরিদপুরে প্রাদেশিক জাতীয় সভার অধিবেশন হয়। যতীন্দ্রমোহন চট্রগ্রামের প্রতিনিরূপে সেই সভায় যোগ দিয়েছিলেন। তারই আহ্বানে পর বসর টট্টগ্রমে এই সভার অধিবেশন হয়েছিল। চট্টগ্রাম সম্মেলনে যাত্রামৌোহন ছিলেন অভ্যর্থরা সমিতির সভাপতি এবং যতীন্দ্রমোহন ছিলেন শ্বেচ্ছাসেবকদদের নেতা। এর পর থেকে যেখানেই যেবার প্রথদেশিক সভার অধিবেশন হয়েছে, যতীন্দ্রমোহন তা'র প্রায় প্রত্যেকটিতেই যোগ দিতেন। কংগ্রেম অধিবেশনে যোগদান কর! তিনি তার জীবনের শ্রেষ্ঠ কর্তব্য বলে মনে করতেন। নিজের জেলায় তাঁর পিতার রাজনৈতিক খ্যাতি যথেষ্ট থাকলেও যতীন্দ্রমোহন তখনও জনসমাজে

ভারতের মুক্তিসাধক

স্বল্প পরিচিত। তিনি ইতিমধ্যেই দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাঁশেন ঘনিষ্ঠ

সান্নিধ্যে এসেছিলেন এবং দেশবন্ধু তার চরিত্রের বিভিন্ন গুণ এবং,

আন্তরিক ্বদেশগ্রীতি দেখে বুঝেছিলেন যে তিনি একদিন বাংলার রাঁজনীতিক্ষেত্রে সর্বোচ্চ আসনের অধিকারী হবেন। ১৯১৭ খৃষ্টান দেশবন্ধু একবার শ্বর্দেশী কার্োপলক্ষে চট্টগ্রামে গেছিলেন। সে সময় যতীন্দ্রমোহনও চট্টগ্রামে যান। দেশবন্ধুর আগমনে চট্টগ্রামে একট! বিরাট রাঁজনৈতিক সভা হয়। সেই সভায় দেশবন্ধু চট্টগ্রামবাসীদের কাছে তাদের স্বজেলাবাসী যতীন্ত্রমোহনের বিভিন্ন গুণাবলীর কথা বর্ণন। করে তার ভূয়মী প্রশংসা করেছিলেন। এই যে দেশবন্ধুর গ্রতি যতীন্দ্রমোহনের আন্গগত্যের শুত্রপাত হল, সে আনুগত্য চিত্তরপ্রীনের মৃত্যু পর্যন্ত অটুট ছিল। বাংলার রাজনাতিক্ষেত্রে ইতিমধ্যেই কংগ্রেসের নরমপন্থী চরমপন্থী দলের মধ্যে বিরোধের সুত্রপাত হয়েছিল। নরমপন্থী দলের নেতা! ছিলেন রাষ্টরগুর সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং চরমপন্থী দলের নে] ছিলেন দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন নরমপন্থী দলের বিশ্বাস ছিল যে ইংরেজর] আবেদন নিবেদনের ফলেই ভারতীয়দের ধীরে ধীরে শ্বাধীনতা দেবে, আর চরমপন্থীরা বলতেন যে স্বাধীনতা ইংরেজদের কাছ থেকে জোর করে আদায় করতে হবে- সংগ্রাম করতে হবে। বিনা প্রচেষ্টায় ইংরেজ নিজের অধিকার কণাঁমীত্র ছাড়বে না। নরমপন্থীদের প্রভাব দেশের বুক থেকে ক্রমশই কমে যাচ্ছিল। চিত্তরঞ্রনের ব্যক্তিত্ব নেতৃত্বের প্রভাবে বাংল! থেকে তাদের শক্তি অচিরেই বিলুপ্তপ্রায় হয়ে গেল। যুদ্ধের শেষে মণ্টযাগু-চেমস্ফোর্ড সংস্কারের নামে ইংরেজরা ভারতকে যে তথাকথিত স্বায়ত্বশাসন দিল, তার মোহজালে সুরেন্ত্রণাথের মত নেতাও ধর পড়লেন কিন্তু দেশবাসীর] তাতে সন্তুষ্ট হল না। তার উপর কুখ্যাত রাঁউলাট বিল নিয়ে ব্রিটিশ

5৯ দেশপ্রিয় ফতীন্দ্রমোহন

গভর্ণমেণ্টের বিরুদ্ধে সাঁর1 ভাঁরতে আন্দোলন চলছিল। যতীন্ত্রমোহন তখন দেশবন্ধুর অন্যতম সমর্থক সহায়ক। ১৯১৯ খুষ্টাবে প্রবল উত্তেজনার মধ্যে ময়মনসিংহে প্রাদেশিক সম্মেলনের অনুষ্ঠান হয়। বৃদ্ধ যাত্রামোহন সেই সভার সভাপতি নির্বাচিত হন। তাঁর ক্ষীণ বিপুল সভার শেষ প্রান্ত পর্ধস্ত পৌছুবে না বলে, পুত্র যতীন্দ্রমোহন তাঁর লিখিত অভিভাষণ উদাত্তকণ্ঠে পাঠ করেছিলেন। এর কয়েক মাস পরেই ১৯১৯-এর শেষভাগে ৭০ বত্সর বয়সে যাত্রামোহন কলিকাতায় প্রাণত্যাগ করেন। পিতার মৃত্যুতে সংসারের সমস্ত গুরু কঙব্যভাঁর এসে পড়ে যতীন্্রমোহনের স্বন্ধে। ১৯২০-এর সেপ্টেঘঘর মাসে পাঞ্জাব-কেশরী লখল! লা'জপত রায়ের সভাপতিত্বে কলিকাতায় বিশেষ কংগ্রেসের অধিবেশন হয়। যতীন্্রমোহন এই কংগ্রেসের অন্যতম সম্পাদক পদে নির্বাচিত হয়েছিলেন এই কংগ্রেসে গান্ধীজীর অসহযোগ প্রস্তাব নিয়ে মতভেদ দেখ! দেয়। চিত্তরঞ্জনের বিরোধিতা সত্বেও ভোটাধিক্যে অসহযোগ প্রস্তাব গৃহীত হয়ে যাঁয়। যতীন্দ্রমোহন চিত্তরঞ্ীনের পক্ষেই ভোট দ্রিয়েছিলেন। সেই বৎসরই ডিসেম্বর মাসে নাগপুরে কংগ্রেসের অধিবেশনে দেশবন্ধু তার মত পরিবর্তিত করেন এবং সদলবলে গান্ধীজীর অসহযোগ প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেন। সর্বসম্মতিক্রমে প্রস্তাবটি গৃহীত হয়ে যাঁয়। ১৯২১ খরষ্টাব্ষটি বাংলা তথ! ভারতের ইতিহাসে স্মরণীয়। এই বৎসর অসহযোগ আন্দোলনের চুড়ান্ত বিকাশ দেখা গেছিল চিত্তরঞ্জন চিরদিনের জন্যে তাঁর লাভজনক ব্যারিষ্টারী পরিত্যাগ করে দেশসেবায় আত্মনিয়োগ করেছিলেন। তাঁর আহ্বানে যতীন্দ্রমোহনও তিন মাসের জন্যে আইন ব্যবসায় বন্ধ রেখে চট্টগ্রামে স্বদেশগঠনমূলক কার্ষে আত্মনিয়োগ করেন। মাত্র তিন মাসের জন্টে ব্যবসায় বন্ধ করলেও, তিনি কার্যত এক বৎসর নয় মাসব্যারিষ্টারী

ভারতের মুক্তিনাধক ৮০

করতে পারেন নি। এতে তাঁর প্রচুর 'আধিক ক্ষতি হয়েছিল। চট্টগ্রামে যতীন্দ্রমোহন চাষী মজুর নিয়শ্রেণীর লোকদের শ্বদেশ-প্রেমে উদ্দ্ধ- করে তাঁদের সঙ্ঘবদ্ধ করে তোলার চেষ্টা করেছিলেন। তিনি এই সময় বার্মা অয়েল কোম্পানীর শ্রমিকদের একটি ধর্মঘট ঘটান। শ্রমিকর! বহুদিন থেকেই বিভিন্ন কারণে মালিকদের প্রতি অসন্তুষ্ট ছিল। তার! তাদ্দের অভিযোগ পূরণের দাবী জানিয়ে একযোগে ধর্মঘট করে। যতীন্দ্রমোহন ছিলেন তাদের নেতা। তার নেতৃত্বে এই ধর্মঘট সম্পূর্ণ সাফল্য-মণ্ডিত হয়েছিল। এর পরই যতীন্দ্রমৌহনের জীবনের অন্ততম শ্রেষ্ঠ কীতি আসাম বেঙ্গল রেলওয়ে ধর্মঘটের কথা আসে এত বড় সার্থক ধর্মঘট ভারতে খুব কমই হয়েছে। ১৯২১-এর ২*শে মে টাদপুরে চা বাগানের কুলিদের উপর সরকারী অত্যাচার হয়। যতীন্দ্রমোহন তখন আসাম বেঙ্গল রেলকম্নচ।রীদের শক্তিশালী সঙ্ব “আসাম বেঙ্গল রেলওয়ে ইউনিয়নের সভাপতি তিনি কুলিদের উপর অত্যাচারের প্রতিকার কল্পে টাদপুরে উপস্থিত হলেন এদিকে যতীন্ত্র- মোহনের মন্ুপস্থিতিতেই ২৪শে মে এই অত্যাচারের প্রতিবাদে আসাম বেঙ্গল রেলওয়ের প্রায় ২৫ হাজার কর্মচারী ধর্মঘট করে বসল রেল- কতৃপক্ষের বিরুদ্ধে নিজেদের মাহিনাদি নিয়ে কর্মচারীদের যে অভিযোগ এতদ্দিন পুণ্তীভূত ছিল, তাঁই অবশেষে চাদপুরের ঘটনা অবলম্বনে আত্মপ্রকাশ করে বসল। অবশেষে ঘর্মঘট ট্টীমার কর্মচারীদের মধ্যেও বিস্তার লাভ করেছিল। দেেশবন্ধুর সহায়তায় টাদপুরের কুলিদের দেশে ফেরার ব্যবস্থ! করে দিয়ে যতীন্দ্রমোহন চট্টগ্রামে ফিরে এলেন এবং কর্মচারীদের তরফ থেকে তাদের অভিযোগের প্রতিকার দাবী করলেন। কিন্তু রেলকতৃপক্ষের দ্রিক থেকে কোন সাড়! পাওয়া গেল না। কাজেই ধর্মঘটও চলল। ধর্মঘটিদের আথিক সাহাধ্যদানের

৮১ দেশপ্রিক্স যতীন্ত্রমোহন

জন্টে যতীন্দত্রমোহন একটি অর্থভাগ্াঁর খুললেন। কিন্ত ২৫ হাজার লোকের দৈনন্দিন ব্যয়ভার বহন কি সহজ? তাই তিনি বাধ্য হয়ে ধর্মঘট চালু রাখার জন্তে ৪০ হাঁজার টাঁক|খণ করলেন। পরে এই খণ শোধ করতে তাঁকে অনেক কষ্ট পেতে হয়েছিল। ধর্মঘট চলতে থাকায় যতীন্ত্রমোহন তার কয়েকজন সহকর্মীর উপর টট্রগ্রামে সভা, শোভাযাত্রা পরিচালনা নিষিদ্ধ করে আদেশ দেওয়! হল। কিন্তু কয়েকদিন পরে কয়েকজন কর্মী গ্রেপ্তার হওয়ায় ফতীন্রমোহন আদেশ লঙ্ঘন করতে বাধ্য হলেন। তিনি প্রাতিবাদে এক মাইল দীর্ঘ একটি শোভাযাত্র! বের করলেন। ফলে তিনি কয়েকজন সহকর্মীসহ গ্রেপ্তার হলেন এবং যথোৌচিত বিচারের পর ব্যক্তিগত জামিনে মুক্তি পেলেন। কিন্তু 'আবার তার গতিবিধি নিযন্ত্রণ করে নিষেধাজ্ঞা জারী করা হল। ধর্মঘট তখন চলছে দীর্ঘ তিন মাস ধরে ধর্মঘট চলেছিল। কিন্তু শেষ পর্স্ত কাজ বিশেষ হল না। কতৃপিক্ষ নতুন লোক নিয়োগ সুরু করলেন। তখন ভীত হয়ে অনেক পুরণে! ধর্মঘটী কর্মচারী পেটের দায়ে কাজে যোগ দিতে লাগলে৷। এমনই ভাবে ধর্মঘট ভেঙ্গে গেল। আজ পর্যন্ত বাংলা দেশে আর কোন ধর্মঘট এত ব্যাপক দীর্ঘস্থায়ী হরেছে কিন! সন্দেহ।

ট্টগ্রামে যখন রেলকর্মীদের ধর্মঘট চলছিল, তখন মৌলানা মহম্মদ আলীর সঙ্গে মহাত্মা গান্ধী অসহযোগ আন্দোলনের সাফল্য শ্বচক্ষে দেখার জন্তে ভারত ভ্রমণে বেরিয়েছিলেন। তিনি বাংলাদেশে এসে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্রনের নেতৃত্বে অসহযোগ আন্দোলনের সাফল্য দেখে মুগ্ধ হন। যতীন্ত্রমোহন তখন চট্টগ্রামে রেলধর্মঘটাদের অবস্থা স্বচক্ষে দেখার অন্টে গান্ধীজীকে আমন্ত্রণ করেন। গান্ধীজী সানন্দে সম্মত হন। চট্টগ্রামে মহাত্মা গান্ধীর অত্যর্থনার জন্তে যতীন্্রমোহন যে বিরাঁট রাজকীয় আয়োজন

তু

ভারতের মুক্তিসাধক ৮২

করেছিলেন, চট্টগ্রামের ইতিহাসে তার তুলনা মেলে না। একটি: বিরাট জনসভায় বক্তৃতা! প্রসঙ্গে মহাত্া গান্ধী চট্টগ্রামে কংগ্রেসের কাজ এবং অসহযোগ আন্দোলনের খুব প্রশংসা করেন কার্যত এটা যতীন্ত্র- মোঁহন্রই প্রশংসা__কেননা চট্টগ্রামে কংগ্রেস অসহযোগ আন্দোলন ংগঠনের মুলে যতীন্দ্রমোহনের প্রচেষ্টাই ছিল মুখ্য। এই কাজে যতীন্দ্রমোহনের ধারা সহায়তা করেছিলেন তাঁদের মধ্যে মহিমচন্দ্র দাস, ত্রিপুরীচরণ চৌধুরী, মৌলনী কাঁজিম আলী, মণিরজ্জমান ইসলামাবাদী; অধ্যাপক নৃপেক্দ্রচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়, আঁন্ককাচরণ দাস প্রভৃতির নাম বিশেষ উল্লেখযোগ্য ২৫শে সেপ্টেম্বর যতীন্দত্রমোহনের নিষেধাজ্ঞার কাল শেষ হয়ে যাবার পর তিনি গ্রেপ্তার হন। পরে তিনি মুক্তি পান। কিন্তু অক্টোবর মাসে পুনরায় তার ৰিচার হয়। ১৯শে অক্ট বর এই মামলার নিষ্পত্তি হয়। বিচারে যতীন্দ্রমোহন এবং তার কয়েকজন সহকর্মীর উপর তিন মাসের সশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেওয়! হয়। যতীন্দ্রমৌহনের এই প্রথম কারাদণ্ড এই আদেশের ফলে চট্টগ্রামে প্রবল উত্তেজনা দেখ! দিল সারা সহরে হরতাল প্রতিপালিত হল। কর্তৃপক্ষ যতীন্ত্রমোহন এবং তার সহকমীদের চট্টগ্রামে রাখা নিরাপদ নয় মনে করে তাদের কলিকীতীয় পাঠানোর ব্যবস্থা করলেন ১৯২১-এর ডিসেম্বর মাসের অসহযোগ বয়কট আন্দোলনের অভিযোগে দেশবন্ধ চিত্তরগ্রনের কারাদণ্ড হল। ১৯২২ খৃষ্টাব্দে চট্টগ্রামে গ্রার্দেশিক রান্ত্রীয় সম্মেলনের অধিবেশন স্থিরীকৃত হয়। দেশবন্ধু তখনও কারাগারে যতীন্রমোহন তখন কারামুক্ত এবং তিনি ইতিমধ্যেই দেশবাসীদের কাছ থেকে “দেশপ্রিয়” আখ্যা পেয়েছেন। তিনি চট্টগ্রামে সম্মেলনের সকল বন্দোবস্ত করলেন। দেশবন্ধুর পদবী শ্রীধুক্তা বাসন্তী দেবী এই অধিবেশনের সভানেত্রী কয়েছিলেন।

৮৩ দেশপ্রিয় যতীন্্রমোহন

চট্টগ্রাম সম্মেলনের প্রায় তিন মাস পরে দেশবন্ধু কারাগার থেকে মুক্তি পেলেন। বেরিয়ে এসে তিনি দেখেন যে গান্ধীজী কারারুদ্ধ-- দেঁশব্য।পী অসহযোগ আন্দোলন ব্যর্থ। তখন চিত্বরঞ্রন স্থির করলেন যে তিনি সদলবলে নতুন আইন সভায় প্রবেশ করবেন এবং ভিতর থেকে ব্রিটিশ গভর্ণমেণ্টকে পরাজিত করার চেষ্টা করবেন। এই উদ্দেশ্তে তিনি পণ্ডিত মতিলাল নেহেরুর সহযোগিতায় স্বরাজ পার্টির প্রতিষ্ঠা করলেন। দেশবন্ধু এই পার্টির সভাপতি এবং মতিলাল সম্পাদক নির্বাচিত হলেন। দেশবন্ধু এই বৎসর গয়। কংগ্রেসের সভাপতি নিবাচিত হয়েছিলেন। কিন্তু তার আপ্রাণ চেষ্টা সত্বেও গয়া কংগ্রেসে ভোটাধিক্যে তার ব্বরাজপার্টি গঠনের প্রস্তাব পরিত্যক্ত হল। তবু তিনি হতাশ হলেন না। ১৯২৩-এর সেপ্ম্বরে দিল্লীতে কংগ্রেসের বিশেষ অধিবেশনে দেশবন্ধুর প্রস্তাব গৃহীত হল। ইত্যবসরে যতীন্দ্রমোহন পুনরায় আইন-ব্যবসায় স্থুরু করেছিলেন নিখিল ভারত শ্বরাজপার্টি গঠন শেষ করে দেশবন্ধু বঙ্গীয় স্বরাজপার্টি গঠনে মন দিলেন এবং তীন্দ্রমেোহন প্র।দেশিক স্বরাজপা্টির সম্পাদকপদে নির্বাচিত হলেন। ১৯২৩-এর নভেম্বর মাসে বাংলায় যে নির্বাচন সংগ্রাম হল তাতে স্বরাজপা্টির অধিকাংশ সদস্য বিপুল ভোটাধিক্যে নির্বাচিত হলেন। টট্টগ্রাম থেকে যতীন্ত্রমোহনও আইনসভার সদস্য নির্বাচিত হলেন। দেশবন্ধুর নেতৃত্বে যে কংগ্রেস কাউন্সিল পাটি গঠিত হুল যতীন্দ্রমোহন তারও সম্পাদক পদে নির্বাচিত হলেন। কংগ্রেস শ্বর।জ- পার্টির হাতে বাংল! গভর্ণমেণ্টের পরাজয়ের পর পরাজয় ঘটেছিল। অন্ত কোন স্বাধীন দেশ হলে বাংলার মন্ত্রিমগুলকে পদত্যাগ করতে হ'ত কিন্তু পরাধীন দেশ বলে বাংল] গতর্ণমেপ্ট পূর্ববৎ চালু ছিল। এই সময় বাংলা গভর্ণমেন্টের অন্ততম মন্ত্রী নুরেন্ত্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রচেষ্টায় নূতন মিউনিসিপ্যাল আইন পাশ হওয়ায় কলিকাত! কর্পোরেশনের

ভারতের মুক্তিসাঁধক ৮৪

অধিকার অনেকট! নাগরিকদের হাতে এসে পড়ল। দেশবন্ধুর নেতৃত্বে স্বরাজদলই কর্পোরেশন অধিকার করলেন এবং দেশবন্ধু হলেন কলিকাতা'র প্রথম কংগ্রেমী মেয়র। হঠাৎ ১৯২৫-এর ১৬ই জুন দেশবন্ধুর অকাল মৃত্যুতে বাংলার রাজনীতির ক্সাকাশে আবার ছুর্দিনের ঘনঘট! দিল দেখ]|। মহাত্রা গান্ধী তখন বাংলায় ছিলেন। তিনি দেশবন্ধু স্থতি-ভাগাঁর খুললেন। যতীন্দ্রমোহন তাঁকে সর্বপ্রকারে সাহায্য করতে লাগলেন।

ক্রমে দেখা গেল যে চিত্তরঞ্জীনের “ত্রিমুকুট” গ্রহণ করার যোগ্যতা ঘতীন্্রমোহনেরই আছে--তিনি বাংলার অধিকাংশ কংগ্রেস সেবীর বিশ্বাস- ভাজন। দেশবন্ধুর স্থলে তিনি বাংলার কংগ্রেস কাউন্সিল পার্টির এবং বঙ্গীয় প্রাদেশিক রাস্ত্রীয় সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হলেন। তারপর কর্পোরেশনের অন্ডারম্যান এবং মেয়র নির্বাচিত হলেন। ১৯২৫-এর ডিসেম্বর মাসে শ্রীমতী সরোজিনী নাঁইডুর সভানেত্রীত্বে কানপুরে কংগ্রেসের বে অধিবেশন হল, তাতে স্বরাজপার্টকে আইন সভা ত্যাগের নির্দেশ দেওয়! হল-_-কেননা দেখা গেল যে আইন মভার ভিতর থেকে ব্রিটিশ গভর্ণমেণ্টর সঙ্গে সংগ্রাম করে কোন লাঁভ নেই। কংগ্রেসের নির্দেশে যতীন্্রমোহন বঙ্গীয় ম্বরাজপার্টি নহ ১৯২৬-এর ১৫ই মার্চ আইনসভ। ত্যাগ করলেন। ১৯২৬ খষ্টান্ধে বতীন্দ্রমোহন আসামের স্থুর্মাভ্যালী রাজনৈতিক সম্মেলনের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন যতীন্দ্রমোহনের জনপ্রিয়তা কত বেশী ছিল তার একটা পরিমাপ পাঁওয়া যায় তাঁর কলিকাতা কর্পোরেশনে পাঁচবার মেয়র পদ লাভ থেকে আর কেউ এত অধিকবার কলিকাঁত| কর্পোরেশনের মেয়র পদ লাভ করেন নি। যতীন্ত্রমোহন ১৯২৫১ ১৯২৬১ ১৯২৭১ ১৯২৯ এবং ১৯৩৭ খ্বস্টাব্ষে কলিকাত। কর্পোরেশনের মেয়র পদে নির্বাচিত হয়েছিলেন। মেয়র হিসাবে তিনি সকল রাজনৈতিক দলাদলির উধ্বেণ থেকে যেরূপ নিরপেক্ষতার সঙ্গে,

৮৫ দেশগ্রিয় ফতীজ্্রমোহন

কলিকা তার নাগরিক কর্তব্য সম্পাদন করেছিলেন তা কর্পোরেশনের সকল দলের কাউদ্দিলারদের সপ্রশংস সমর্থন লাভ করেছিল। এই সময় যতীন্্রমোহনের জনপ্রিয়তা যেমন বেড়ে যাচ্ছিল, সঙ্গে সঙ্গে বাংলার রাজনীতিক্ষেত্রে তাঁর একটা বিরুদ্ধবাঁদী দলও গড়ে উঠছিল এই দলগত ঈর্ষা হিংসায় তিনি অত্যন্ত মানসিক গীড়া অনুভব করতেন। জীবনের শেষ দিন পর্যস্ত তাঁকে দলাঁদলির যন্ত্রণা ভোগ করতে হয়েছিল। কিন্তু তার সহনশীলতা ছিল অপরিসীম ১৯২৬-এর ২র এপ্রিল কলিকাতায় যে বিরাট হিন্দুমুসলমান সা্প্রদায়িক দাঙ্গার হুত্রপাত হয়েছিল তা নিবারণের জন্যে যতীন্দ্রমোহন আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলেন। মৌলান৷ আবুলকালাম আজাদ, কিরণশঙ্কর রায়, পণ্ডিত শ্ঠামস্থন্দর চক্রবর্তী প্রভৃতি বিষয়ে তাঁকে যথেষ্ট সাহায্য করেছিলেন ইত্যবসরে বাংলার রাজনীতিক্ষেত্রে দলাদলি পূর্বের মতই চলতে লাগল কয়েক জন প্রসিদ্ধ বাঙালী কংগ্রেসকর্মী তার নেতৃত্বে কাজ করতে অস্বীকৃত হলেন। তিনি একাধিকবার এদের সঙ্গে (িলন-গ্রচেষ্টা করে ব্যর্থ হলেন। ১৯২৬ খৃষ্টাব্দে কাউন্সিলের নতুন নির্বাচনে যতীন্ত্রমোহনের কংগ্রেসী দল পূর্বের মত সাফল্য অর্জন না করলেও, তিনি ১৯২৭ থুষ্টাব্দে মন্ত্রিমগ্ডলকে ভোটাধিক্যে পরাজিত করলেন। ১৯২৯ খুষ্টাবেও মন্ত্রিমগুল তার দলের হাতে পরাজিত হলেন। গভর্ণমেন্ট তখন বাধ্য হয়ে ছুজনের পরিবর্তে তিন জন মন্ত্রী নিযুক্ত করে মন্ত্রিমগুলের সমর্থক সংখ্যা বাঁড়ালেন। ১৯২৮ খৃষ্টাব্দে কলিকাতায় পণ্ডিত মতিলাল নেহেরুর সভাপতিত্বে কংগ্রেসের অধিবেশনে ওপনিবেশিক স্বায়ত্তশাসনের প্রস্তাব গৃহীত হল। গান্ধীজীর সঙ্গে যতীন্দ্রমোহন প্রস্তাবের সপক্ষে ভোট দিলেন--আর ম্মভাষচন্দ্ ভোট দিলেন বিপক্ষে ১৯২৯-এর লাহোর কংগ্রেসে পণ্ডিত জওহরলালের নেতৃত্বে পূর্ব বৎসরের প্রস্তাব বাতিল হয়ে গিয়ে পূর্ণ শ্বাধীনতার প্রস্তাব

ভারতের মুক্তিসাধক | রর ৮৬

গৃহীত হল। ১৯২৭ খ্রষ্টাব্দে কলিকাতা! কংগ্রেসের ব্যয় সম্বন্ধে যতীন্দ্রমোহন তার বিরোধী দলের মধ্যে সঙ্বর্ষ বেধে গেল। তখন যতীন্দ্রমোহনের হাতে একখান! সংবাদপত্রও নেই কাজেই তর পক্ষে বিরোধী দলের অভিযোগের সম্যক জবাব দেওয়া কিছুটা কঠিন হয়ে দাড়িয়েছিল। এই অবস্থায় পড়ে যতীন্ত্রমোহন “আ্যাডভান্স” নামক প্রসিদ্ধ ইংরেজী দৈনিকের প্রতিষ্ঠা করলেন

১৯২৯ খষ্টাব্দে বঙ্গীয় প্রাদেশিক রাদ্্রীয় সমিতির সভাপতি ছিলেন শ্রীযুক্ত সুভাষচন্দ্র বস্তু এবং সম্পাদক ছিলেন শ্রীযুক্ত কিরণশঙ্কর রায়। এই বৎসর মেয়র নিবাচনের সময় সুভাষ বাবু যতীন্ত্রমোহনের নাম প্রাস্তাব করাঁয় তিনি বিন! প্রতিদ্বন্দিতায় নির্বাচিত হন। এই বংসরই টট্টগ্রাঁম জেল] সম্মেলনের সভাপতি নির্বাচিত হন স্ুভাঁষচন্দ্র। অথচ নিজের জেলার সম্মেলনের সভাপতি নির্বাচন সম্বন্ধে দেশপ্রিয় কিছুই জাঁনতেন না। এতে স্পষ্ট বোঝা যাঁয় যে তাঁর বিরুদ্ধে একট] ষড়যন্ত্র চলছিল। জেলা! সম্মেলনে উভয় দলের সমর্থকদের মধ্যে বিরোধ বেধে গেল এবং শেষ পর্যন্ত মারামারি পর্যস্ত হল। এই বৎসর নভেম্বর মাঁসে বঙ্গীয় প্রাদেশিক রাষ্ট্রীয় সমিতির সভাপতি পদের জন্ঠে স্থভাঁষচন্ত্র এবং যতীন্দ্রমোহনের মধ্যে তীব্র প্রতিযোগিতা হয়েছিল। মাত্র কয়েক ভোটের জন্তে তিনি শ্ভাঁষ বাবুর হাতে পরাগিত হয়েছিলেন। তাঁর সমর্থকরা তাঁকে বুঝিয়েছিলেন যে বিরুদ্ধবাদী দলের গোঁপন অনৈধ প্রচেষ্টার ফলেই তিনি পরাজিত হয়েছেন। অতএব নির্বাচন আইন-সঙ্গত হয় নি। তাই যতীন্দ্রমোহন প্রতিকারের জন্তে নিখিল ভারত কংগ্রেস ওয়াকিং কমিটির দ্বারস্থ হয়েছিলেন ওয়াকিং কমিটি বাংলার 'মাভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক গোলযোগ তাস্তের ভার দিয়েছিলেন শ্রীযুক্ত এম্‌. এস, আনীর উপর। কিন্ত এর পর পরই ১৯৩১ খৃষ্টাব্দে পুনরায় আইন অমান্ত আন্দোলনে সমস্ত দেশ ষেতে

৮৭" দেশগ্রিয় বতীক্রমোহন

উঠল বলে তদন্ত বেশী দূর এগোয় নি। ১৯৩০ খুষ্টাবের থেকে যতীন্দ্রমোহনের স্বাস্ত্যে অবনতি দেখ] দেয় £ তার রক্তের চাপ বৃদ্ধি পায়। তিনি ডাক্তারদের উপদেশে সমুদ্রবায়ু সেবনের উদ্দেস্তে সিঙ্গাপুর যাত্রা! করেন। সেখান থেকে ফেরার পথে রেঙ্গুন প্রবাসী বাঙালী এবং ব্রহ্গ- বাসীদের অনুরোধে রেস্কুনে :২1৪ দিন থাকেন এবং কয়েকটি রাঁজনৈতিক বন্তৃত৷ করেন মার্চ মাসে কলিকাতায় ফিরে আসার পর সহসা রেঙ্গুন

পুলিশের আদেশে রাজদ্রোহের অপরাধে তকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং রেস্ুনে নিয়ে যাওয়া হয়। বাংলার এই বীর সন্তানকে বিরাট জনতা বিদায়-অভিনন্দন জানায়। রে্ুনে বিচারে তাঁর প্রতি দশদিন কারাঁবাসের দণ্ড দেওয়! হয়। কারামুক্তির পর রেঙ্গুনে এবং ফিরে এসে কলিকাতায় তিনি জনগণের বিপুল অভ্যর্থনা লাভ করেন। সময় অসহযোগ আন্দোলনে সমগ্র দেশ মুখর ফিরে এসে কর্ণওয়ালিস স্কোয়ারের এক ছাত্রসভাম্ন নিষিদ্ধ পুস্তক পাঠের অপরাধে তিনি ছয় মাস সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন। এই বৎসর কারাগারে থাকার সময় তিনি পঞ্চম বারের জন্তে কলিকাত|। কর্পোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হন। কারামুক্তির পর পণ্ডিত মতিলাল নেহেরুর মনোনয়নক্রমে তিনি কারারুদ্ধ কংগ্রেস প্রেসিডেন্ট পণ্ডিত জওহরলাল নেহেরুর স্থলে অস্থায়ীভাবে কংগ্রেস প্রেসিডেণ্ট নির্বাচিত হন। এর কিছুদিন পরে জালিয়ানওয়ালাবাগে রাজদ্রোহমূলক বক্তৃতা দানের অভিযোগে তাকে গ্রেপ্তার করে দিমী আনা হয় এবং বিচারে তার প্রতি এক বৎসর বিনাশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেয়া হয়। এর কিছুদিন পরে তার সাধবী পত্বী শ্রীমতী নেলী সেনগুপ্তাকেও দিলীতে গ্রেপ্তার কর! হয় এবং তার প্রতি মাস বিনাশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেয়া হয় বাংলায় এই সংবাদ পৌছানোর পর ঘতীন্দ্রমোহনের 'সম্মানার্থে কলিকাতা! কর্পোরেশনের সভা! স্থগিত রাখা হয় এবং সহরে

ভারতের মুক্তিসাধক

আংশিক হরতাল প্রতিপালিত হয়। কার্ধত যতীন্দ্রমোহন এবং তার পত্বীকে এবার তিন মাঁসের বেশী কারাযন্ত্রণা ভোগ করতে হয় নি। কেননা ১৯৩১-এর জাগয়ারী মাসে আইন অমান্ত আন্দোলন সম্বন্ধে গান্ধী- আরুইন চুক্তি সম্পাদিত হওয়ায় ২৭শে জানুয়ারী দিল্লী জেল থেকে সন্ত্রীক যতীন্দ্রমোহন মুক্তি পাঁন। যতীন্দ্রমোহনের কারামুক্তির কিছু পরেই গান্ধী-আঁরুইন চুক্তি অন্ু- মোদনের জন্টে করাচীতে কংগ্রেসের বিশেষ অধিবেশন আহত হয়। অধিকাংশ প্রদেশের ভোটে যতীন্দ্রমোহন করাঁচী কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচিত হন। তার সর্বভারতীয় জনপ্রিয়তা কিরূপ বেড়ে গেছিল এট! তারই গ্রমাণ। কিন্তু দেশপ্রিয় সর্দার বল্পভভাই প্যাটেলের অন্ুকুলে তাঁর নিজের দাবী ত্যাগ করেন ফলে সর্দারজীই করাচী কংগ্রেসের সভাপতি মনোনীত হন। এই বৎসর মে মাসে দেশপ্রিয় দক্ষিণ ভারতের কেরল! গ্রেসের সভাপতি নির্বাচিত হন। এই বৎসর যতীন্দ্রমোহনের নিজের জেল! চট্টগ্রামে হিন্দুদের উপর ভীষণ লুঠতরাজ হয়। যতীন্দ্রমোহনের উদ্যোগে লুঠতরাঁজ সম্বন্ধে অনুসন্ধানের জন্যে একটি বেসরকারী তদস্ত কমিটি গঠিত হয়। তিনি নিজে তদন্ত কমিটির অন্ততম সদস্য ছিলেন। চট্টগ্রামের ব্যাপার নিয়ে তদন্ত কমিটির সঙ্গে বাংলা গভর্ণমেণ্টের প্রচুর বাকবিতণ্ড। এবং মতদ্বৈধ হয় এই বৎসর সেপ্টেম্বর মাসে হিজলী বন্দীবাসে অসহায় রাজবন্দীদের উপর পুলিশ গুলী বর্ষণ করে। ফলে কয়েকজন রাজবন্দী হতাহত হয়। এই ঘটনায় যত্তীন্ত্রমোহন ভয়ানক উত্তেজিত হয়ে ওঠেন। ১৯৩০ থেকে তার যে রক্তের চাঁপ বৃদ্ধি রোগ হয়েছিল, তা আর তাকে ছাড়ে নি। তিনি অন্ুস্থ দেহ নিয়েও দেশসেবা করে চলেছিলেন। হিজলী বন্দীবাঁসের দুর্ঘটনার সময় তিনি ভীষণ অসুস্থ | ত৷ সত্বেও ডাক্তারদের বারণ না গুনে তিনি কর্পোরেশনের সভায় উপস্থিত

৮৯ দেশপ্রিয় যতীন্ত্রমোহন

হন এবং তীব্র ভাষায় একটি স্মরণীয় ব্তৃতায় পুলিশের এই জুলুমের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জ্ঞাপন করেন। এর পরে তার রক্তের চাপ আরও বৃদ্ধি পেয়ে তিনি ভীষণ যন্ত্রণ। পেতে থাকেন তখন ডাক্তাররা! তাঁকে শ্রীতপ্রধান দেশে_ইংল্যাণ্ডে গিয়ে কিছুকালের জন্তে বাস করার উপদেশ দেন।, ১৯৩১-এর অক্ট বর মীসে যতীন্দ্রমোহন দ্বিতীয়বার সন্ত্রীক ইংল্যাণ্ড যান। মহাত্ব! গান্ধী তখন দ্বিতীয় গোল টেবিল বৈঠক উপলক্ষে বিলাতে গান্ধীজীর সাহচর্ষে যতীন্দ্রমোহন প্রচুর আনন্দ পান।

গোল টেবিল বৈঠক শেষ করে গান্ধীজী ভারতে ফিরে দেখেন যে সরকারপক্ষ থেকে গান্ধী-আরুইন চুক্তি ভঙ্গ কর! হয়েছে অনেক খ্যাত- নামা কংগ্রেসকর্মীকে পুনরাঁয় কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। শীঘ্রই গান্ধীজীঃ জওহরলাল নেহেরু, স্থভষচন্ত্র বস্তু প্রভৃতি নেতার! গ্রেপ্তার হন। আবার আইন অমান্ত আন্দোলন নুরু হয়। বিলাতে যতীন্ত্রমোহনের কানে একথা যাওয়ায় তাঁর পক্ষে নিশ্কিয় হয়ে থাক! অসম্ভব হয়ে পাড়ায় তার স্বাস্থ্য তখনও যথেষ্ট ভাল হয় নি। এই অবস্থায় তিনি ভারতে ফিরে আসেন এবং বোছ্াইয়ে ভারতের মাটিতে পদার্পণ করতে না করতেই তিনি পুলিশের হ'তে ধরা পড়েন। সেখান থেকে তাকে দ|ঞ্জিলিং-এ স্থানান্তরিত কর! হয়। দাঁজিলিং-এ ত্বার স্থাস্থা আরও খার]প হয়ে পড়ে। তখন শ্রীধুক্ত! নেলী সেনগুপ্তার আপ্রাণ প্রচেষ্টার তিনি জলপাইগুড়ী জেলে স্থানাস্তরত হন। এখানে £তিনি এক বছরের অধিককাল কারার ছিলেন। পরে এখানেও তার স্বাস্থ্য এত বেশী খারাপ হয়ে পড়ে যে সরকারী কর্তৃপক্ষ বাধ্য হয়ে তাকে কলিকাত1 মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে আমেন। ১৯৩৩ থৃষ্টাব্ষে কলিকাতায় কংগ্রেস অধিবেশন হবে বলে স্থির হয়। শ্রীমতী নেলী সেনগুপ্তা এই অধিবেশনের সভানেত্রী নির্বাচিত হন। স্বামীর সাঁনন্দ সমর্থনে তিনি এই সম্মানের পদ গ্রহণে শ্বীকৃতা হন।

ভারতের মুক্তিসাধক ৯৮

কিন্ত সরকারী বিধিনিষেধের বেড়াজালের ফলে ঘথারীতি এই অধিবেশন কর! সম্ভব হয় নি। তবু যুক্ত নেলী সেনগুপ্ত। নির্ধারিত দিনে ছোট একটি ' জনতার পুরোভাগে ফড়িয়ে হইয়া এই কর্তব্য সম্পাদনের চেষ্টা করায় পুলিশের হাতে ধরা পড়েন ২1৩ দিন পরে তাকে ছেড়ে দেওয়। হয়। ইত্যবসরে যতীন্দত্রমোহনের রক্তের চাপ আরও বেড়ে যাচ্ছিল। গভর্ণমেণ্ট তাঁকে রীচীতে শৈলাবাসে অন্তরীণ রাখার সিদ্ধান্ত করেন। শ্রীযুক্ত! নেলী সেনগুগ্তাকে তাঁর সঙ্গে বাস করার অনুমতি দেয়া হয়। ১৯৩৩এর €৫ই জুন তারা রাচী যান। এখানেও তার রোগ উপশমের কোন লক্ষণ দেখা যায় না | রাচীতে এক মাসের অধিককাল রোগ ঘন্ত্রণ| ভোগ করে ২২শে জুলাই রাত্রে এই বীর বাঙ্গালী নেতা স্বদেশ স্বজন থেকে দূরে প্রবাসে মাত্র ৪৯ বৎসর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। এই ছুঃসংবাদে সমগ্র বাংলাদেশ শোকে সমাচ্ছন্ন হয়ে যায়। ২৪শে জুল([ই যতীন্দ্রমোহনের মৃতদেহ কলিকাতায় নিয়ে আসা হয় এবং বিরাট শোভাযাত্রা করে কেওড়াতল! শ্বশান ঘাটে ভার মৃতদেহ নিয়ে যাঁওয়! হয়। অনেকের ধারণা যে যতীন্্রমোহনের শব-শোভাযাত্রা যত বড় হয়েছিল, স্বয়ং দেশবন্ধুর শব-শোভা যাত্রাও তত £বড় হয়নি। মাত্র ৪৯ বৎসর বয়সে বংলার বীরসন্তান দেশপ্রিয়ের মৃত্যুতে বাংলার যে ক্ষতি হল, আজও তার পরিপূরণ হয় নি।

তার জীবন চরিত্র ছিল পূর্ণাঙ্গ দেশ-সেবা তাঁর জীবনের ব্রত হলেও, তিনি ছোট বেলা থেকে খেলা-্ধুলোর বড় সমর্থক ছিলেন। পরিণত বয়সেও টেনিস র্যাকেট হাতে নিয়ে তিনি টেনিস খেলতেন। ভারতের আর কোন নেতার চরিত্রে এগুণটি দেখা যায় না। শত কাজের ফাকেও খেলার মাঠে না গেলে তার যেন তৃপ্তি হত না। তিনি কলিকাতার প্রসিদ্ধ

৯১ মৌলানা আবুলকালাম আজাদ

টেনিস ক্লাব সাউথক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। এছাড়া তিনি অন্তান্ বহু ক্লাব ব্যায়ামাগারের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। তাঁর অকাল মৃত্যুতে বাংলার ক্রীড়ীজগতও প্রচুর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে

মৌলানা আবুলকালাম আজাদ

আধুনিক ভারতের রাঁজনৈতিক নেতাদের মধ্যে মৌলানা আবুলকালাম আজাদের একটি বিশিষ্ট স্বান আছে। পুরাণে দল এবং নতুন দলের রাজনৈতিক নেতাঁদের মধ্যে তিনি সেতু-স্বরূপ। কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময় ভারতীয় কংগ্রেসের জওহরলাল নেহেরু প্রভৃতি নেতাঁর! যেমন মৌলান! সাহেবের সঙ্গে পরামর্শ না করে কিছু করেন না, তেমনই স্বয়ং মহাতআ্স! গান্বীও প্রতি পদক্ষেপে মৌলানা! আজাদের উপদেশ গ্রহণ করেন মৌলানা! সাঁহেবের বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব এবং তাঁর জ্ঞানের বিশাল পরিধিই এই প্রভাঁবের কারণ। বস্ত্রত মৌলাঁন| সাহেবের ইসলামী শাস্ত্রে পাণ্ডিত্য আধুনিক জগতে দুর্লভ তাঁকে দেখলে প্রাটীন যুগের দিল্লীর বাদশাহদের দরবারের সুপপ্ডিত ব্যক্তিদের কথা মনে পড়ে যাঁয়। প্রাচ্য পাশ্চাত্য দর্শন শাস্ত্রে তার প্রগাঢ় পাণ্ডিত্য। শুধু যে ভারতের জাতীয় জীবনের উপরই তিনি প্রভাব বিস্তার করেছেন ত| নয়-_তার লেখনী ভারতের বাইরে অনেক দেশেই তীর প্রভাব বিস্তারের সহ্থায়তা করেছে। আফগানিস্থান, স্থদূর মধ্য প্রাচ্য এবং মিশরে তার আরবী রিনাবদীর অপরিসীম প্রভাব জগতের যেখানেই আরবী এবং পারশী

ভারতের মুক্তিসাধক নি

ভাষায় সাহিত্যচর্চা এবং কথ। বল! হয়, সেখানেই মৌলানা সাঁহেবের নাম সুপরিচিত এবং সম্মানিত।

তার খ্যাতিটা যেমন আন্তর্জাতিক, তাঁর ব্যক্তিত্বও তেমনই আন্তর্জাতিক মূলত মৌলানা আজাদ ভারতীয় হলেও, তার জন্ম হয়েছিল সুদূর আরবদেশে ইসলামের তীর্থ স্থান মক্ক। নগরীতে ১৮৮৮ খৃষ্টাবে। তিনি পণ্ডিত জওহরলাল নেহেরুর চেয়ে মাত্র এক বছরের বড়। মুসলিম জগতের সর্বাপেক্ষা বড় এবং প্রাচীন বিশ্ববিদ্থলয়, কায়রোর সুবিখ্যাত আলমাজহার বিশ্ববিগ্থালয়ে বাল্য বয়সে তিনি ধর্মশান্ত সম্বন্ধে শিক্ষা লাভ করেছিলেন। মাত্র ১৫ বৎসর বয়সে তিনি আরবী পার্শী ভাষায় অপূর্ব কৃতিত্ব অর্জন করেছিলেন এবং ইসলামী ধর্ম শান্ত দর্শনে তিনি এত পাপ্ডিত্য দেখিয়েছিলেন যে সবাই তাঁকে শিশু-গ্রতিত1 বলে মনে করত। তার পিতা নিজেও একজন সুপরিচিত এবং লুপপ্ডিত গ্রন্থকার ছিলেন। তা ছাড়! তিনি ধর্ম গুরুও ছিলেন। ১৮৫৭ খুষ্টাব্দের সিপাহী বিদ্রেহের পর ভারত ত্যাগ করে তিনি মধ্য প্রাচ্যের ইরাক, ইরাণ, তুরস্ক, মিশর, প্যালেষ্টাইন প্রভৃতি দেশে ভ্রমণ করেছিলেন এই সব দেশের সর্বত্রই তাঁর প্রচুর শিষ্য ছিল। পরে মৌলানা আজাদকে নিয়ে তিনি এসে ভারতে বসবাস সুরু করে দিলেন। ১৯০৮ খুষ্টান্ডে ভারতে তার যখন মৃত্যু হয় তখন সবাই আশা করেছিল যে তাঁর প্রতিভাশালী পুত্রও হয়ত পিতার আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে ধর্সগুরক্প ব্যবসা অবলম্বন করবেন। ধর্মগুরুর ব্যবসায় অবলম্বন করলে মৌলান! আজাদ আজ মাননীয় আগা থাঁর চেয়ে কোন অংশে কম প্রভাবশালী ধর্মগুরু হতেন না।

মৌলানা আজাদ কিন্তু ধর্মগুরু হলেন নাঃ আধুনিক জ্ঞান বিজ্ঞান দর্শন পাঠ করে তীর মনে বিপ্লবের বীজ উপ্ত হয়েছিল। বিভিন্ন দেশ

৯৩ মৌলানা আবুলকালাম আজাদ

ভ্রমণের ফলে তার চরিত্রে ধর্মীন্ধতা বা গৌড়ামীর স্থান ছিল না। এইথাঁনে একটি বিষয় উল্লেখ করতে চাই £ মৌলানা আজাদ প্রথম থেকে বাংলীকেই তাঁর স্বদেশ বলে গ্রহণ করেছিলেন। তার বাসস্থান এবং কর্মকেন্্র ছিল কলকাতায় তিনি স্থির করলেন যে ধর্মগুরু না সেজে তিনি ঘুমন্ত মুসলিম জন্গণের মনে এনে দেবেন স্বাধীনতার স্বপ্র-তাদের ধর্মান্ধতা কুসংস্কারের হাত থেকে মুক্তি দেবেন এই উদ্দেশ্টে তিনি “আল হিলাঁল” নামে একটি উর্ঘ পত্রিক! প্রক।শ করলেন এবং নিজে “আজাদ” এই ছস্ক নামে সেই পত্রিকায় লিখতেন। অল্প দিনেই এই পত্রিকাখানির প্রচার প্রসার অসম্ভব বেড়ে গেল--চতুর্দিকে হৈচৈ স্তর হয়ে গেল। তার অগ্থিময় বাণী দেশের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ল। ভারতের সংবাদিকতার ইতিহাসে সে এক অভিনব ব্যাপার। “আল হিলাল” নিয়ে চারদিকে সমালোচনার হিড়িক পড়ে গেল। তরুণ মুসলমান সমাজ “মাল হিলালের” নির্ভীক সমালোচনা যুক্তিসঙ্গত রচনা পাঠ করে খুসীই হত। কিন্তু পত্রকাটির বৈপ্রবিক স্থরে চটে গেলেন প্রাচীনপন্থী গৌড়! মুসলমানরা তরুণ সম্পাদকের প্রাণনাশের ভীতিপ্রদশনও করা হয়েছিল। কিন্তু আবুলকালাম দমবার পাত্র ছিলেন না। তিনি তার কাজ সমানে চালাতে লাগলেন। ভারতের সংবাদপত্রের ইতিহাসে “সাল হিলালের” মত অল্প সময়ে এত প্রভাব আর কোন পত্রিকা বিস্তার করতে পেরেছিল কিনা সন্দেহের বিষয়। “আজাদের” শক্তিশালী আক্রমণের ফলও ফলল “আল হিলালের” তীব্র সমালোচনার ফলে মুসলিম লীগের চোখ খুলল মুসলিম লীগের পরিচ1লকরা এতদিন পথস্ত মুসলমান জনসাধারণকে রাজনীতি থেকে দুরে সরিয়ে গতর্নমেন্টের স্নেহচ্ছায়ায় পরিপুষ্ট করে রাখার চেষ্টায় ছিলেন “আল হিলালের” তীব্র কশাঘাতে সজাগ হয়ে তীর! মুনলিম-পীগকে রাজনীতি-সচেতন প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে সচেষ্ট হলেন।

ভারতের মুক্িসাধক ৯৪

পত্রিকাটির অভূতপূর্ব সাফল্যে গভর্ণমেন্টও শঙ্কিত হয়ে উঠূলেন। কিন্তু চেষ্টা করেও তাঁরা পত্রিকাটিকে দমন করার স্থযোগ পাচ্ছিলেন না। ১৯১৪ থুষ্টান্ধে মহীযুদদ আরস্ভ হওয়ায় তাঁদের সে সুযোগ এল একমাত্র “আল হিলালেই” মৌলানা! আজাদ গভর্ণমেন্টের নীতি কার্ধাবলীর তীব্র সমালোচনা কয়্ছিলেন। এলাহাবাদের “পায়োনিয়া”র পত্রিকাটি ছিল তখন সরকারী নীতির বড় লমর্থক। এই পত্রিকাটি “আল হিলালে”র তীব্র সমালোচনায় মুখর হয়ে উঠল। শীঘ্রই বিলাতের পার্লামেন্ট পর্বস্ত নড়ে উঠল পার্লামেণ্টে “আল হিলাল" নিয়ে প্রশ্ন উঠল সুযোগ বুঝে ভারত গভর্ণমে্ট ভারতরক্ষা বিধান প্রয়োগ করলেন। “আল হিলালে*র জামানত বাজেয়াপ্ত করে গভর্ণম্ণ্ট জাঁমানৎম্বরূপ আরও দশ হাজার টাকা দাবী করলেন। “আল হিলালে”র প্রকাশ বন্ধ হয়ে গেল। কিন্তু আবুলকালাম আজাদ অত সহজে পরাজিত হবার লোক ছিলেন না। তিনি “আল বালাঘ» নামে একটি নতুন পত্রিকা প্রকাশ করলেন এরও নীতি হল সরকারী কার্ধাবলীর তীব্র সমালোচনা গভর্ণমেণ্টের পক্ষে অপমান হজম করা কঠিন হয়ে দাড়াল। পাঞ্জাব, দিল্লী, যুক্তপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ এবং বোগ্বাইতে মৌলানা আজাদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করে আদেশ জারী কর! হল। অবশেষে তাঁর প্রধান কর্মকেন্ত্র বাংলাতেও তার প্রবেশ নিষিদ্ধ হল। এত করেও গভর্ণমেণ্ট নিরঘ্ত হলেন না। তাকে বিহার প্রদেশের অন্তর্গত রাঁচীতে অস্তরীণ কর! হল এবং তাঁর বিরুদ্ধে বিপ্রবী কার্যকলাপের অভিযোগ আনীত হল। এর ফলে তিনি আরও বেশী প্রভাবশালী এবং শক্তিমান হয়ে উঠলেন। তিনি ভারতের মুসলমান জনমতে যে নতুন ভাবধার! এনে দিয়েছিলেন শীঘ্রই তার ফল ফলল। তাকে অস্তরীণ করার কয়েক মাস পরেই ১৯১৬ থুষ্টাকে কংগ্রেস মুসলিম *

৯৫ মৌলানা আবুলকাঁলাম আজাদ

লীগের মধ্যে একটা বোঝাপাঁড়া হল এবং লক্্ৌতে সুাসিদ্ধ কংগ্রেস- লীগ চুক্তি সম্পাদিত হল। প্রায় চার বছর অন্তরীণ থাকার পর ১৯২০ খৃষ্টানদের জাহুয়।রী মাসে মৌলান পাব মুক্তি পেলেন। তিনি এক মুহুর্ত বিলম্ব না করে কংগ্রেসের অসহযোগ এবং খিলাফৎ আন্দোলনে ঝাপিয়ে পড়লেন। তার যে!গদানে গান্ধীজী প্রবতিত অসহযোগ আন্দোলনের প্রচুর শক্তি বৃদ্ধি হল। প্রি্ন অব ওয়েস্দের অভ্যর্থনার বিরোধিতা করে সার! ভারতে যে বয়কট আন্দোলন হয়েছিল তাতে মৌলানা সাহেব উল্লেখযোগ্য ংশ গ্রহণ করেছিলেন। আবার ১৯২১ খুষ্টাব্দের ১*ই জানুয়ারী তিনি দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জনের সঙ্গে ধরা পড়ে এক বৎসরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হলেন। সেই থেকে ন্বদেশের স্বাধীনতার জন্তে তাকে বহুবার কারাবরণ করতে হয়েছে। কিন্ত তিনি তার আদর্শকে কখনও ক্ষুঃ হতে দেন নি। তার কারামুক্তির পরে পরেই তিনি ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন এবং দিশ্লীর বিশেষ অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেছিলেন। অনেকের ধারণা আছে পণ্ডিত জওহরলাল নেহেরুই বোধ হয় সর্বাপেক্ষা কম বয়সে ভারতের কংগ্রেস সভাপতি হয়েছিলেন। কিন্তু সে ধারণা সত্য নয়। মৌলানা আবুলকালাম আজাদই সর্বাপেক্ষা কম বয়সে কংগ্রেসের সভাপতি হয়েছিলেন তিনি যখন প্রথম সভাপতি হন, তখন তার বয়স ছিল মাত্র ৩৫ বংসর। আর জওহরলাল যখন সভাপতি নির্বাচিত হন, তখন তাঁর বয়স ছিল ৩৯ বৎসর মৌলানা সাহেবের আগে কিংবা পরে এত কম বয়সে আর কেউ কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচিত হন নি। সভাপতি নির্বাচিত হবার পর থেকে এখন পর্যন্ত আবুলকালাম আজাদ ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসে একটি বিশিষ্ট স্থান দখল করে আছেন। ১৯৩০

ভারতের মুক্তিসাধক ৯৬

খৃষ্টাব্দে আইন অমান্ত আন্দোলনের সময় তিনি অস্থায়ীভাবে কিছুদিন সভাপতির কাজ করেছিলেন। তারপর ১৯৪* খৃষ্টাব্দে কংগ্রেদের রামগড় অধিবেশনে তিনি পুনরায় কংগ্রেসের সভাপতিত্ব করেন। আজ পর্যন্ত কারারদ্ধ মৌলানা আজাদই জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতি পদে অধিষঠিত আছেন ১৯৪২ খ্ষ্টাব্দের আগষ্ট প্রস্তাবের ফলে তিনি অন্তান্ত কংগ্রেস নেতাদের সঙ্গে ধৃত হয়ে আহমদনগর ফোর্টে কারা রুদ্ধ আছেন। কারারুদ্ধ অবস্থাতেই কলিকাতায় তার পত্বী-বিয়োগ হয়। মৃত্যুশয্যায় শায়িত! প্রিয়তম! পত্ীর শয্যাপার্থ্ে উপস্থিতির সুযোগও মৌলানা সাহেবকে দেওয়া হয়নি। জীবনে এত ত্যাগ খ্বীকার এবং যন্ত্রণ| সহা করেও ভারতের জাতীয় কংগ্রেস এবং ভারতের স্বাধীনতার আদর্শে মৌলানা আজাদের অবিচলিত নিষ্ঠা বিস্ময়ের উদ্রেক না করে পারে না। গান্ধী-বড়লাট পত্রবিনিময় প্রকাশিত হবার পর ১৯৪৩ খৃষ্টাব্বের ১৩ই ফেব্রুয়ারী আহমদনগর ফোর্ট থেকে কংগ্রেস সভাপতি- রূপে মৌলানা আজাদ ভারতের তৎকালীন বড়লাট লর্ড লিন্লিথগোকে যে পত্র লিখেছিলেন, তাঁর মধ্যে তার মনের দৃঢ়তা, সত্যনিষ্ঠা নির্ভীকতা পরিস্ফুট এখানে আলোচ্য পত্রের অংশবিশেষ উধৃত না৷ করে পারলাম নাঃ “আপনি যখন বিব্চেনা করেছেন যে গ্তায়সঙ্গত কারণে হিংসার প্রয়োগ করা হয়েছে, তখন আপনি নিজেই নান! প্রকারে হিংসা সমর্থন করেছেন। কংগ্রেস কিন্তু মতে এবং কার্ষে অহিংসাঁকেই আকড়ে আছে এবং ২৩ বৎসর ধরে এই পদ্ধতিই জনসমাঁজে প্রচার করেছে ।"'কংগ্রেস যদি স্বেচ্ছায় হিংসা ধ্বংসাত্মক কার্ষে প্ররোচনা অন্ুপ্রেরণ| দিত তবে ভারতে তার ফল কি হত সে কথ আপনাকে বিবেচনা করে দেখতে বলি_-কেননা পর্যন্ত যা ঘটেছে তার চেয়ে একশগুণ বেশী খারাপ অবস্থা স্ষ্টি করার মত সবব্যাপী প্রভাব কংগ্রেসের আছে 1"

৯৭ মৌলান! আবুলকালাম আজাদ

“আপনি এই বলে মহাত্। গান্ধীকে লেখা আপনার চিঠি ( ৫ই ফেব্রুয়ারী, ১৯৪৩) শেষ করেছেন যে আজ হোক কাল হোক কংগ্রেসের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগগুলোর সম্মুখীন কংগ্রেসকে হতেই হবে। যেদিন আমরা পৃথিবীর জাঁতিপুঞ্জের সম্মখীন হয়ে তাদের হাতেই বিচারের ভার দিতে পারব সেদ্দিনকে আমর! সাদর অভ্যর্থনা জানাব। সেদিন কিন্ত ব্রিটিশ গভর্ণমেণ্ট সহ আরও অনেককে তাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের প্রত্যুত্তর দিতে হবে আমার বিশ্বাস যে তারাও সেই দিনটিকে সাদর অভ্যর্থনা জানাবে 1”

£ মৌলাঁন। আজাদ হিন্দুমুসলমানের মিলন-প্রয়াসী এবং তিনি অখণ্ড ভারতে বিশ্বাসী ।)১ তিনি কোন ধর্ম বা জাতির স্বার্থ সক্কোচের বিরোধী তবে তাঁর কাছে সাম্প্রদায়িক স্বার্থ অপেক্ষা ভারতের স্বাধীনতার প্রয়োজন আগে। তিনি বিভিন্ন ভারতীয় ভাষার জন্তে ল্যাটিন অক্ষর প্রবর্তনে ইচ্ছুক। মনোবৃত্তি এবং বিশ্বাসের দিক থেকে মৌলানা সাহেব খাঁটি গান্ধীবাদী নন, কিন্তু ১৯২০ থুষ্টাব্ব থেকে তিনি গান্বীজীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ বন্ধু এবং পরামর্শদাতা অপেক্ষাকৃত বয়স্ক রাজনীতিবিদদের মধ্যে তাঁর মতবাদ সবচেয়ে বেশী বিপ্রবী। তাকে ঠিক জননেতা বল! চলে না এবং জননেত। হবার প্রয়াসও তার নেই জ্ঞানার্জন তার জীবনের শ্রেষ্ঠ স্বপ্ন এবং তিনি নির্জন পাঠাগারে বসে বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশুনে। করতে অত্যন্ত ভালবামেন। তিনি যেমন শক্তিশালী লেখক, তেমনই শক্তিশালী বক্ত1। তার বাগ্মিতার গুণে বিরাট বিরাট জনসভা মন্ত্রমুদ্ধ হয়ে থাকে এত গুণাবলী সত্বেও মৌলান! সাহেবের জননেতা হবার প্রয়াস নেই। মৌলান! আজাদ নিরহঙ্কার এবং তাঁর উচ্চাকাজ্খ! নেই বললেই, চলে তিন্নি যেন নিছক স্বভাব বশতই রাজনীতি করে চলেছেন। ১৯২৫ সালে , দেঁশবন্ধুর যখন সৃত্যু হলো, স্থুভাষচন্ত্র তখন জেলে মৌলানা আঞঙাদ

ভারতের মুক্তিসাধক , ৯৮

ইচ্ছ৷ করলেই বাংলার অবিসম্বাদী নেতার আসন গ্রহণ করতে পাঁরতেন। কিন্তু কারও কথা তিনি শুনলেন ন1। স্বয়ং মহাত্ম। গান্ধী কলিকাতায় এলেন তাঁকে বোঝাতে তাঁকে এক সঙ্গে কলিকাতার মেয়র, বলীয় প্রাদেশিক রাস্ত্রীয় সমিতির সভাপতি এবং আইনস্ভায় স্বরাজ্যদলের দলপতির পদ দেবার প্রস্তাব কর! হয়েছিল কিন্তু মৌলান! সাহেব স্বেচ্ছায় এই ত্রিমুকুট প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। তিনি তখন ইসলামী ধর্মগ্রস্ কোরাণের একটি নতুন ভাষ্য রচনায় ব্যস্ত ছিলেন। তীর কোরাণের ভাষ্য প্রকাশের পর সমগ্র মুসলিম জগতে সাড়া পড়ে এই প্রামাণ্য ভাস্তখানির বিক্রয়ও অমস্তব রকম বেণী। মৌলান1 আজাদের মত ত্যাগী, নির্লোভ নিভীক ম্বদেশ প্রেমিক বর্তমান ভারতে দুর্লভ

পণ্ডিত জওহরলাল নেহের

তরুণ ভারতের অবিসম্বাদী নেতা বলতে পণ্ডিত জওহরলাল নেহেরুকেই বোৌবাঁয়। তিনি কিন্তু বয়সের দিক থেকে একটুও তরুণ নন। বর্তমানে তীর বয়েস ৫৫ বৎসর অথচ বিস্ময়ের বিষয় এই যে জনসমাজ আজও তাঁকে তরুণ নেতা বলেই জানে পণ্ডিতজীর স্থুনিপুন কর্মঠ দেহাকৃতি এবং চিন্তাধারার চির তারুণ্যই বোধ হয় লোকের মনের ধারণাকে সঞ্জীবিত করে রাখে বর্তমানে ভারতে জনপ্রিয়তার দিক থেকে মহাত্মা গান্ধীর পরেই জওহরলালের স্থান। বিদেশেও মহাত্মা গান্ধীর পরেই তার স্থান। কোন কোন ক্ষেত্রে আবার গ্ান্ধীজীর উপরেও তাকে স্থান দেওয়! হয়। স্বদেশে তার জনপ্রিয়তার হেতু দেশের

বে পর্তত জওহরলাল নেহেরু

জন্তে অপূর্ব আত্মত্যাগ আত্মত্যাগের দিক থেকে একমাত্র গান্ধীজী ছড়া আর কেউ বোধ হয় তাকে ছাড়িয়ে যেতে পারেন না বিদেশে তার প্রসিদ্ধির কারণ তাঁর বহু-বিক্রীত আত্মজীবনী নিজেকে কেন্দ্র করে তিনি এই আত্মজীবনীর মারফৎ বিদেশবাসীদের নিপীড়িত পরাধীন ভারতের মর্মবাণীই গুনিয়েছেন। ১৯২৬ খুষ্টান্দের এপ্রিল মাসে ইংল্যাণ্ডে এই বইখাঁনির গ্রথম প্রকাশের পর অনেক সংস্করণ নিঃশেষে বিক্রয় হয়ে গেছে কিছুকাল পূর্বে এই বইখানির একখাঁনি আমেরিকান সংস্করণও প্রকাশিত হয়ে জনসমাজে সমাদর লাভ করেছে তার বইয়ের মারফৎই পাশ্চাত্যজগণ্থ সর্বপ্রথম পরিপূর্ণ ভাবে ভারতবর্ষকে জানবার স্থযোগ পেয়েছে বললে বোধ হয় অত্যুক্তি হবে না। আত্মজীবনীতে বণিত কাহিনীর অ£ভনবত্ব এবং বৈচিত্র আছেই--তা'র উপর আছে পণ্ডিত জওহরল!ল নেহেরুর অপূর্ব লেখনী-নৈপুণ্য পাশ্ত্যদেশবাসীরা যে ভাষায় কথ বলে, যে ভাষায় চিন্তা করে, পণ্ডিতঞ্জী সেই ভাষায় তাদের ভারতের কথ শুনিয়েছেন ; তাই বইটির এত সমাদর। পরলোকগত সি, এফ, এগুরুজের কাছে একজন ইংরেজ আই-সি-এস্‌ কর্মচারী একবার বইটি সন্বন্ধে মন্তব্য করেছিলেন £ “এ লোকটিকে আমর! বুঝতে পারি। তিনি আমাদেরই একজন এবং আমাদের ভাষাতেই কথা বলেন।” পগ্ডিতজীর সম্বন্ধে কথাটা অনেকট1 খাটে বই কি!

১৮৮৯ খুষ্ট/ন্বে পণ্ডিত জওহরলাল নেহেরুর জন্ম। তিনি পণ্ডিত মতিলাল নেহেরুর একম।ত্র পুত্র। পিতার ইচ্ছায় তিনি অল্প বয়সেই ইংল্যাণ্ড যান। প্রথমে হারোর পাবলিক স্কুলে--পরে অক্সফোর্ডে তিনি অধ্যয়ন করেন। সাধারণ শিক্ষা শেষ করে তিনি ব্যারিষ্টারী পড়েন। ব্যারিষ্টারী পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে তিনি স্বদেশে ফিরে আসেন এবং আইল- ব্যবসায়ে আত্মনিয়োগ করেন। ১৯১৯ খুষ্টান্বের দিকে ভারতীয়

ভারতের মুক্তিসাধক ১৪৩

রাজনীতিতে পুরোপুরি যোগ দেবার পূর্বে পণ্ডিত জওহরলালের জীবনে তেমন কিছু বৈশিষ্ট দেখা যায় নি। ছাত্র হিসাবে তিনি গড়ে ভাল এবং বুদ্ধিমান ছাত্র ছিলেন__এই পর্যন্ত কিন্ত রাজনীতিতে যোগ দেবার পূরে তাঁর চরিত্রের সমন্ত গুণগুলে! আত্মপ্রকাশের পথ খুঁজে পায় নি। জওহরলালের চরিত্রে প্রাচ্য পাশ্চাত্যের বিভিন্ন "গুণের অপুর্ব সমাবেশ দেখা যায়। এই অদ্ভুত সংমিশ্রণ সম্বন্ধে তিনি নিজেও সম্পূর্ণ সজাগ দেশের প্রতি তাঁর প্রবল অন্নুরক্তি আছেঃ কিন্তু তিনি অন্ধ ত্বদেশ-গ্রীতির বিরোধী বাঁজের প্রতি তার অপূর্ব নিষ্ঠা এবং কোন একটা কাজ হাতে নিলে তা তিনি শেষ না করে ছাড়েন না। অসমাপ্ত কিংবা অর্ধসমাপ্ত কাঁজ তিনি দুচোখে দেখতে পারেন না। তার সময়- নিষ্ঠারও তুলন! মেলা! ভার। ধাঁরা জওহরলাল নেহেরুকে প্রেমিডেপ্টরূপে নিখিল ভারত কংগ্রেস কমিটির অধিবেশন পরিচ1ীলনা করতে দেখেছেন, তারাই তাঁর কর্মপদ্ধতির সঙ্গে পরিচিত তাঁর কর্ম-পদ্ধতি হ্ারো এবং অক্সফোর্ডের শিক্ষার ফল--সে কথা ন! বলে উপায় নেই। শুভ্র খন্দর পরিহিত খাটি স্বদেশী জওহরলালের চরিত্রে এই সব গুণের সমাবেশ একটু বিস্মকর নয় কি? নিজের সম্বন্ধে তার আত্মজীবনীতে জওহরলাল একস্থানে লিখেছেন £ “আমি প্রাচ্য পাশ্চাত্যের এক অদ্ভুত সংমিশ্রণ-_ সর্বত্রই বেমানান, কোথাও যেন আত্মস্থ নই। হয়ত আমার চিন্তাধারা এবং জীবনকে দেখবার ভঙ্গী প্রাচ্যের চেয়ে যাঁকে পাশ্চাত্য বলা হয় তাঁরই সগোত্র, কিন্ত ভারত তার অন্তান্ সম্তানকে যেমন অসংখ্যরূপে আকড়ে ধরে আছে, আমাকেও ঠিক তেমনই আকড়ে ধরে আছে আমার সম্প্রতি- প্রাপ্ত অতীত উত্তরাধিকারের হাত থেকে আমি মুক্তি পেতে পারি না। এরা উভয়েই আমার অংশ বিশেষ এবং তার! প্রাচ্যে পাশ্চাত্যে-_- উতয়ত্র আমাকে সাহাষ্য করে বটে-_কিন্তু তাঁরা শুধু সাধালণের কাজেই '

১৪৯ পণ্ডিত জওহরলাল নেহেরু

নয়_-জীবনের ব্যাপারেও আমার মনে একট! আধ্যাত্মিক একাকিত্ববোধ জাগিয়ে তোলে আমি পাশ্চাত্যজগতে নবাগত-_বিদেশী। আমি তার শবিশেষ হতে পারি ন|। কিন্তু সময় সময় আমার নিজের দেশেও নিজেকে নির্বাসিতের মত অনুভব করি ।৮ জওহরলালের মনের এই ছন্দ অতি স্বাভাবিক এবং বাস্তব তাঁর মনে যত ছন্দই থাঁক, জওহরলালের স্বদেশ-প্রেমের সম্বন্ধে প্রশ্ন তোলার অবকাশ নেই। ভারতের জাতীয়তার ক্ষেত্রে আজ একমাত্র গান্ধীজীর পরেই তীর স্থান। তিনি যে গান্ধীজীর পরম ভক্ত সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নাই। কিন্ত তিনি অন্ধ ভক্ত নন। জওহরলালের মানসিক গঠন এত বেশী বিজ্ঞানবাঁদী যুক্তি-পন্থী যে তার পক্ষে কোন ব্যক্তি বা বিষয়ের প্রতি অন্ধ অনুরাগ অনুভব করা অসম্ভব। তাই তিনি গান্ধীজীর অনেক কিছুরই কঠোর সমালোচনা করেন এবং তার অনেক কাঁজকেই অযৌক্তিক বলে মনে করেন তবে সঙ্গে সঙ্গে সত্যও তিনি জানেন যে ভারতীয় জন-মানসে জাতীয়তার সাড়া জাগানোর ষে অপূর্ব শক্তি গান্ধীজীর আছে, সে শক্তি আর কারও নেই। /গান্ধাজী এবং জওহরলালের চরিত্রের মধ্যে অনেক বিভিন্নতা এবং অসামগ্তস্য থাকলেও, একটি মৌলিক বিষয়ে উভয়েরই মিল আছে। এরা উভয়েই অন্তরে অন্তরে জানেন যে শুধু অপরিসীম আত্মত্যাগ করে এবং ছুঃখ যন্ত্র সহ করেই ভারতের মুক্তিসাধন সম্ভব।/ জওহরলাল সত্য জানেন যে দৈহিক দিক থেকে শীর্ণকায় মহাত্াা গান্ধী অপরিসীম মানসিক এবং আধ্যাত্মিক শক্তির অধিকারী দেশের স্বাধীনতার জগ্ভে গান্ধীজী নিজের জীবন বিপন্ন করতে কোনদিন কুষ্টিত হন নি এবং ভবিস্যতেও কোন দিন হবেন বলে মনে হয় না। গান্ধীজীর কাছ থেকে জওহরলাল একটা বড় রাজনৈতিক শিক্ষা! পেয়েচেন-_যেট। তাঁর জীবনের গতিকেই দিয়েছে

ভারতের মুক্তিসাধক ১০৯

বদলে | গান্ধীজীর মারফত তিনি ভারতীয় জনগণকে চিন্তে পেেছেন-. তিনি বুঝতে পেরেছেন যে দেশের নিরক্ষর দরিদ্র কৃষকেরাই হচ্ছে ভারতের মেরুদণ্ড ভারতের কৃষক সম্প্রদায়ের মধ্যে কংগ্রেসের আদর্শ প্রচার করতে না পারলে, ভারতীয় কংগ্রেস যে কোন দিন স্বাধীনত!-যুদ্ধে জয়ী হতে পাঁরবে না__এ সত্য গান্বীজীই সর্বপ্রথম বুঝেছিলেন এবং সর্বপ্রথম তাঁরই মারফৎ কংগ্রেসের সঙ্গে ভারতীয় জনগণের প্রকৃত সংযোগ স্থাপিত হয়েছিল। কংগ্রেসে গান্ধীজীর আবির্ভাবের পূর্ব পর্যস্ত কংগ্রেস ছিল ভারতীয় বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায়ের একটা প্রতিষ্ঠান বিশেষ ১৯২৭ খষ্টান্দের পূর্বে জওহরলাল প্রমুখ নেতাঁদেরও এই ধারণা ছিল। এমন সময় এলেন মহাত্বা গান্ধী তিনি তাঁর চরিত্রের চুম্বক প্রভাবে ভারতের সকল প্রদেশের সব নেতাকে একত্রিত করে বুঝিয়ে দ্রিলেন যে জাতীয় কংগ্রেস যে পথে চলেছে সেটা তুল। ভারতবর্ষের শতকরা ৯০ জন লোক হচ্ছে কৃষিজীবী। প্রকৃত ভারত সহরে নয়-_পল্লীতে শুধু সহরের দিকে দৃষ্টি সীমাবদ্ধ করে যদি ভারতের শতকরা জন লোককে দূরে সরিয়ে রাখা হয়, তবে কংগ্রেস কোন দিন সর্বব্যাপী জাতীয় প্রতিষ্ঠানে পরিণত হতে পারবে না--কংগ্রেসের মারফৎ ভারতের স্বাধীনতাও কোন দিন আসবে না। গান্বীজী নিজে ভারতীয় কৃষকদের মত সহজ সরল জীবন যাপন করে পল্লী ভারতের স্বরূপকে দেশবাসীদের চোখের সামনে তুলে ধরলেন। তখন থেকে পল্লীই হল কংগ্রেসের প্রাণ; মুষ্টিমেয় শিক্ষিত ভারতীয়দের প্রতিষ্ঠান থেকে কংগ্রেস পরিণত হ'ল বিপ্রবী গণ-প্রতিষ্ঠানে। গান্ধীজীর জীবনের এটা অন্যতম শ্রেষ্ঠ কীতি।

কংগ্রেসের এই স্বরূপ পরিবর্তনের অর্থ কি তা জওহরলাল বুঝতে পেরেছিলেন--বুঝতে পেরেছিলেন যে গান্ধীজীর আদর্শে কংগ্রেসকে গণ-প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে হলে তাঁর নিজের ব্যক্তিগত জীবনেও

১০৩ পণ্ডিত জওহরলাল নেহেরু

বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধন করতে হবে এবং যাদের মুক্তির জন্টে তাঁকে দিবারাত্রি পরিশ্রম করতে হবে, তাদের শ্রদ্ধা বিশ্বাসভাজন হ'তে হলে তাঁকে অনেক ত্যাগ শ্বীকাঁর করতে হবে-_তাদের সমান স্তরে পৌছতে হলে তাঁকে অনেক ব্যয়বহুল অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে। তিনি তার জন্যে প্রস্ততও ছিলেন। হ্বদেশ--সেবার জন্যে আত্মত্যাগ করতে জওহরলালকে কখনও কুন্তিত হতে দেখা যায় নি। কিন্তু গান্ধীজীর মত দরিদ্রতম মানুষের সঙ্গে নিজেকে মিশিয়ে ফেল! তাঁর পক্ষে কোন দিন সম্ভব হয় নি। গান্ধীজীর মধ্যে অশন বসন সম্বন্ধে একটা খষি-সূলভ আত্ম-নিপীড়নের ভাঁব আছে; জওহরলালের মধ্যে কিন্তু সেটা নেই। তিনি মনেপ্রাণে খাটি আধুনিক। গান্ধীজীর অনশন, উপবাস প্রভৃতি তাঁকে একটুও মুগ্ধ করে না। তাই তাঁর বিংশ শতাব্দীর মন নিয়ে তিনি গান্মীজীর অনেক কাঁজ এবং অভ্যাঁসকেই মধ্যযুগীয় বলে মনে করেন।

দেশের জন্তে গান্ধীজীর স্বার্থত্যাগ এবং আত্মত্যাগের তুলন1 হয় না বটে 3 কিন্তু অমহযোগ আন্দোলনের যুগ (১৯২১ থকে আজ পর্যস্ত জওহরলালের

ত্বার্থত্যাগের হিসাঁব যদি করা যায়, তবে দেখা যাবে যে গান্ধীজীর সঙ্গে তুলনায় তাঁর স্বার্থত্যাগের পরিমাণও খুব কম নয়।

দেশবাসীর তাঁর আত্মত্যাগের সংবাদ জানে বলেই তাঁকে এত ভালবাসে শ্রদ্ধা করে। তার নিজের দেশ যুক্ত" প্রদেশে জওহরলাল মুকুটহীন রাঁজা বললেও বোধ হয় অত্যুক্তি হয় ন]। যুক্ত প্রদেশের দরিত্র চাষীর! তাকে প্রায় দেবতাঁর মত ভক্তি করে বিলাঁত থেকে ফেরার পর তার শ্বদেশবাসী কৃষকর। তাকে জানবার অবকাশ পায় নি। তিনি তখন সহরের নানাপ্রকার জনহিতকর কার্যসাধন নিয়েই ব্যস্ত থাকতেন। কিন্ত যেদিন থেকে তিনি গান্ধীজীর আদর্শকেই জীবনের ব্রত করে নিলেন, , সেদিন থেকেই তার! তাঁকে জানবার অবকাশ পেল। দিনের পর দিন,

জরতের মুক্তিনাধক ১৪৪

মানের পর মাস, জওহরলাল নিরক্ষর দরিদ্র পল্লীবালীদের সঙ্গে কাজ করেছেন, তাদের সঙ্গে একত্র বাস করেছেন। এমনই ভাবে তিনি তাদের জীবনের সথ ছুঃখ সুবিধা অন্থবিধ! সম্বন্ধে প্রত্যক্ষ জ্ঞান সঞ্চয় করেছেন এবং'তাদের হৃদয় জয় করেছেন। তার একটি অঙ্গুলি হেলনে তার! হেলাত্ব জীবন পর্যস্ত বিসর্জন দিতে পারে-_তাঁর উপর তাদের বিশ্বাস এত গভীর আত্মজীবনীতে পণ্ডিতজী এদের সম্বন্ধে লিখেছেন £ “এই সেই জনগণ-- তার! শ্রীতিপুর্ণ উল চোখে তাকায়, তাদের পিছনে বহুযুগ সঞ্চিত দারিদ্র আর যন্ত্রণা তবু তার! প্রেম আর কৃতজ্ঞতা ঢেলে দেয় এবং প্রতিদাঁনে শুধু ভ্রাতৃগ্রীতি সহাঁম্ুভূতি ছাঁড়। আর কিছু চাঁয় না। এই প্রেম তক্তির প্রাচুর্য নিজেকে বিনীত এবং বিশ্মিত না ভেবে উপায় থাকে না।” প্রধানত জওহরলালের ব্যক্তিগত নেতৃত্ব এবং তাঁর সহকমিদের একনিষ্ঠার ফলে যুক্তপ্রদেশের কিষাণ আন্দোলন সজ্ববদ্ধ শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। পণ্ডিত জওহরলাল নেহেরুর মত ভাঃ রাজেন্দ্র প্রসাদও বিহারে চাষীদের একান্ত বিশ্বাসভাজন। তাই একমাত্র বিহীরের সঙ্গেই যুক্তপ্রদেশের কিষাণ আন্দোলনের তুলন! চালতে পারে

কৃষি-প্রধান ভারতের নেতৃত্ব করার যোগ্যত্ুম ব্যক্তি যে গান্ধীজী সে বিষয়ে জওহরলালের মনে কণ! মাত্র সন্দেহ নেই। ভারতের দরিদ্রতম কৃষকের সঙ্গে নিজের জীবনকে একীভূত করে ফেলাকেই গান্ধীজী গণতন্ত্রের অগ্নিপরীক্ষা বলে মনে করেন। গান্ধীজীর সঙ্গে বিষয়ে খুঁটিনাটি ব্যাপারে পণ্ডিতজীর মতভেদ থাকলেও, মূলনীতি দুজনেরই এক। সম্বন্ধে জওহরলাল তার আত্মজীবনীতে যা লিখেছেন, তার কিছুটা উধৃত করছি; "গাম্বীজী প্রকৃত গণতন্ত্রবাদী হন আর নাই হন, তি ভারতের কৃষকদের প্রতিনিধি ; এই কোটি কোটি নরনারীর সচেতন অচেতন মনের ইচ্ছার সারাংশ দিয়েই তিনি গঠিত। এট! হয়ত

১০৫৫ পণ্ডিত জওহরলাল নেহেরু

প্রতিনিধিত্বেরও উধের্ধ অন্ত কিছু; তিনি অগণিত জনগণের আরদর্শ প্রতিমৃতি।” গান্ধীজীর সম্বন্ধে আর কেউ এত সুন্দর বর্ণন! দিতে পারেন নি। গান্ধীজী এবং জওহরলাল--উভয়েই ভারতের জনগণের মুক্তি" প্রয়াপী এবং মঙ্গলকামী। কিন্তু প্রত্যেকের পথ আলাদা গান্বীজী পরিকল্পিত স্বাধীন ভারতে রাজ! মহারাজা, জমিদার, মহাঁজন, মিলমালিকের স্থান আছে। গান্ধীজীর বিশ্বাস যে তাদের মনে যদ্দি অহিংসাঁর বীজ ঢুকিয়ে দেওয়া যাঁয়, তবে তাঁদের হাতে অর্থনৈতিক শক্তি থাকলেও তারা জনগণকে শোষণ ন। করে তাদের প্রতি ছুবিচারই করবে অহিংসাঁর দ্বারা অত্যাচারী, ক্ষমতা-লোভীর হৃদয়ে পরিবতন আনা যায় কথা গান্ধীজী মনে প্রাণে বিশ্বাস করেন। কিন্তু আধুনিক মনোবৃতিসম্পন্ন পণ্ডিত জওহরলাল এই ব্যক্তিগত হৃদয় পরিবতনে বিশ্বাস করেন না। ক্ষমতাঁর অত্যাচার ধনতন্ত্রের মারফৎই আন্গুক আর বিদেশী সাআজ্যবাদের মারফতই আস্থক, জওহরলাল একে অনিষ্টকাঁরী বলে মনে করেন। তিনি চাঁন €্য দেশের জমি, যন্ত্রশিল্প প্রভৃতি উতপাদন-ব্যবস্থার উপর সমবারী পদ্ধতিতে দেশবাঁপী মাত্রেরই মালিকানা স্বত্ব থাকবে; তবে ধনব্টণ অনেকটা সাম্যের পথ ধরে চলবে জওহরলীলের বিশ্বাস সমাঁজ-তন্ত্র- বোধের থেকে এসেছে এই সমাজতাস্ত্রিক দৃষ্টি- 0 ফলেই পপণ্তিতজী গান্ধীজীর থেকে ভিন্ন।

/ জওহরলালের জীবনের আর একটি বড় কীতি তিনি ভারতীয় কংগ্রেসকে বিশ্বের দরবারে পরিচিত করেছেন।॥ গান্ধীজী যেমন বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায়ের মধ্যে ীমাবদ্ধ কংগ্রেসকে জনগণের সংযোগে এনে তাকে বিরাট গণ-গুতিষ্ঠানে পরিণত করেছেন, পণ্ডিতজীও তেমনি বিদেশে কংগ্রেস আন্দোলনকে জনপ্রিয় করে তুলেছেন। তাকে যদি ভারতীয় কংগ্রেসের বৈদেশিক রাঁজদূত উপাধি দেওয়| যায়, তবে সেটা অন্যায় হবে না। আজ

ভারতের মুক্তিসাধক ১০৬

ইংল্যাণ্, আমেরিক1 চীনে কংগ্রেসের সমর্থক-সংখ্যা নেহাঁৎ কম নয়। এসবেরই মূলে পণ্ডিতজী। গণতন্ত্রের প্রতি জওহরলালের অপরিসীম শ্রদ্ধা। এই শ্রন্ধাই তাকে গৃহ-বিবাদে রত স্পেন ভ্রমণে প্রবৃত্ত করেছিল। ক্রাঙ্কোর ফ্যাসিষ্ট সেনাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত স্পেনের গণশক্তির প্রতি তার সহামভৃতির অস্ত ছিল না। জাপান কর্তৃক চীন আক্রান্ত হবার পরও যখন ব্রিটেন আমেরিক1 চীনের স্বাধীনতারক্ষাঁয় সাহাঁধ্য করে নি-_ তখন পণ্ডিতজীর দৃষ্টিই পড়েছিল চীনের উপর সর্বাগ্রে প্রধানত তাঁরই উদ্যোগে চীনকে সাহায্যের জন্যে ভাঁরতীয় কংগ্রেসের পক্ষ থেকে এক দল ডাক্তারকে চীনে পাঠানো! হয়েছিল। ১৯৩৯ সালে জওহরলাল নিজেও চীন পরিদর্শন করতে গেছিলেন এবং চীনের অধিনায়ক মার্শাল চিয়াং- কাইশেক তার পতী মাদাম চিয়াংকাইশেকের সঙ্গে জওহরলালের স্থগভীর হুগ্তাঁর সম্পর্ক গড়ে উঠেছে মার্শাল মাঁদাঁম চিয়াংকাঁইশেক যখন ভারতে এসেছিলেন, তখন তারা মহাত্মা! গান্ধী, পণ্ডিত জওহরলাল নেহেরু প্রভৃতি কংগ্রেস নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন এবং ভাঁত্বতকে ত্বাধীনত৷ দেওয়! উচিত এই মর্মে তাঁরা একটি ঘোষণাঁবাঁণীও দিয়ে- ছিলেন। ছাড়াও জওহরলাল সমগ্র ইউরোপ এবং সোভিয়েট রাশিয়ায় প্রচুর ভ্রমণ করেছেন ঃ(সর্বত্র গণনেতাঁদের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন ছিল তার ভ্রমণের অন্ততম উদ্দেশ্য |

জওহরলালের মত একনিষ্ঠ স্বাধীনতা গণতন্ত্রের পূজারী খুব কম দেখা যাঁয়। শ্বাধীনতার প্রশ্ন নিয়ে তিনি নিজের পিতা পণ্ডিত মতিলাল নেহেরুর সঙ্গেও মতানৈক্য সৃষ্টি করতে পশ্চাৎপদ হন নি। পণ্ডিত মতিলাল ভারতবর্ষের জন্তে মে।টামুটি ওপনিবেশিক স্থায়ত্ত শাসনাধিকার পেলেই সন্তুষ্ট হতেন। জওহরলালের মত ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন £ তাঁর প্রধান উদ্দেশ্য ভারতের জন্যে পূর্ণ স্বাধীনতা লাভ।

১০৭ পণ্ডিত জওহরলাল নেহেরু

প্রধানত তাঁরই উদ্ঠোগে কংগ্রেসের ১৯২৯ খষ্টাব্বের অধিবেশনে সর্ব প্রথম পূর্ণ স্বরাঁজের প্রস্তাব গৃহীত হয়। পণ্ডিতজীর মনে স্বাধীনতা লাভের জন্যে ষে অত্যুগ্র পিপাসা আছে তারই জাল! তাকে বহুবার কারাগারে নিক্ষেপ করেছে তাঁর জীবনে এরূপ ঘটনা একাধিকবার দেখা গেছে যে কারামুক্তির পরে পরেই তিনি এমন কোন বন্তৃত! দিয়ে বসেন কিংব! কাজ করেন যাঁর 'ফলে তাকে পুনরায় কারাগারে যেতে হয়। তাঁর প্রকৃতিগত £ স্বাধীনতার সম্মান অক্ষুপ্ণ রাখতে তিনি আমরণ কারাঁবরণ করতে রাজী আছেন একবারের একট উদাহরণ নেওয়া যাঁক। বিহার ভূমিকম্পের সময়ের ঘটনা আইন অমান্ত আন্দোলন উপলক্ষে কারারুদ্ধ জওহরলাল সবে মুক্তি পেয়েছেন। মুক্তি পাবার পরেই তিনি কলকাতায় একটি তেজন্বী গভর্ণমেপ্ট-বিরোধী বক্তৃতা দিলেন। এর পরেই তিনি এলেন বিহারের ভূমিকম্পে অতি ক্লি্ট জনগণের ছুঃখ-লাঘব করতে দিবারাত্রি পরিশ্রম করে তিনি যথাসাধ্য জনগণের সাহাধ্য করে ফিরে এলেন ব্বগৃহে-এলাহাবাদে এর পরের ঘটনা জওহরলাল নিজেই সুন্দরভাঁবে বর্ণনা করেছেন “ভ্রমণ-শেষে ভীষণ ক্লাস্ত হয়ে আমি ফিরে এলাম। দশ দিনের পরিশ্রমে আমার অবস্থা! হয়েছিল মৃতপ্রায় এবং আমার আত্মীয় স্বজন আমার চেহারা! দেখে বিস্মিত হয়ে গেছিলেন। আমি বিবরণী লিখতে সুরু করার চেষ্টা করলাম, কিন্ত আমি ঘুমে অভিভূত হয়ে পড়লাম। কাঁজেই পরবর্তী চব্বিশ ঘণ্টা সময়ের অন্তত বাঁরে! ঘণ্টা আমি ঘুমেই কাটালাম পরদিন কমল! আর আমি সবে মাত্র চা পান শেষ করেছি-_এমন “সময় একটি গাড়ী এসে দীড়াল এবং তাঁর থেকে নামলেন একজন পুলিশ অফিসার আমি তখনই বুঝতে পারলাম যে আমার সময় এসেছে ।” এরকম কারাবরণ তাঁকে বহুবার করতে হয়েছে। ১৯৪০ খবষ্টাব্দে

ভারতের মুক্তিসাধক ১০৮

রাজদ্রোহমূলক ব্তৃতার অভিযোগে তাঁকে চার বছরের সশ্রম কারাদ্ডে দপ্ডতিত করা হয়। কিন্তু ১৯৪১ খুষ্টাব্দেই তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এর পর ব্রিটিশ গভর্ণমেণ্টের তরফ থেকে ১৯৪২-এর এপ্রিল মাসে স্তাঁর স্ট্যাফোর্ড ক্রিপৃস্‌ যে নতুন ভারত শাসনের সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে আসেন, জওহরলাল কংগ্রেসের তরফ থেকে সে প্রস্তাবের আলোচনায় প্রধান অংশ গ্রহণ করেন। কিন্তু শেষ প্যস্ত কংগ্রেস ক্রিপস্‌ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে। এর পরে গান্বীজীর নেতৃত্বে ১৯৪২ থুষ্টাব্দের ৮ই আগষ্ট বোম্বাই অধিবেশনে কংগ্রেস অবিলম্বে স্বাধীনতা লাভের জন্তে যে প্রস্তাব গ্রহণ করেঃ তার ফলে ৯ই আগষ্ট অন্ঠান্ত কংগ্রেস ওয়াকিং কমিটির সদস্যদের সঙ্গে পণ্ডিত জওহরলালও কাঁরাঁরদ্ধ হন। আজ পর্যস্ত তিনি কারারুদ্ধু? আছেন। পগ্ডিতজীর মত একজন স্বাধীনতা গণতন্ত্রের পৃজারী ফ্যামিষ্টবিরোধী নেতাকে ব্রিটিশ গভর্ণমেণ্ট কারারুদ্ধ করে রাখায় শুধু ভারত নয়--সমগ্র বিশ্ব থেকে প্রতিবাদ উঠেছে। কিন্তু ব্রিটিশ গভর্ণমেপ্ট তবু পণ্ডিতজীকে কঃরামুক্ত করেন নি।

দেশের জন্যে জওহরলাল যে অপূর্ব আত্মত্যাগ করেছেন তার দ্বারাই তিনি দেশবাসীদের হৃধয় জয় করেছেন। ভারতের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত প্যস্ত তিনি যেখাঁনেই যান, সেখানেই হিন্দু মুসলমান নিবিশেষে জনগণ তার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে-_তাকে বিপুল ভাবে সম্ধধিত করে। তরুণ ভারত তারই আদর্শ থেকে অনুপ্রেরণা পায়। এই বয়সে পণ্ডিত জওহরলাল নেহেরু তিনবার ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়েছেন। ১৯১৮ খুষ্টাৰ থেকে তিনি বরাবর নিখিল ভারত কংগ্রেস কমিটির সদস্য আছেন। মহাত্মা গান্ধী থেকে সুরু করে সকল কংগ্রেস নেতাই জওহরলালের সুবিবেচিত

১০৯ সীমাস্ত গান্ধী

মতামতকে শ্রন্ধীর চোখে দেখে থাকেন। জওহরলাল মূলত পরাধীন ভারতের অন্যতম শ্রেষ্ঠ রাষ্্রীনেতা হলেও, তাঁর আর একটা দিকও আছে। রাজনীতির বিচার করতে গিয়ে তার দিকটি উপেক্ষা করা চলে না। তিনি চিন্তাশীল মনীষী স্থলেখক। সব রাজনৈতিক নেতার মধ্যেই গুণটি পাওয়া যায় না। কর্মব্যস্ত রাজনৈতিক. জীবনের একটি মুহূর্তও জগহরলাল আলন্তে কাঁটান না। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ সম্বন্ধে তার প্রচুর প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতাও যেমন আছে, তেমনই জগতের আধুনিক জ্ঞান-ভাগ্ারের সঙ্গেও তাঁর পরিচয় বিম্ময়কর। ইতিপূর্বে তাঁর আত্মজীবনীর উল্লেখ করেছি। ছাড়াও পৃথিবীর ইতিহাস সম্বন্ধে তাঁর একথানি বিরাট গ্রন্থ আছে। এই দুখানি বিরাট বই ছাড়া আরও বহু গ্রন্থের তিনি রচয়িতা তাঁর বইগুলো পড়ে জ্ঞানের পরিধি দেখে বিন্ময়ে হতবাক হয়ে যেতে হয়। কোটি কোটি নির্ধাতিত নিপীড়িত ভ1রতবা'সীর প্রকাস্তিক শুভেচ্ছ৷ সমর্থনে ভারতের এই বীর সন্তানের জয়যাত্রার পথ কুম্ুমাস্তীর্ণ হয়ে উঠুক এই কামনাই করি।

সীমান্ত গান্ধী

_ সাধারণের কাছে সীমান্ত গান্ধী বলে পরিচিত খা আব্দ,ল গফুর খাঁর কথা মনে পড়লেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে একটি সৌম্য শাস্ত গুন্ক-শ্মশ্র-সমঘিত সরল লুন্দর মুখের চেহারা তার মত দীর্ঘকার

'ভারতের মুক্তিনাধক ১১০

ব্যক্তি সচরাচর চোখে পড়ে ন1ঃ তার দেহের দৈর্ঘ সোয়! ছয় ফুটেরও উপরে একসময় তাঁর দীর্ঘাকৃতির অনুরূপ দেহের ওজনও ছিল যথেই্ট-প্রায় আড়াই মণ। ক্রমাগত কারা-যন্ত্রণা ভোগ করে ॥&তীর ওজন বতমাঁনে মণ দুয়েকেরও নীচে নেমেছে তার সমগ্র দেহের উপরে দেশের জন্তে দুঃখ দুর্দশা ভে।গ করার স্ুস্প্ ছাপ রয়ে গেছে।

ভাঁরতের উত্তর-পশ্চিম প্রান্তে আফগানিস্থান ভারতের মধ্যে একটি ছোট প্রদ্দশ আছে এই প্রদেশটির নাম উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত গ্রদেশ। এই প্রদেশের অধিকাংশ অধিবাসীই পাঠান জাতীয় মুসলমান। সাধারণত পার্বত্য প্রদেশের অধিবাঁপী বলে এর! বলিষ্ঠ দীর্ঘকায় এবং কোন কোন ক্ষেত্রে হিংস্রতা দস্থযতায় পারদশী। এই প্রদেশের পার্বত্য অঞ্চলে এমন অনেক উপজাতি আছে যাদের কাজ হল দস্থ্যস্ূলভ লুণ্ঠন কার্য করে জীবিক। নির্বাহ করা। এই সব উপজাতির অত্যাচারে ভারত গভর্ণমেণ্টেকে সর্বদাই সন্ত্স্ত থাকতে হয়। এই প্রদেশেরই পেশোয়ার জেলার উত্তমনজাই নামক একটি ক্ষুদ্র গ্রামে পাঠান বংশে ১৮৯১ খুষ্টাবে খা আব,ল গফুর খার জন্ম। বয়সের দিক থেকে তিনি পণ্ডিত জওহরলাঁলের চেয়েও ছু বছরের ছোট গ্রামট ছেটি হলেও তার পরিবারটি ছিল অরভজাত। গফুর খাঁর পিতা ছিলেন উত্তমনজাই গ্রামের সর্দ(র। গফুর খার নামের প্রথম খাটি হচ্ছে এই আভিঙ্জাত্যের চিহ্ন তাঁরই মত তার ছোট ভাই ডাঁঃ খা সাহেবও সীমান্ত গ্রদেশের অন্ততম কংগ্রেস নেতা দাদার মত তিনিও বহুব!র কারা যন্ত্রণা-ভোগ করেছেন। ১৯৩৯ থুষ্টাব্ের শেষ।ংশে ভ'রতের সর্বত্র কংগ্রেস মান্ত্রমগ্ুল পদত্যাগ করার পূর্ব পর্যন্ত ডাঃ খা সাহেব সীমান্ত প্রদেশের কংগ্রেস মন্ত্রিমগুলীর প্রধান মন্ত্রী ছিলেন।

১১১ সীমান্ত গান্ধী

পূর্বেই গফুর খাঁর সুগঠিত বলিষ্ঠ দেহের কথ| উল্লেখ করেছি। কৈশোর এবং যৌবনে তিনি নিজের ন্ুগঠিত দেহের জন্তে খুব গর্ব অন্থুভব করতেন--এমন কি এই দেহের দৌলতে তিনি একদিন ভারতীয় সেনাবিভাগে যোগ দিতে পারবেন--এ স্বপ্পও মাঝে মাঝে দেখতেন। কিন্তু ধীরে ধীরে তার সে স্বপ্র ভাউল। তিনি দেখলেন যে সৈন্তদলের ইউরোগীয় কর্মচারীর! তাদ্দের ভারতীয় সহকর্মীদের প্রতি রীতিমত ওুদ্বত্যপূর্ণ ব্যবহার করেন--তীঁদের মানুষ বলেই গন্ত করেন 51 বলা চলে। তখন তিনি তাঁর মত বদলালেন-_সঙ্গে সঙ্গে তাঁর জীবনের গতিও গেল ঘুরে ১৯০৯ খৃষ্টাব্দে যখন তার সেনাবিভীগে কমিশন পাবার স্বযোগ এল, তিনি ঘ্বণার সে সুযোগ প্রত্যাখ্যান করলেন। এর পিছনে আ'র একটি কারণও ছিল। তিনি ছোট বয়েস থেকেই মৌলানা আবুলকালাম আজাদের বিপ্লবী লেখার সংস্পর্শে এসেছিলেন। ফলে তাঁর দৃষ্টিভঙগীও অনেকটা বিপ্রবী হয়ে উঠছিল। আব্দ,ল গফুর খা তখনও আলিগড়ের ছীত্র। সেই সময় মৌলানা আজাদ কলিকাতা! থেকে তার “আল হিলাল” নামক উরু পত্রিক। বের কয়ুছেন। রাজ- নৈতিক রচনায় মৌলানা আজাদের অপূর্ব দক্ষতা ছিল--তার লেখনী দিয়ে আগুণ ছুটত বল। চলে। আলিগড়ে যখন গফুর ছাত্র, তখন থেকেই তিনি “আল হিলালে'র নিয়মিত পাঠক ছিলেন। “আল হিলাল' তার চোখের সামনে যেন নতুন জগত খুলে দিল ।/” মৌলানা আজাদ তার চমৎকার: তেজন্বী গগ্য রচনার মারফত নিজের সম্প্রদায়ের ভ্রাতা ভগ্মীদের মধ্য প্রাচ্যের রাষ্ট্রগুলার নন জাগরণের বাণী শোনাতেন-_ তীব্র ভাষায় মুসলিম লীগ লীগ-নে তাঁদের রক্ষণশীল প্রতিক্রিয়শীল নীতির কঠোর সমালোচনা করতেন। আবছুল গফুর খা আলি ড় থেকে নিজের প্রদেশে এই নব জাগর:ণর বাণীই বয়ে নিয়ে এলেন।

তাঁরতের মুক্তিসাধক ১৯২

স্কুল কলেজের শিক্ষা তার বেণী নয়-তিনি মাত্র এপ্ট্ণন্স “পর্যন্ত পড়েছেন। সীমান্ত প্রদেশে ফিরেই গফুর খা জাতীয়তার ভিত্তিতে নিজের প্রদেশ নিজের জাতিকে গড়ে তোলার কাজে লেগে গেলেন। / ১৯১২ থুষ্টাব থেকে তাঁর দেশ সেবার কাজ আরম্ভ বলা চলে। তিনি নিজের গ্রামে একটি জাতীয় বিদ্যালয় স্থাপন করলেন; কিন্তু ১৯১৫ খুষ্টান্দে গভর্ণমেপ্ট থেকে স্কুলটি বন্ধ করে দেওয়! হল। এর পরেই এল সার! ভারতব্যাপী রাউলাট আইনের বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন তিনিও সীমান্ত প্রদেশে এই আন্দোলন সুর করলেন। এত অন্ন বয়সেও তার শক্তি প্রভাব এত বেশী ছিল যে হাজারে হাজারে লোক তাঁর সভায় জমায়েৎ হত। এমনই একটি সভায় আবদুল গফুর খাঁর ৯০ বৎসর বয়স্ক বৃদ্ধ পিতাঁও উপস্থিত ছিলেন৷ সভার শেষে তাঁর পিতার সাঁমনেই তিনি পুলিশের হাতে ধরা পড়লেন এৰং তাঁকে বিনা বিচারে আটক রাখা হল। আটক থাঁকার সময় পুলিশের বড় কণার কাছ” থেকে একটি প্রতিনিধিদল গেল তাঁকে বুঝিয়ে আপত্তিকর কাজকর্ম থেকে নিবৃত্ত করতে আবমল গফুর খার পিতামহ ১৮৫৭ খুষ্টান্বের সিপাহী বিদ্রোহে ব্রিটিশ পক্ষে লড়েছিলেন--তাঁই তাঁকে আইন-বিরোধী কাজ থেকে নিবৃত্ত করাঁর জন্তে পুলিশের বড় কণার এত আগ্রহ। কিন্ত তরুণ গফুর খা! একটুও নড়লেন ন1। বিপ্লবী পুত্রের প্রভাবে পড়ে বৃদ্ধ পিতাও শেষ বয়সে রাঁজভক্ত প্রজা থেকে লরকার-বিরোধী হয়ে দাড়িয়েছিলেন। কিছুকাল পরে তার পিতাঁও পুলিশের হাতে ধরা পড়েছিলেন। | কারাজীবনে গফুর খার অনেক নতুন অভিজ্ঞত1 হল। তাকে অনবরত শিকল পরিয়ে রাখা হত। অথচ সাধারণ কয়েদীদের এই

১১৩ সীমাস্ত গান্ধী

শিকল তাঁর পক্ষে অত্যন্ত ছোট হ'ত বলে তিনি খুব কষ্ট পেতেন। কিন্ত তিনি সর্বদাই আনন্দে কাঁটাঁতেন এবং তাঁর চারপাশের সকলের "জীবনেই নিজের মতবাদের প্রভাব ছড়িয়ে দেবার চেষ্টা করতেন। কারাগারেই তিনি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি প্রচার সুরু করেছিলেন এবং তিনি রীতিমত ক্লাস খুলে গীতা কোরাণের প্রধান প্রধান ভাবধাঁর! সম্বন্ধে নিজেই শিক্ষা দিতেন যখন তাঁর কারামুক্তি হল» তথন ১৯২১ খুষ্টাব্ব। পুর্ণোগ্যমে অসহযোগ আন্দোলন খিলাফৎ আন্দোলন চলছে মুক্তি পেয়ে গফুর খা উভয় আন্দোলনেই প্রধান অংশ গ্রহণ করেছিলেন। ইতিমধ্যেহ জাতীয় শিক্ষা সম্বন্ধে তিনি প্রচুর আগ্রহ দেখাচ্ছিলেন এবং স্ুপ্রসিদ্ধ তুরংজাইয়ের হাজী সাহেবের সহায়তায় তিনি সমগ্র সীমান্ত প্রদেশে অনেক জাতীয় বিদ্যালয় গড়ে তুলেছিপেন। ভারতের অন্ত কোন প্রদেশে আর কোন নেতার প্রচেষ্টায় এরূপ জাতীয় শিক্ষা বিধানের ব্যাপক প্রচেষ্টা হয়েছে কিনা সন্দেহ হাজী সাহেব পরে ক্রিটিশ নীতির চরম শক্র হয়ে দীড়িয়েছিলেন, 'ত্রটিশ গভর্ণমেণ্টের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের পতাকা উঠিষেছিলেন এবং বহু রাত্রি জেগে তিনি ব্রিটিশের বিরুদ্ধে সংগ্রামের পরিকল্প,1 করতেন। আবব্দল গফুর খা হাঁজী সাহেবের পথ ক্রমেই পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছিল

১৯৩০এর আইন অমান্য আন্দোলনের সময় »মান্ত প্রদেশের ইতিহাসে একটি নতুন অধ্যায় সংযুক্ত হল। খা! ভ্রাতৃদ্বয় একনিষ্ঠার সঙ্গে বুদিন ধরে যে ম্বদেশ-সেবা করে আসছিলেন তার ফল দেখ! গেল £ সমগ্র প্রদেশের জনগণ তাদের নির্দেশে কারাবরণ করতে প্রবৃত্ত হল | কারাগারে স্থান সন্কুলান হয় না_-অথচ হাজার হাজার নরনারী জেলে যেতে প্রস্তত। গভর্ণমেণ্টের পক্ষে এটা অসহ হয়ে দাড়াল;

“ভারা দেখলেন যে সামরিক দিক থেকে একটি মূল্যবান প্রদেশ তাদের

তারতের মুক্তিসাঁধক ৯৯৪

নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে এর ফলে দ্থুরু হল নির্যাতন- নিগীড়ন। এই নিপীড়নের কাহিনী বিঠলভাই প্যাটেলের পেশোয়ার অনুসন্ধান সমিতির রিপোর্টে লিপিবদ্ধ আছে গভর্ণমেণ্ট রিপোর্টটি বাজেয়াপ্ত” করেছিলেন। এর পরে গান্বী-আরউইন চুক্তি সম্পাদিত হওয়ায় খা ভ্রাতৃদ্বয় মুক্তি পেলেন। এর কয়েক মাস পরে আবার তার! কারারুদ্ধ হলেন। গান্ধবীজী বিলাতের গোল টেবিল বৈঠক থেকে ফিরে আসার আগেই সীমান্ত অভিনান্দ জারী করে খাঁ! ভ্রাতৃদ্বয়কে বিনা বিচারে আটক করে রাখা হয়েছিল। তাদের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগই প্রমাণিত হয় নি-_-অথচ বলা হচ্ছিল যেখাঁ ভ্রাতৃদ্বয় তুরংজাইয়ের হাজী সাহেবের সহায়তায় গভর্ণমেণ্টের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিপ্লবের পরিকল্পনা করছিলেন। অভিযোগ যে কত মিথ্য! তা প্রমাণ করার প্রয়োজন হয় নি; সীমান্তের পাঠানেরা সম্পূর্ণ অহিংসভাবে ষে আইন অমান্ত আন্দোলন চালাচ্ছিল, সেই অপূর্ব দৃশ্তই অভিযোগ খণ্ডনের পক্ষে যথেষ্ট ছিল। সমগ্র গ্রদেশের মধ্যে যে কর্ম-প্রেরণা। উন্মাদন1! দেখা দিয়েছিল তার লনা খুব কমই পাঁওয়৷ যায়। আব,ল গফুর খার পদাঙ্ক অনুসরণ করে তার ভ্রাতা ভগ্নী, পুত্র এবং ভ্রাতুদ্পুত্ররা সবাই কারাবরণ করেছিলেন

আব্দুল গফুর খা সম্পূর্ণভাবে গান্ধীজীর জীবন-দর্শনের অনুগামী অহিংস তাঁর জীবনের মুলমন্ত্র। ১৯৪১ থুষ্টাব্বের ডিসেম্বর মাসে অহিংসার প্রশ্ন নিয়ে মহাত্স। গান্ধীর সঙ্গে কংগ্রেস ওয়াকিং কমিটির মতভেদ হয়। ৩০শে ডিসেম্বর বারদৌলিতে কংগ্রেস ওয়াকিং কমিটির অধিবেশনে এই মতভেদের দরুণ গান্ধীজীকে কংগ্রেস নেতৃত্ব থেকে মুক্তি দেওয়া হয়। . এই ঘটনার মাস খাঁনেক পরে ১৯৪২এর ফেব্রুয়ারী মাসে থা আব গফুর খাও গান্ধীজীর পদাঙ্ক অন্গসরণ করে ওয়াকিং

১১৫ সীমান্ত গান্ধী

কমিটির সদন্য পদে ইস্তফা দেন। গান্বীজীর প্রতি তার ভক্তি শ্রদ্ধার অস্ত নেই। মহাঁত্বাজীর স্ুবিপুল ত্যাগের আদর্শে তাঁর সমগ্র জীবন গঠিত ছুই ছুই বাঁর তাঁকে ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতি হতে অন্রোধ কর! হয়েছিল ছুই বারই তিনি এই অজুহাতে সভাপতির পদ প্রত্যাখ্যান করেন যে এত বড় পদে অধিষ্ঠিত হবার যোগ্যতা তার নেই। যোগ্যতা তার পুরো মাত্রাতেই আছে--শুধু তিনি নেতৃত্ব লাভের প্রয়াসী নন। তিনি লোকচক্ষুর আড়ালে থেকে জন-সেবা জন-কল্যাণ করতে ভাঁলবাসেন। অভিজাত ধনী পরিবারে তার জন্ম) বাল্য কৈশোর তার বিলাসের প্রাচুর্যের মধ্য দিয়েই কেটেছে অথচ বর্তমানে তিনি প্রায় ফকিরের মত জীবন যাঁপন করছেন বলা চলে। এমন কি এক সময় তিনি যে চা খেতে খুব ভালবাসতেন, সেই চাঁও তিনি ত্যাগ করেছেন। আত্মত্যাগ দেশের প্রতি দরদের দিক থেকে তার জীবন পুরোপুরি গান্দীজীর আদর্শে গঠিত বলে, সমগ্র ভারতবর্ষে তিনি “সীমান্ত গান্ধী” বলে স্থুপরিচিত। কিন্তু

তার চরিত্রের স্বাভাবিক বিনয় এত বেশী যে তিনি নিজে নামটি পছন্দ করেন না। তিনি মনে করেন যে গান্ধীজীর সঙ্গে তার ক্ষুদ্র আত্মত্যাগের কোনই তুলন! হয় না। গান্ধীজীর আদর্শে তাঁর জীবন অনুপ্রাণিত হলেও তিনি কিন্ত মহাত্নাজীর অন্থুকারী নন। তিনি কোরাঁণ অন্যান্য ইসলামী ধর্মগ্রন্থ অধ্য্ন করে অহিংসায় বিশ্বাস এবং সর্বব্যাপী প্রেমের নীতি অর্জন করেছেন। সব সম্বন্ধে তিনি এবং গান্দীজী সম্পূর্ণ ভিন্ন পথে একই সিদ্ধান্তে এসে উপনীত হয়েছেন ব€মানে তিনি গান্ধীজীর অন্ততম শ্রেষ্ঠ সমর্থক

ধমে পূর্ণ বিশ্বাস সত্বেও গফুর খা বিপ্রবী। তিনি ভাঁরতের প্বাধীনতার একনিষ্ঠ উপাঁসক এবং জনগণের কল্যাণ সাধন তাঁর জীবনে:

ভারতের মুক্তিসার্ধক ৮১৬

অন্ততম ব্রত। ধর্মে প্রগা় বিশ্বাস তিনি পেয়েছেন তাঁর পিতাঁর কাছ: থেকে তাঁর পিত! উদ্দার মতাবলম্বী হয়েও ধর্মে প্রগাঢ় বিশ্বাসী ছিলেন | গফুর খা মনে প্রাণে বিশ্বীস করেন বে সব ধর্মই সমান--তাই তার মনে কোনরূপ সাম্প্রদায়িক ভেদবুদ্ধির স্থান নেই। ধর্মের সার বস্তকেই তিনি আঁকড়ে ধরেছেন পর ধর্মের প্রতি তর উদ্ণারত। সহনশীলতা সবজন-বিদিত। ভারতবর্ষের রাজনীতিতে আজ তিন অন্ততম শ্রেষ্ঠ স্থবন দখল করে আছেন বিগত কয়েক বৎসর ধরে তিনি নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে কংগ্রেস ওয়াকিং কশিটির সদস্ত আছেন। তার ভ্রাতা ডাঃ খাঁন সাহেবের সহযোগিতায় তিনি সীমান্ত প্রদেশের মত একটি গুরুত্বপূর্ণ মুসলমান প্রধান প্রদেশে দৃঢ় ভিত্তিতে কংগ্রেসের জাতীয়তাবাদী আন্দোলনকে গড়ে তুরেছেন। কম কৃতিত্বের কথা নয়। নিজের স্বার্থত্যাগ এবং মহান আদর্শের অন্তপ্রেরণাঁয় তিনি সমগ্র প্রদেশটিকে জাতীয়তা-বোধে উদ্দীপ্ত করে তুলেছেন। সর্বোপরি তিনি ভারতের জাতীয় কংগ্রেমের পিছনে বিরাট মুসলমান জনগণের সমর্থন এনে দিয়েছেন। ভারতের আর কৌন মুসলমান-প্রধান প্রদেশে কংগ্রেসের এত প্রভাব নেই।

| তার গণ-সংগঠনী শক্তি অপূর্ব। তিনি পাঠানদের মত কুর্ধর্ষ হিংসাপ্রিয় জাতিকে সাফল্যের সঙ্গে সংপথে টেনে এনেছেন এবং তাঁদের নবজীবনের বাণী শুনিয়ে মুগ্ধ করেছেন। সীমান্ত প্রদেশে তিনি যে বিরাট এবং শক্তিশালী স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী গড়ে তুলেছেন, তাতে গভর্ণমেণ্টের মনে ত্রাসের সঞ্চার হয়েছিল এবং তারা নানা ভাবে দমনমূলক ব্যবস্থা অবলম্বন করেও স্বেচ্ছাসেবকবাহিনী ভেঙে দিতে পারেন নি। প্রচার-কার্ষের স্থবিধার জন্তে গভর্ণমেণ্ট এদের নাম দিয়েছেন “লাল কোর্তার” দল (8:5৭ 51717) এতে ম্বভাবতই লোকের মনে সন্দেহ হবে বে পলা

১১৭ সীমান্ত গান্ধী

কোতারা” হয়ত বিপ্লবী সোভিয়েট রাশিয়া আদরে অন প্রাণিত। কাধ কিন্ত তা নয়। এদের কোতার বউ পধু লাল-_ভাখধারায় লাল রঙের *স্পর্শ মীত্র নেই। সম্পূর্ণ অহিংস উপায়ে জন-সেবা জন-কল্যাণ করাই এদের জীবনের ব্রত। আব্দ,ল গফুর খ। এই হ্গেক্ছাসেপকদের নাম দিয়েছেন খুদাই খিদমৎগার অর্থাৎ ভগবানের সেবক

ব্যক্তিগত জীবনে আব্দ,ল গফুর খার সাহস সহননালতা! অগরিসীম একবার কারাগারে তান সংবাদ পেখ্ন যে তারই মত রাজবন্দী তীর প্রির ভ্রাতুষ্পুত্র অনশন স্থরু করেছেন। গফুর খা তার সঙ্গে সাক্ষাতেরও চেষ্টা করলেন ন।--কিংবা তাঁকে 'মনশন থেকে প্রতিনিবুস্ত কর।রও প্রধাস পেলেন না। কাধত তার যুবক ভ্রতুপ্ুত্রটি ৭৮ দিন অনশন করেছিলেন | বখন তার অবস্থা সঙ্কটজনক হযে উঠল এবং তার জীবন সংশম্ন দেখ! দিল, যদি তিনি মারা যান এই "আশঙ্কা গভর্ণমেন্টের কাছে গফুর খা তার মৃতদেহের সৎকার-ব্যবস্থা সন্ব্ধে পত্র লিখেছিলেন এরূপ নৈতিঞ্ণ সাহম এবং মঞ্ঈনসিক বল সচরাচর দেখা যায় না।

বাগ্িতা বলতে সাধারণত যা বোঝা যার গফুর খাঁর তা নেই। তিনি কাজের লোক--ক্ততা তিনি কমই দেন। নিজের প্রদেশের বাইরে তিনি একরকণ মুখ খোলেন ন! বললেই চলে কিন্তু তিনি যখন কোন বক্তৃত। দেন, নে বক্তৃতা হৃদয় থেকেই দ্রেন। তাই তার শ্রোতৃবুন্দের উপর সে বক্তৃতা প্রভাব বিস্তার না করে পারে না। ১৯৪২ খুষ্টান্দের আগষ্ট মাসে কংগ্রেসের বোশ্বাই প্রস্তাবের পর তিনি পুনরায় কারা রুদ্ধ হয়েছিলেন কারাগারে তার স্বাস্থ্য ভাল বাচ্ছিল না কংগ্রেসের অনুপ- স্থিতির সুযোগে সীমান্ত প্রদেশে মুসলিম লীগ দন্ত্রিগুল গঠন কদেছিল। কিন্ত কংগ্রেস হোক, আর মুসলিন লীগ হোক স৭ই আব্,ল গফুর খাঁকে শ্রদ্ধার চোখে দেখে থাকে কয়েকমাস আগে মুসলিম লীগের জন্যতম

ভারতের মুক্তিসাধক ১:১৮

ন্ত্রী সংবাঁদ পত্রের মারফত দেশবাসীদের জানিয়েছিলেন ঘে আব,ল গফুর খাঁকে তিনি অন্ত কারও চেয়ে কম শ্রদ্ধ।' করেন না। তাঁর অস্থখ যাতে ভাঁল ভয়, সে জন্তে সকল ব্যবস্থা করার আশ্বাসই মন্ত্রী গ্রবর দিয়েছিলেন ।' সম্প্রতি সীমান্ত প্রদেশে রাজনীতির চাকা আবার ঘুরে গেছে ১৯৪৫ এর মার্চ মানে লীগ মন্ত্রিমগ্তলকে পরাজিত করে ডাঃ খান সাহেব সীমান্তে কংগ্রেস মন্ত্রিগুল গঠন ঝরেছেন এবং সঙ্গে সঙ্গেই সীমান্ত গান্ধীকে মুক্তি দিয়েছেন। মুক্তি-প্রাপ্ত আবছুল গফুর খা দেশবাসীদের কাছ থেকে বিপুল সন্বর্ধনা পেষ়েছেন। তিনি অচিরেই আবার জন-সেবার কাঁজে মাত্ুনিয়োগ করবেনঃ এরূপ ঘোষণাও আমর! তার মুখ থেকে শুনেছি। এই ত্যাগত্রতী ব্বদেশসেবী পাঠান বীর ভারতকে মুক্তি-যুদ্ধে জরী দেখে বাবেন_ আমরা এই আশাই করি।

রাষ্ট্রপতি সুভাষচন্দ্র

বাংলা দেশে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্ন দাশ এবং দেশপ্রিয় যতীবন্রমোহন সেনগুণ্ডের পর সুভাষচন্দ্র বস্তুর মত জনপ্রিয় নেতা আর কেউ হন নি | স্থভাষের চরিত্র বিশ্লেষণ করলে ছুটে! জিনিস বড় হয়ে দেখা দেয় : একট! ভার নেতৃত্বের জন্মগত অধিকাঁর-_আর অপরটি তাঁর বিপ্রবী ব্বদেশ-প্রেম | তিনি কোন দিনই গতান্ছগতিকতার উপাসক ছিলেন ন1_বরং গতান্গ- গতিকতাঁকে আঘাত মেরে ভেঙে ফেলাঁতেই তিনি যেন আনন্দ পান। এর জন্তে জীবনে তাঁকে লাঞ্ছনা য্ত্রণাও কম সহা করতে হয় নি। অথচ তাঁর পক্ষে নিজের ম্বভাঁবকে অনুসরণ কর! ছাড়াও গত্যন্তর নেই। যদি"

১১৯ রাষ্ট্রপতি সুভাষচন্দ্র

আত্মত্যাগ এবং নির্যাতন-ভোগকে স্বদেশ সেবার মাপকাঠি বলে ধর! হয়, তবে সুভাষচন্দ্র বর্তমান ভারতের কোন নেতার চেয়েই কম নন। কর্তৃপক্ষ তাকে শুধু কারাগারে প্রেরণ করেই ক্ষান্ত হন নি; ভারতের বাইরেও তাকে একাধিকবার প্রেরণ করা হয়েছে কারাগারে একাধিকবার তার স্বাস্থ্য ভঙ্গ হয়েছে-যক্মারোগে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা দেখ! দিয়েছে। কিন্ত তিনি একবারও অসম্মানজনক সর্তে মুক্তি নিতে শ্বীকার করেন নি। সাধারণ লোকের মধ্যে ষে জিনিসকে আমরা বলি একগুঁয়েমি--বড় লোকের চরিত্রে সেটা থাকলেই বলা হয় দৃঢ়তা। স্থুভাষের চরিত্রে জিনিসটি একটু অতিমাত্রায় আছে বলে মনে হয়। জীবনে রাজনীতির ক্ষেত্রে একমাত্র দেশবন্ধু ছাড়া আর কারও কাছে তিনি মাথা নত করেন নি--আর কারও নেতৃত্ব তিনি পুরোপুরি স্বীকাঁর করে নেননি মহাত্মা গান্ধীর বাক্তিত্ব চবিত্রের গুণে জওহরলালজীর মত বিপ্লবী সমাজতন্ত্রী নেতাও বহু বৎসর ধরে মাথ! নীচু করে আছেন। কিন্ত ক্কার্কক্ষেত্রে স্থভাষ সেই গান্ী-নেতৃত্বের বিরুদ্ধেও সাফলোর সঙ্গে মাথ! উচু করে দীড়িয়েছেন। শুধু দেশবস্কুর নেতৃত্বকেই তিনি শিশ্বের মত মাথা পেতে গ্রহণ করতেন। দেশবন্ধুকে তিনি শুধু শ্রদ্ধা করতেন না-পিতাঁর মত ভাঁলও বাঁসতেন। তাই মান্দালয় জেলে- সুদূর ব্রহ্মদেশে-_স্ুভাষ যেদ্দিন দেশবন্ধুর মৃত্যু-সংবাদ পেয়েছিলেন, সেদিন তিনি শিশুর মতই ফুঁপিয়ে ফু পিয়ে কেদেছিলেন।

স্থভাঁষচন্ত্রের আদি নিবাঁস ছিল চব্বিশপরগণা জেলার কোদালিয়! গ্রামে। তাঁর পিত। জানকীনাথ বস্থ ছিলেন কটকের প্রতিষ্ঠাবাঁন সরকারী উকিল। কলিকাতা হাইকোর্টে ব্যারিষ্টারী করে সুভাষচন্দ্রের দাঁদা শরৎচন্দ্র বনু যেমন প্রচুর অর্থ বশ অঞ্জন করেছেন, তীদের পিতারও কটকে তেমনই পদসাঁর নাম ডাঁক ছিল ১৮৯৭ খুষ্টাব্ধের

ভারতের মুক্তিসাধক ১২৪

২৩শে জানুয়ারী কটকে স্থুভাষচন্দ্রের জন্ম হয়। বাল্য কৈশোর তাঁর বেশ স্ুথে শ্বচ্ছন্দে কাঁটে। সুভাষচন্দ্রের মাতা গুভাবতী দেবী আদর্শ জননী জননীর চরিত্রের ধর্মভাব, উদ্দারতা, সহৃদয়ত। সারল্যের প্রভাব তাঁর উপর অপরিসীম তিনি বিদ্যালয়ে ভাল ছাত্র ছিলেন। অল্প বয়েস থেকেই তাঁর চরিত্রে ধর্মভাবের প্রেরণা পরিলক্ষিত হয়েছিল রামকুষ্ পরমহংস, ম্বামী বিবেকানন্দ প্রভৃতির গ্রন্থাবলী পাঠ এবং ধ্যান ধারণাতেই তার অধিকাংশ সময় ষেত। তবু তাঁর ধীশক্তি এত বেশী ছিল যে তিনি ১৯১৩ খৃষ্টাব্দে প্রবেশিক! পরীক্ষায় বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বিতীয স্তাঁন অধিকার করেছিলেন। এব পর কলকাতায় এসে তিনি প্রেসিডেন্সি কলেজের আই-এ ক্লাসে ভি হলেন। তখনও স্বুভীষচন্দ্রের মনে ধশ্নভাঁব প্রবল। হঠাৎ ১৯১৪ থুষ্টাব্ে বাড়ীতে কাউকে কিছু না বলে তিনি একজন বন্ধুর সঙ্গে গুরুর সন্ধানে গৃহত্যাগ করেন। হিমালায় বহুদিন ঘ্বরেও তিনি মনোমত গুরু পাঁন না| তার পর ভরিদ্বার, মথুরা, বৃন্দাবন, দিল্লী, আগ্রা, বারাণসী, গয় প্রভৃতি স্থান পরিভ্রমণ করেন কিন্ত মমোৌমত গুরুর সন্ধান মেলে না। হতাশ হযে ভগ্ন স্বাস্থ্যে তিনি বাড়ী ফিরে আসেন এবং বাঁড়ী ফেরার কিছুকাল পরেই দুরারোগ্য টাইফয়েড রোগে আক্রান্ত হয়ে বেশ কিছুদিন ভোগেন এর পর কযেক মাস পডাশুনে করে ১৯১৫ খুষ্টান্বে আই-এ পরীক্ষা দিয়ে প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন | পরে প্রেসিডেন্সী কলেজে দর্শন শাস্ত্রে অনার্স নিয়ে তিনি বি-এ পড়তে স্তর করেন তিনি তখন কলেজের ছাত্রদের নেত! হয়ে দাঁড়িয়েছেন ১৯১৬ খুষ্টান্দে তিনি মিঃ ওটেন নামক একজন ইংরেজ অধ্যাপকের ছুর্যবহারের জন্কে ছাত্রদের ধর্সঘট সুরু করেন ধর্সঘট মিটে যাবার প্রাঁর এক মাস পরে মিঃ ওটেন পুনরায় ছাত্রদের প্রতি তুর্বযবহাঁর করায় তারা তাঁকে প্রহার করে। ছাত্রদের নেতৃত্বের অপরাধে সুভাষকে অনির্দিষ্ট

১২১ রাঁষ্পতি স্থভাষচন্ত্র

কালের জন্তে কলেজ থেকে বিতাড়িত কর হয়। বিপ্লবী কার্ষে এই প্রথম সুভাঁষন্দ্রের হাতে খড়ি মিঃ ওটেনের ব্যবহারে তিনি সর্বপ্রথম শাসক শ্রেণীর ওদ্ধতা সম্বন্ধে সজাগ হয়ে ওঠেন কিছুকাল বাড়ীতে বসে থাকার পর ১৯১৭ খুষ্টাব্দে তিনি স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের প্রচেষ্টায় পুনরায় কলিকাতী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করাঁর অনুমতি পেয়ে স্কটিশ চার্চ কলেজে ভন্তি হন এবং সেখাঁন থেকেই ১৯১৭৯ থুষ্টান্দে দর্শন শাস্ত্রের অনাস” পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে দ্বিতীয় স্কান অধকার করে বি-এ পাঁশ করেন। এর পর আত্মীয় স্বজনের বিশেষ অনুরোধে পড়ে নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে তিনি আই-সি- «এস পরীক্ষা দিতে বিলাঁত যাঁন। বিশীত যাত্রার মাত্র আট মাঁস পরে আই-পি-এস্‌ পরীক্ষা দিয়ে পরীক্ষার্থীদের মধ্যে চতুর্থ স্থান অধিকার করেন। এর পরও তিনি বিলাতে থাকেন এনং কেছ্িজ বিশ্ববিষ্ঠালয়ে খি-এ পভতে থাকেন। কিন্তু আই-সি-এস্‌ পাশ করা স্থভাষের ধাতে সইল না। তিনি বিলাতে থাকার সমথ ১৯২০ খুষ্টাব্দে কংগ্রেসের নাগপুর অধিবেশনে অসহযোগ আন্দোলনের প্রস্তাব গৃহীত হয় এবং মহা তা গান্ধার নেতৃত্বে সমগ্র দেশ এই আন্দোলনে যোগ দেয়। এই সময় বহু শ্বদেশপ্রেমিক সরকাত্বী কর্মচারী চাকুরী তাঁগ করেন, রবীন্দ্রনাগ স্টার উপাধি ত্যাগ করেন। ১৮৫৭ খুষ্টাব্বের সিপাহী বিদ্রোহের পরে ভারতের বুঝে আর এক্সপ স্বাধীনতার সাডা কোন, দিন পড়ে নি। দেশ- প্রেমিক স্থভাব দিলাতে থেকেও আন্দোলনে সাড়া না দিযে “ারেন নি। আত্মীয় স্বজন ধন্ধু-বান্ধবের সর্বগ্রকীর উপরোধ নন্গরোপ উপেক্ষ। করে তিনি আই-সি-এস পাশ করার মাত্র একবছর পরে চাকুরীতে ইম্তফ! দিলেন। সেই দিন থেকে তার জীবনে একটি নতুন অধ্যায় সুরু হল। ১৯২১ খুষ্টান্দের মে মাঁসে কেন্বিের বি-এ ভিগ্রী নিয়ে তিনি স্বদেশে ফিরে এলেন। |

ভারতের মুক্তিসাধক ১২২

দেশে ফিরেই তরুণ সুভাষ গান্ধীজীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তার দেশ সেবার সংকল্প জ্ঞাপন করেন। মহাত্মা গান্ধী তাঁকে বাংলার অবিসম্বাদী নেত| দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের সঙ্গে দেখ! করতে বলেন দেশবন্ধুর সঙ্গে সেই ষে স্থভাষচন্দ্রের সহযোগিতা! স্থরু হল, দেশবন্ধুর মৃত্যু পর্যস্ত সে সহযোগিত। অক্ষুপ্ ছিল দেশবন্ধু সর্বপ্রথম স্ুভাষচন্দ্রকে তার প্রতিষ্ঠিত ন্যাশনাল কলেজের অধ্যক্ষ নিযুক্ত করেন। বঙ্গীয় প্রাদেশিক কংগ্রেস কমিটির প্রচার বিভাগের ভারও তার উপর অগ্িত হয় কংগ্রেসের আহ্বানে এই সময় তিনি একটা বিরাট স্বেচ্ছাসেবকবাহিনীও গড়ে তোলেন। এই স্থলে একটা কথা উল্লেখযোগ্য জীবিত নেতাদের মধ্যে একমাত্র মহাত্মা গান্ধী ছাড়া সুভাষচন্দ্র মত সংগঠনী শক্তি বোধ হয় আর কারও নেই। বিরুদ্ধ দলের সঙ্গে লড়াইয়ের জন্যে তার রাঁজনৈতিক জীবনে তাকে একাধিকবার নিজের দল গড়ে তুলতে হয়েছে এবং তিনি তা সাফল্যের সঙ্গেই করেছেন। এরপর ১৯২১ খষ্টান্বের ১০ই ডিসেম্বর আইন অমান্ত 'ান্দোলনে দেশবন্ধু চিত্তত্ঞ্জন, মৌলাঁন! আজাদ, সুভাষচন্দ্র প্রভৃতি ধর! পড়েন। প্রায় তিন মাস হাঁজতবাসের পর দেশবন্ধু এবং সুভাঁষ ছয় মাস বিনাশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন। কারাগারে তিনি এবং দেশবন্ধু একই কামরায় থাকায় উভয়ের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্বন্ধ গড়ে ওঠে। ১৯২২ খুষ্টাবে জেল থেকে মুক্তি পেয়েই সুভাষচন্দ্র উত্তরবঙ্গ জলপ্লাবন সাহাঁধ্য-সমিতির সম্পাদক নিযুক্ত হন এবং বন্তাঁতদের কষ্ট নিবারণের জন্যে আপ্রাণ প্রয়াস পান। বন্তাত্রাণে তাঁর অপূর্ব কর্মশক্তির পরিচয় পেয়ে তৎকালীন বাংলার গভর্ণর লর্ড লিটনও তাঁকে অভিনন্দিত করেছিলেন। এর পরে ১৯২২ খৃষ্টাব্দের গয়া! কংগ্রেসে সুভাষচন্দ্র দেশবন্ধুর কাউন্সিলে প্রবেশ নীতি পরিপূর্ণ সমর্থন করেন এবং স্বরাঁজ্যদল গঠনে তাঁকে সাহাধ্য করেন।

1১২৩ রাষ্ট্রপতি সুভাষচন্্

গয়। থেকে ফিরে হ্থুভাষচন্দ্র “বাঙলার কথ” নামে একথানি বাংল! দৈনিক সংবাদপত্র প্রকাঁশ করেন। তখন দেশবন্ধু তার উপর স্বরাজ্য দলের মুখপত্র 'ফরৌয়ার্ড পরিচালনার পূর্ণ কতৃত্ব অর্পণ করেন। স্থভাষচন্দ্রের স্থযোগ্য পরিচালনায় “ফরোয়ার্ড অল্পদিনের মধ্যে নাম- করা পিক! ভয়ে দাড়ায়

১৯২৪ খুষ্টান্দে কলিকাতা কর্পোরেশনের নতুন নির্বাচনে দেশবন্ধ দাশের স্বরাঁজ্য দল করপোরেশনের কর্তৃত্ব পাঁন এবং দেশবন্ধু সর্বপ্রথম কংগ্রেসী মেয়র নির্বাচিত হন। সঙ্গে অঙ্গে সুভাষচন্দ্র কলিকাতা কর্পোরেশনের প্রধাঁন কর্ম-কত নিযুক্ত হন। তিনি যে কয়েক মাঁস এই কাজে নিযুক্ত থাকার সময় পেয়েছিলেন, তারই মধ্যে তিনি নিজের কর্মদক্ষতা শক্তির অপূর্ব পরিচয় দিতে পেরেছিলেন কিন্ত প্রধান কর্ণ- কত? নিযুক্ত হবার মাত্র ছয় মাস পরে তিনি ভারত শাসনের ৩নং বিধি অনুসারে বিনা বিচারে বন্দী হন। কিছুদিন বাংলার কারাগারে রার্ধীর পর তাঁকে সুদুর ব্রঙ্মদেশের মান্দালয় কারাগারে প্রেরণ করা হয়। বন্দী অবস্থাতেই তিনি ব্যবস্থাপক সভার সদন্য নির্বাচিত হন। তার কারামুক্তির জন্তে দেশব্যাপী আন্দোলন হয়-_কিন্ত কোন ফল হয় না মান্দালয়ে কারাবাঁসের সময় ১৯২৪ খুষ্টান্দে দেশবন্ধুর অকাল মুত্যুতে সুভাষচন্দ্র শোঁকাভিভূত হয়ে পড়েন। দেশবন্ধুর মৃত্যুর পর বলার শ্রেষ্ঠ উপস্ঠাসিক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় "মাসিক বন্থমতী'তে, স্থৃতিকথাঃ নামে একটি প্রবন্ধ লিখেছিলেন। সুদূর মান্দালয় জেলে প্রবন্ধটি পড়ে স্ুভীষচন্ত্র শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়কে যে চিঠি লিখেছিলেন, তাঁর মধ্যে দেশবন্ধুর প্রতি তার শ্রদ্ধা ভালবাসার চিত্র ফুটে উঠেছে চিঠিটার অংশ বিশেষ উধৃত করে দিলাম “আপনার সমস্ত লেখার মধ্যে এই কথাগুলি আমার ভাল লাগল, “একান্ত প্রিয়, একা স্ত আপনার :

ভারতের মুক্তিসাধক ১২৪

জনের জন্তে মানুষের বুকের মধ্যে যেমন জ্বালা করিতে থাকে-_ সেই আজ আমরা বাহার! তাঁর আশে পাশে ছিলাম, আমাদের ভয়'নক দুঃখ জাঁনাইবার ভাষাও নাই ) পরের কাছে জানাইতে ভালও লাগে ন1।, বাম্তবিক হৃদয়ের নিগুঢ় কথ! পরের কাঁছে কি সহজে বলা যায়? কিন্তু তারা যদি রসবোধ ন1 করতে পারে, তাঁভলে অসহা বোধ ভয়, মনে হয় “অরসিকেষু রস-নিবেদনং শিরসি মা লিখ, মা লিখ |, আমাদের অন্তরের কথা, অন্তরঙ্গ ভিন্ন আর কে বুঝতে পারে? আর একটি কথ! আপনি লিখেছেন_-যা আমার খুব ভ।ল লেগেছে ।..*- আমরা করিতাম /দশবন্ধুর কাজ ।” প্রকৃতপক্ষে আমি এমন অনেককে জানি যারা তার মতে বিশ্বাম করতেন না-কিন্ত বোৌধ হয় তার বিশাল হৃদয়ের মোহনীয় আকর্ষণে তার জন্য তীর কাজ না করেও পারতেন না। আর তিনিও মত-নিখিশেষে সকলকে ভালবাসতে পারতেন সমাজের প্রচলিত মাপকাঠি দিয়ে আমি তাকে মন্গষ্য চহিত্র বিচার করতে দেখিনি। মানুষের ভাল মন্দ স্বীকার করে দিয়েই যে '্বাকে ভালবাস! উচিত--এই কথায় তিনি বিশ্বাস করতেন এ৭ং এই বিশ্বাসের উপর তার জীবনের ভিস্তি |”

মান্দালয়ের কারাগারে স্ুভাষচন্দ্রের স্বাস্থ্য ভেঙে পড়ে তকে গভর্ণমেণ্ট সতাধীনে মুক্তি দিতে চান। কিন্তু তিনি দ্বণায় সে প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। অবশেষে ১৯২৭ খৃষ্টানদের ১০ই মে ভগ্রস্থান্থোর দরুণ তিনি বিন! সর্তে মুক্তি পান। তার মুক্তি-সংবাদে সমগ্র দেশ আনন্দ-চঞ্চল হয়ে ওঠে কিন্তু ভগ্ন স্বাস্থ্য নিয়েও তার রাজনৈতিক কাজের বিরাম থাকে না1। দেশবন্ধুর মৃত্যুর ফলে বাংলার রাজনীতি ক্ষেত্রে ছুটি দলের স্ষ্টি হয়েছিল- একটি যতীন্দ্রমোহন সেনগুপ্তের পন্থী_অপরটি স্ভাঁষ-পন্থী। বতীন্দ্রমোহনের মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত এই

1১২৫ রাষ্ট্রপতি সুভীষচন্তু

ছুই দলের মধ্যে প্রচুর প্রতিত্বন্দিতা এবং মত-বিরোধ ছিল। তাঁর মৃত্যুর পরে আবার দেশবন্ধুর মত সুভাঁষের নেতৃত্বে উভয় দল সম্মিলিত হয়েছিল। ১৯২৮ সালের ডিসেম্বর মাসে কলিকাতায় পণ্ডিত মতিলাল নেহেরুর সভাপতিত্বে কংগ্রেসের যে অধিবেশন হয়, তাতে সুভাষচন্ত্ গ্রেস স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর জেলারেল কম্যাণ্ডিং অফিসারের কাজ করেন। এই অধিবেশনে তিনি মহাত্মা গান্ধীর আপোধষমুলক গ্রত্তাবের তীব্র বিরোধিতা করে বলেন: “ম্বাধীনতা আমরা চাই--এ স্বাধীনতা আমাদের সুদূর ভবিষ্যতের আদর্শ নহে__স্বাধীনতা৷ বর্তমানেই আমাদের দাবী |” ১৯২৭ থেকে থেকে ১৭২৯ থুষ্টান্দের মধ্যে সুভাষচন্দ্র বঙ্গীয় প্রাদেশিক রাস্ীয় সমিতির সভাপতি নিখিল ভারত রাস্্ীয সমিতির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৯২৯ খুষ্টাবে তিনি নিখিল ভারত ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেস ব! শ্রমিক সম্মেপনের সভাপতি হন এবং ১৯৩১ পর্যন্ত টিনি এই পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। এই* সময় তার জীবন অত্যন্ত কর্মবহুল ছিল। ১৯৩০ খুষ্টান্বের ৩*শে জানুয়ারী সুভাষচন্দ্র পুনরায় রাজদ্রোহের অভিযোগে অভিযুক্ত হন এবং মাস সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন। এই সালেই কারাগারে থাকার সময় আগষ্ট মাসে তিনি কলিকাতাঁর মের নির্বাচিত হন এবং ২৩শে সেপ্টেম্বর তার কারামুক্তি হয়। ১৯৩১ খৃষ্টানদের জানুয়ারী রসে তিনি পুনরায় সরকারী আদেশ অমান্ত করে শোভাষাত্র! পরিচালনার অভিযোগে মাস সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডতত হন। কিন্ত দওকাল

উত্তীণ হবার আগেই মার্চ মাসে তার কারামুক্তি হয়। কিন্তু পুনরায় _ এক বৎসর যেতে না যেতে ১৯৩২ খুষ্টাব্ের ২র| জানুয়ারী বোস্থাইয়ে কংগ্রেস ওয়াকিং কমিটির বৈঠকে যোগদান করে ফেরার পথে তিনি ১৮১৮ খুষ্টাবন্বের আইনে ধর! পড়েন এবং মধ্য প্রদেশের সিউনী জেলে

ভারতের মুক্তিসাধক ১২৬

নীত হন। পরে তাঁকে সেখান থেকে জব্বলপুর সেপ্টাল জেল, ভাওয়ালী স্থাস্থ্যনিবাস এবং বলরামপুর (বুক্তপ্রদেশ ) হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয় এই সময়ে তার স্বাস্থ্য একেবারে ভেঙে পড়ে। গভর্ণমেণ্ট তখন বহু বিবেচনার পর তাঁকে চিকিৎসার জন্যে ইউরোপ যাবার সম্মতি দেন। স্বাস্থ্লাভের আশায় তিনি ১৯৩৩ খুষ্টান্ধের ২৩শে ফেব্রুয়ারী ইউরোপ যাত্রা করেন এবং ৮ই মার্চ ভিয়েনায় পৌছেন। ১৯৩৩ থেকে ১৯৩৬ পর্যস্ত প্রায় সম্পূর্ণ তিন বৎসর তিনি ইউরোপে ছিলেন। মাঝখানে একবার ১৯৩৪-এর ডিসেম্বর মাসে পিতার সাংঘাতিক অস্ত্রথ সংবাদ পেয়ে ভারতে এসেছিলেন কিন্ত পিতার সঙ্গে তার শেষ দেখা হয় নি-_তিনি ভারতে পৌছে তার মৃত্যু-সংবাদ পান। তিনি পিতার শ্রাদ্ধ উপলক্ষে মাস খানেক কলকাতায় ছিলেন--সে সময়ে তাকে পুলিশের কড়1 নজরে থাকতে হত। ১৯৩৫ এর ৮ই জানুয়ারী শ্রাদ্ধ কার্ধাদি শেষ করে তিনি পুনরায় ইউরোপে যাত্রা! করেন। ইউরোপে তার স্বাস্থ্যের অনেকটা উত্ততি হয়। ১৯৩৬ খৃষ্টাব্দে কংগ্রেস অধিবেশনের প্রাক্কালে তিনি ভারতে ফেরার অনুমতি চেয়েও পান না। তিনি জৌর করে ভারতে ফেরেন এবং ভারতের মাটিতে পদার্পণ করেই ১৮১৮ সালের তিন আইনে ধর! পড়েন। আবার কারাবাস এবং অন্তরীণ থাকার ফলে তার স্বাস্থ্য ভঙ্গ হয়। ১৯৩৭ থুষ্টাব্বের ১৮ই নভেম্বর তিনি পুনরায় স্থাস্থ্যলাস্েঙ্ব উদ্দেশ্তে বিমান যোগে তষ্রিয়া যান এবং ভাল ভাবে চিকিৎসা করান। ১৯৩৮ থুষ্টীন্বের ১৮ই জানুয়ারী সুভাষচন্দ্র ভারতীয় কংগ্রেসের হরিপুরা অধিবেশনে সভাপতি নির্বাচিত হন। ২৪শে জানুয়ারী তিনি ইউরোপ থেকে স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করেন। ১৯৩৮ এর ১৯ই, ফেব্রুয়ারী হরিপুরাঁয় জাতীয় মহাঁসভার ৫১তম অধিবেশন হয়। ভারতের

১২৭ বাষ্্ীপতি স্থৃভাষচন্্

তরুণতম নেতা সুভাষচন্ত্রকে মহাঁসমারোহে সুদীর্ঘ চার মাইলব্যাপী শোভাযাত্র! করে একান্নটি বলীবর্দবাহিত রথে করে কংগ্রেস নগরে নিয়ে যাওয়া হয়। দেশবন্ধু দাশের পরে বাংলাদেশ থেকে সুভাষই প্রথম কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচিত হন। রাষ্্রপতিরপে তিনি যে. অভিভাষণ দেন, সেটি নানাদিক থেকে উল্লেখযোগ্য অভিভাষণে তিনি বিশ্ব রাজনীতির গোড়ার কথা বিশ্লেষণ করে দেশবাসীদের ধ্রক্যবদ্ধ হয়ে স্বাধীনতা সংগ্রামে যোগ দেবার আহ্বান জানান। ভারতের বড়লাট লর্ড লিন্লিথগো। ভারতে যুক্তরাষ্ট্র প্রবর্তনের যে প্রয়াস পাচ্ছিলেন, কংগ্রেস সভাঁপতিরূপে স্থভাঁষ তার তীব্র বিরোধিত! করেন। কংগ্রেসের রাষ্পতিরূপে সুভাষচন্দ্র সমগ্র দেশের কাছে বিপুল সম্ধর্ধনা লাভ করেন। ৫কবিগুর রবীন্দ্রনাথ স্বয়ং তাকে শান্তিনিকেতনে সাদর অভ্যর্থনা জ্ঞাপন করেন।) এর পর ১৯৩৯ খষ্টাব্বের কংগ্রেসের 'সভাপতি নির্বাচন নিয়ে সকার সঙ্গে কংগ্রেস ওয়াকিং ক্গিটর জীদরেল সদস্যদের মতভেদ হয়। জীদরেল সদস্তর! এই বছরের জন্তে কংগ্রেসের অন্ঠতম প্রবীণ সদস্য ডাঃ পষ্টরভি সীতারামিয়াকে সভাপতি নির্বাচিত করতে চান। কিন্তু অনেক প্রদেশের প্রগতিশীল রাজনৈতিক দল পুনরায় সুভাঁষকেই রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করতে চায়। তাই মহাত্মা! গান্ধী থেকে সুরু করে অন্তান্ত দক্ষিণপন্থী সকল কংগ্রেস তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে তিনি ভাঃ প্টভির সঙ্গে নির্বাচন দ্বন্দে আবিষ্ূতি হন এবং ভোটে প্রতিদ্বন্্ীকে স্থস্পষ্টভাবে পরাজিত করেন। ওয়াকিং কমিটির অন্যান্য সদস্যরা! চটে গিয়ে পদত্যাগ করেন। কংগ্রেস কতৃপক্ষের বিরাগভাজন হয়ে সুভাষকে অস্তরবিধায় পড়তে হয়। এমনই অবস্থার মধ্যে ব্রিপুরী কংগ্রেসের অধিবেশন হয়। এর পরে কলিকাতায় নিখিল ভাঁরত রাষ্ট্রীয় সমিতির যে অধিবেশন হয়, তাঁতে কংগ্রেস-

তারতৈর মুজিসাধক ৯২৮

কর্তাদের চক্রান্তের ফলে ভিনি পদত্যাগ: করতে বাধ্য হ্ন।: ডাঃ রাজে রা তাক স্থলে সভাঁপতি নির্বাচিত, হন। *শ্রই যে কংগ্রেসেক. সঙ্গে সুভাষের বিরোধ সুরু হল__এ বিরোধ 'আর মেটে নি। কিন্তু "সুভাষ বসে থাকার লোক নন।, বাষ্ট পতির পদ তাশগ করার পর্ধেই,তিনি “ফরওয়ার্ড ব্লক' নামে নিজের একটি সর্বভারতীয় দল" গড়ে তুঁদলেন। . সঙ্গে * সঙ্গে “ফরওয়ার্ড ব্লক নামে একটি পত্রিকাও বের রুরলেন। , ভারতের কংগ্রেসের বিরুদ্ধে তিনি জোর প্রচার-কার্য চালাতে লাগলেন নিখিল ভারত কংগ্রেস কমিটির একটি প্রস্তাবের বিরুদ্ধে দেশব্যাপী: বিক্ষোভ ভ. পরিচালনার জন্টে স্থভাষকে তিন বৎসরের জন্তে কংগ্রেস থেকে বহিষ্কৃত করা হল। তার পরিচালিত বঙ্গীয় প্রাদোশক কংগ্রেস সমিতিকেও বাতিল করে দেয় হল। ফলে আরও বিশৃঙ্খলা সুরু হল। ১৯৪০-এ কংগ্রেসের রামগড়ে ঝাঁধিক অধিবেশনের সময় সুভাষ স্লামগড়ের, অদুরে একটা বিরাট আপোষ-বিরোধী সম্মেলন করলেন। এমনই করে তার সঙ্গে কংগ্রেসের বিরোধ বেড়ে চল্ল। ১৯৪১ খুষ্টাবের ২৬শে জানুয়ারা দেশবাসীরা হঠাৎ জানতে পারল যে স্থভাষ, শ্বগৃহ থেকে উধাও হয়েছেন। তিনি তখন শ্বগৃহে পুলিশের নজরবন্দী ছিলেন। নার! জনে নান! কথ। ব্লতে লাগল কেউ বলল তিনি হতাশ হয়ে আত্মহত্যা করেছেন--কেউ বলল তিনি আবার কৈশোরের. মত গুরুর সন্ধানে 'হিমালয়ে চলে গেছেন। সরকারী কতৃপক্ষ ব্ছদিন নীরব ছিলেন। পরে ত্বারা ঘোষণা করলেন: যে সুভাষচন্দ্র জার্মানী, জাপান প্রভৃতি কোন একটি উন্ষর্খক্তির দেশে আছেন। ইতিমধ্যে একবার খবর এল যে এক্বোপ্লেন দুর্ঘটনায় সভা বাবুর মৃত্যু হয়েছে। মহাত্সা গান্ধী "এবং কংগ্রেস প্রেসিডেন্ট মৌলানা আজাদ ন্ুুভাষের শোকগ্রন্তা বৃদ্ধ জন কাছে শোকজ্ঞাগক: তার পাঠালেন পরবে অবশ্য সংবাদটি মিথ) বলে প্রমাণিত হয়। তদবধি সভাষের আর কোন খোজ. খবর নেই। তার গা বিপ্রবা জীবন শেষ. পরযসত তাকে কোথায় টেনে নিয়ে গেছে.

রে কানে?